Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনাকালে চুলের যত্ন

মানব সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ চুল। আপনার নিজের সৌন্দর্য বাড়াতে হোক অথবা কারো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে প্রথম দর্শনেই যে জিনিসটি আমাদের অভিভূত করে তা নিঃসন্দেহে ঝলমলে সুন্দর কালো চুল। যুগ যুগ ধরে সিনেমার পর্দায় অথবা কবি সাহিত্যে, চুল নিয়ে রয়েছে নানা নজির। তবে বাংলার সাহিত্যে কাব্যে সেই প্রাচীনকাল থেকেই নারীর সৌন্দর্যের সাথে তার চুলের বর্ণনা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে আছে। বলা যায় নারীদের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ হচ্ছে তার ঝলমলে দীঘল কালো চুল।  

 

একে তো দিনের প্রখর তাপ তার উপরে করোনার প্রকোপ। বর্তমান এই পরিস্থিতিতে পার্লারে গিয়েও হেয়ার ট্রিটমেন্ট করা যেহেতু সম্ভব নয় সেহেতু ঘরে বসেই নিতে হবে চুলের যত্ন। স্বাস্থ্যজ্জল মজবুত চুল আমাদের কম বেশী সবারই পছন্দ। কিন্তু এই চুলের সঠিক যত্ন আর পরিচর্যা না করলে তা হয়ে পড়ে রুক্ষ ভক্সগুর এবং দুর্বল। যা আপনার পারফেক্ট লুককে করে দিতে পারে একদমই ম্লান। তাই কিভাবে ঘরে বসেই চুলের যত্ন নেবেন তা নিয়ে জানালেন রূপ-বিশেষজ্ঞ শোভন সাহা।  

 

অয়েল ম্যাসাজ

 

করোনা কারণে আপনি বাসায় থাকলেও যেহেতু গ্রীষ্মের সময়, বাহিরের প্রচণ্ড গরম আপনার চুলকে করতে পারে ভিতর থেকে ড্যামেজ সাথে ঘামের কারণে খুশকি সমস্যা তো থাকছেই। তাই সপ্তাহে দুই/তিন দিন চুলে তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন। এক্ষেত্রে হট ওয়েল ম্যাসাজ বেশ উপকারী।

 

নারিকেল তেলের সাথে মেথি এবং পেয়াজের রস মিশিয়ে চুলের গোঁড়ায় ৫ মিনিট ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। তারপর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেয়াজ চুলে কোষ গঠনে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।  অপরদিকে মেথি চুলকে করে স্বাস্থ্যজ্জল এবং ঝলমলে।

 

এছাড়া নারিকেল তেল, ক্যাস্টর অয়েল এবং আলমন্ড অয়েল একসাথে গরম করে ২টি ভিটামিন-ই ক্যাপসুল মিশিয়ে মাথার তালুতে ভালোভাবে মালিশ করে ২৫মিনিট রেখে ভালোভাবে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ক্যাস্টর অয়েল এবং আলমন্ড অয়েল চুলের ফাটা দূর করে চুলকে করে শক্ত ও মজবুত আর ভিটামিন ই চুলের রুক্ষতা দূর করে।

 

যেহেতু করোনার কারণে পার্লারে যেতে পারছেন না সেক্ষেত্রে চাইলে ঘরেই চুলের ফাটা অংশ ছেঁটে নিতে পারেন। এর সহজ নিয়ম হলো ভেজা চুলের মাঝ-বরাবর সিঁথি করে দুই পাশে সমান করে নিচ থেকে কেটে ফেলা। এ ছাড়া মাথা নিচু করে ভেজা চুল পেছন থেকে সামনে এনে সমান করে আঁচড়ে নিয়ে কেটে নিতে পারেন। এতে চুলে ভলিউম লেয়ার আসবে।

 

হেয়ার স্টিম অ্যান্ড কন্ডিশন

 

প্রথমে বালতিতে গরম পানি নিয়ে তাতে টাওয়েল ভিজিয়ে নিংড়ে নিন। এবার টাওয়ালটি পুরো মাথায় ভালোভাবে সব চুল পেঁচিয়ে পাঁচ দশ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর টাওয়ালটি খুলে ভালোভাবে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে শ্যাম্পু করে নিন। হেয়ার স্টিম চুলের ভিতরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এসময় শ্যাম্পু ব্যবহারের ক্ষেত্রেও চুলের ধরণ অনুসারে বেছে নিয়ে মাইন্ড শ্যাম্পু।  

 

ঝলমলে সিল্কি চুলের জন্য সঠিকভাবে হেয়ার কন্ডিশনিং প্রয়োজন। অনেকেই কন্ডিশনার ব্যবহার করার ক্ষেত্রে যে ভুলটা সচরাচর করে থাকে তা হলো চুলের গোড়াতে এর ব্যবহার। চুলের গোঁড়া বাদে পুরো চুলে আলতো করে কন্ডিশনার লাগিয়ে ৩ মিনিট রেখে পানি দিয়ে ভালো করে মাথা ধুয়ে ফেলুন। তার টাওয়াল দিয়ে চেপে চেপে পানি ঝরিয়ে নিন।

 

হেয়ার মাস্ক

 

করোনার এই সময়টিতে যেহেতু বাসায় কাটছে সময় তাই চুলের যতেœ সপ্তাহে দুইদিন ব্যবহার করতে পারেন  ঘরে থাকা উপকরণ দিয়ে হেয়ার মাস্ক। হেয়ার মাস্ক চুলকে ভিতর এবং বাহির থেকে পুষ্টিকর করে তোলে।

 

প্রথমে একটি পেঁয়াজের রসের সঙ্গে অর্ধেক পাকা কলা ও এক টেবিল চামচ মধু ভালোমতো ব্লেন্ড করে নিন। এরপর প্যাকটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। পরে শ্যাম্পু করে ফেলুন। শুষ্ক চুলে মসৃণতা আনে এই প্যাকটি।

 

এছাড়া এক কাপ অ্যালোভেরা জেল বের করে নিয়ে গরম পানিতে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। এরপর এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল,তিনটা ভিটামিন ‘ই’ ক্যাপসুল ও দুই চা চামচ গ্লিসারিন ভালো করে ব্লেন্ড করে নিয়ে মাথার স্ক্যাল্প থেকে শুরু করে পুরো চুলে এক ঘণ্টা রেখে ধুয়ে নিতে হবে। এ প্যাকটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে হেয়ার কালার ও রিবন্ডিং হেয়ার যাদের তাদের চুল নরম ও মোলায়েম হবে।

 

দুই টেবিল চামচ আলমন্ড অয়েল নিয়ে এর সঙ্গে দুই টেবিল চামচ মেথি পেস্ট,একটা পেঁয়াজের পেস্ট ও দুই টেবিল চামচ শিকাকাই পেস্ট নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে চুলে লাগাতে হবে। এটি ব্যবহারের ফলে চুলের শুষ্কতা ও নিস্তেজ ভাব কমে আসবে।

 

বাসায় বসে একটুখানি চুলের যত্ন আপনার চুলকে যেমন করে তুলবে স্বাস্থজ্জল ও মজবুত, তেমনি আপনার মনকেও করবে সতেজ ও প্রাণবন্ত যা করোনার এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি। তাই নিজেকে সুস্থ রাখতে যত্ন নিতে হবে এখন থেকেই।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ