Skip to content

২৯শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ১৩ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একুশ আমার গর্ব, একুশ আমার অহংকার! 

সাল ১৯৫২। যখন পাকবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এক অলৌকিক  কারাগারে বন্দী আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষা।  ব্যাকুল কবির লেখনীতেও প্রকাশ পায় সে পরাধীনতা,  'ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায় / ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে। '

 

কিন্তু সে শিকল পরে অন্ধকার কুঠুরিতে বন্দী থাকতে একদমই রাজি ছিলেন না বাঙলার দামাল ছেলেরা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল বাঙালী। তারই ধারাবাহিকতায়  ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল  রাজপথ। বাঙালির সেই আত্মত্যাগের মাধ্যমেই রক্ষা হয়েছিল আমাদের  মাতৃভাষা।

 

মায়ের ভাষাকে ছিনিয়ে আনার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দিয়েছে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। ৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির এ দিনে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার প্রমুখ আত্মবলিদান করেছিলেন মাতৃভাষা রক্ষার্থে।

 

মাতৃভাষা রক্ষার্থে যাদের এই আত্মবলিদান তাদের  ভুলে যায়নি কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি। আর তার প্রমাণ মেলে প্রতিবছর খালি পায়ে বুকে কালো ব্যাচ ধারণ করে যখন সমস্বরে বাঙালি উচ্চারণ করে,' আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি / আমি কি ভুলিতে পারি'!  শুধু তাই নয় সাথে আরো নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয় ২১ শে ফেব্রুয়ারি।

 

তবে এবারের প্রেক্ষাপট একটু ভিন্ন।  এবার একুশে ফেব্রুয়ারি যখন এসেছে তখন দেশে আরেক ক্ষুদ্র শত্রুর আনাগোনা।  তার দাপট বিশ্বজুড়ে। তাই ভাষা শহীদদের স্মরণে হচ্ছে না বেশিরভাগ কর্মসূচী, কিছু কিছু হচ্ছে সীমিত পরিসরে।

 

যেমন, প্রতি বছর একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের তরফ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাঙালির শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব। মহামারীর মধ্যে এ বছর তাদের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তাদের সামরিক সচিবরা।

 

রাষ্ট্রপতির পক্ষে ফুল দেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম। আর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সীমিত পরিসরে পালিত  হলেও মানুষের অন্তরে ঠিকই বিরাজ করছে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা।

 

ভাষা শহীদদের এই আত্মবলিদান শুধু দেশে নয়, দেশের গন্ডী পেরিয়ে স্বীকৃতি পায় পুরো বিশ্বজুড়ে। দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় জাতিসংঘ ।  আর বিশ্বজুড়ে এ সম্মাননা অবশ্যই প্রাপ্য বাঙালি জাতির।  কারন পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোনো দেশ ভাষার জন্য এভাবে আত্মত্যাগ করেনি।

 

ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে যেমন অক্ষুণ্ণ রয়েছিলো মাতৃভাষার মর্যাদা তেমনি প্রশস্ত হয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের পথ। সেই রক্তাক্ত স্মৃতিবিজরিত দিন আজ। দিনটি যেমনি শোকের আবার গর্বেরও বটে। ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারির সেই আত্মত্যাগের কারণেই আজ আমরা গর্ব করে গলায় সুর তুলে বলতে পারি,  ' আমি বাংলায় গান গাই / আমি বাংলার গান পাই'। তাই নির্দ্বিধায় বলতে পারি,  একুশ আমার গর্ব, একুশ আমার অহংকার।

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ