Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘করোনা’ কি প্রকৃতির প্রতিশোধ?

২০১৯ এর ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে প্রাদুর্ভাব ঘটে করোনা ভাইরাসের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে পরে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কোভিড-১৯ নামকরণ করে। ধারণা করা হয়, উহানের সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের উৎপত্তি। এখন পর্যন্ত ২১২টি দেশের প্রায় ৩৯ লাখ মানুষ করোনা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়েছে । এই ভাইরাসে ২ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন। করোনায় একদিকে যেমন লকডাউনে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ ঠিক তেমনি এর প্রভাবে পড়েছে পরিবেশের ওপরেও। করোনা ভাইরাসের কারণে অধিকাংশ দেশ যখন লকডাউন ঠিক তখন প্রকৃতি তার নিজের যে পরিবর্তন এনেছে তার ধারাবাহিক চার পর্বের শেষ পর্ব আজ।

 

কিছুদিন আগেও উন্মাদের মতো ছুটে চলছিল মানুষের কর্মযজ্ঞ আর জীবন। নিজেদের প্রয়োজনে আমরা ভুলেই গেছি, প্রকৃতি কিংবা পরিবেশের চাহিদা।আমরা ভুলে গেছি প্রকৃতির নিরবতার কথা। যে প্রকৃতি আমাদের উজার করে দিয়ে জীবন বাঁচাতে সাহয্য করে তাকে অন্তত একটু স্বস্তি দেয়া দরকার। তবে কি কারণ এটাই! বিশ্ববাসীকে করোনাই শিক্ষা দিচ্ছে? যুদ্ধ-বিগ্রহের পাশাপাশি নানা সামাজিক মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনে মানব জাতি। উন্নতি, অগ্রগতি আর নিজেদের হিসেবে যা ভালো, তাই করে। সাম্রাজ্যবাদ আর পুঁজিবাদের কারণে সঠিক বেঠিক ভুলে আধিপত্য বিস্তার করতে গিয়ে প্রকৃতির উপর করা অত্যাচারের এমনতর প্রতিশোধ।

 

বছরের শুরুতে চীনের উহান থেকে যাত্রা শুরু করে সাড়ে চার মাসেই বিশ্বের প্রায় সব দেশে পৌঁছে গেছে নভেল করোনাভাইরাস বা কোভিড–১৯। মৃতের সংখ্যায় চীন ছিল শীর্ষে, তবে অনেক কম লোকসংখ্যা নিয়ে চীনকে ছাড়িয়ে গেছে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র । আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হারও যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি।

 

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির আগ পর্যন্ত মানুষ ভুলতেই বসেছিল যে, নিজেও সে প্রকৃতিরই অংশ। মানবজাতি তাই প্রতিনিয়তই প্রকৃতিকে ধ্বংস করার বিভিন্নরকম কলা কৌশলে ব্যস্ত রেখেছে নিজেদের। পৃথিবী হারিয়েছে তার স্বভাবসুলভ আচরণ। প্রাণীকুলের মধ্যে নিজেদের সবচেয়ে বিচক্ষণ ও পণ্ডিত দাবি করা মানুষই খলনায়কের ভূমিকায় পৃথিবীতে নিজেকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করেছে।

 

কোথায় থামবে কেউ জানে না। সবচেয়ে ভয়ংকর এই ভাইরাসের আক্রমণ যতো দ্রুত বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভাইরাসটির বৈশিষ্ট। এত দ্রুত বৈশিষ্ট পরিবর্তনের কারণে বিজ্ঞানীরা আজ পর্যন্ত তার সম্পর্কে সঠিক তথ্যটাই নির্ধারণ করতে পারছেনা। পারছেনা কোন ঔষধ বা প্রতিরোধ করার মতো কোন টিকা আবিষ্কার করতে। সবচেয়ে ভয়ংকর কথা বলছে বিশেজ্ঞরা, তাদের ধারণা দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলির অবস্থা আরো ভয়াবহ আকার ধারন করবেকরোনার আক্রমণে।

 

লক্ষ কোটি প্রাণীর বসবাস এই পৃথিবীতে। আর তাদের শাসক হয়ে বসেছে মানুষ। মানুষের ভাবনা, চিন্তা, নিত্য নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার, যন্ত্রকৌশল, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র সবকিছু নিয়ে মানুষ এই পৃথিবীকে শাসন করতে মাঠে নেমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৮০০ সালে গোটা পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা ছিল এক বিলিয়ন। ১৯৬০ সালে সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ বিলিয়ন। বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭ বিলিয়নেরও বেশি। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯ থেকে ১০ বিলিয়নে।

 

নিউইয়র্কে বছর দুয়েক আগে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিনে তাপমাত্রা ছিল ২২ ডিগ্রি সেলিসিয়াস। ভাবুন, যে সময়ে এই শহরে বরফ পড়ার কথা, বদলে গ্রীষ্মের গরমে শহরটি হাঁপাচ্ছিল! এ বছরও ছিল একই দশা। নিউইয়র্কের সেই কনকনে শীত আর নেই বললেই চলে। গোটা পৃথিবীর জলবায়ুবিদরা এই নিয়ে নানা ভাবনায় নিজেদের চুল ছিঁড়লেও তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই ক্ষমতা পৃথিবীর আঁকড়ে ধরা মানুষের।

 

আমরা বিশ্বাস করি, প্রকৃতি প্রতিশোধ নিতে নয় বরং প্রতিরক্ষাকরতেই হয়তো আমাদের বৃহত্তর ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে ক্ষুদ্রতর ক্ষতি করে শিক্ষা দিয়ে দিলো। প্রকৃতিকে রক্ষা করলে রক্ষাপাবে মানুষ।প্রকৃতি ধ্বংস করলে বিভিন্ন ভাবে মানুষ করোনার মতো লক্ষ কোটি জীবাণু দ্বারা বিপর্যস্ত হবে। হয়ত বা ধ্বংস হয়ে জেতে পারে মানবজাতি মানবজাতি।

 

মানবজাতির ইতিহাস এবং অভিযোজন প্রক্রিয়ার দিকে খেয়াল করলে দেখা যায় বিভিন্ন সময়ে এমন নতুন নতুন রোগ বা দুর্যোগের মুখোমুখি হয়ে বিশ্বের জাতি ও দেশগুলো তাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করেছে। করোনা থেকেও বিভিন্ন জাতি ও দেশ নানামুখী বিচার বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা নেবে। আমাদেরও এসব নিয়ে ভাবতে হবে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর বুকে আমার অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে হলে। ভাবনার পরিধি হোক উন্মুক্ত আকাশের মতো।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ