Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবসে নারী শিক্ষার্থীদের ভাবনা

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’

নজরুলের কবিতাটির মধ্য দিয়ে সমাজে নারী ও পুরুষ যে সমান মর্যাদার সেই বিষয়টি ফুটে উঠেছে। একটি সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ নারী ও পুরুষ। সমাজে তাদের স্থান একই হলেও শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্থ হতে হয় নারীদেরই। এই সমাজে আজও যৌন-নিপীড়নের শিকার হন নারীরা।

যৌন-নিপীড়ন থেকে নারীদের রক্ষা করতে ও সমাজে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে ১৩ জুন ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দিবসটি ২০১০ সাল থেকে জাতীয়ভাবে পালিত হয়ে আসছে।

সবচেয়ে বেশি ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয় নারীদের। কখনো মানুষের সচেতনতার অভাবে তো কখনো পরিবারের সচেতনতার অভাবে নারীদের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। রাস্তাঘাটে ইভটিজিং বেশি হয়। কিন্তু এর বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্মস্থল প্রতিটি জায়গায় নারীকে ইভটিজিং-এর শিকার হতে হয়। এই ইভটিজিং কিভাবে প্রতিরোধ সম্ভব তা নিয়ে নারী শিক্ষার্থীরা নিজের অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

তাদের অভিমতগুলো নিচে তুলে ধরা হলো

আজমেরী আক্তার
শিক্ষার্থী,
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।
বর্তমান সমাজে নারীকে উত্ত্যক্ত করা অর্থাৎ ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়ে গিয়েছে। ইভটিজাররা দিন দিন আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, তাদের অশালীন মন্তব্য, বিকৃত নামে ডাকা, উপহাস-তুচ্ছ করা, অশালীন অঙ্গভঙ্গি করা‌। বর্তমানে ফেসবুকের মাধ্যমেও নারীরা প্রতিনিয়ত অসম্মানের শিকার হচ্ছে। এর কারণে মেয়েরা আত্মহননের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে। যা থেকে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই বিশৃঙ্খলা নিরাময়ের জন্য নারী-পুরুষ উভয়ের সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে। নারীর অধিকার আদায়ে হতে হবে সচেতন। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা জরুরি। ছোটকাল থেকে যেভাবে আমাদের পরিবার থেকে শিক্ষা দেওয়া হয় বড়দের সম্মান করতে হবে, ঠিক তেমনি পরিবার থেকেই শিক্ষা দিতে হবে নারীকে প্রাপ্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা করতে হবে।

মোহিনী আক্তার আশা
শিক্ষার্থী,
নার্সিং ইন্সটিটিউট, কুষ্টিয়া।
বাংলাদেশের তরুণীরা অধিকাংশ সময়েই ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে। এই ইভটিজিংয়ের শিকার হওয়ায় প্রায়শই মেয়েরা অবসাদে ভুগছে। বাংলাদেশের তরুণীদের বেশির ভাগ আত্মহননের কারণ খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, তারা কোনো না কোনোভাবে ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে। আজকাল প্রকৃতির মুক্ত বাতাসে আমরা তরুণীরা অনায়াসে চলতে পারি না, যদিও আমরা বলি ছেলে-মেয়ে সবাই সমান। রাস্তাঘাটে চলতে গেলে কম বয়সী ছেলে থেকে বয়স্ক সবাই আমাদের হাত দিয়ে না পারলেও চোখ দিয়ে, মুখের কথা দিয়ে ধর্ষণ করে যায় প্রতিনিয়ত। আসলে আমরা তরুণীরা আমাদের স্বাধীন দেশেও এখনো স্বাধীনভাবে চলতে পারি না। যদিও স্বাধীনতা এসেছিল আমাদের বাংলা ভাষা আর মা বোনদের সম্মান রক্ষা করার জন্যই। বাংলা ভাষা আমাদের হলেও বাংলার ছেলেদের কাছে আমরা কখনোই সম্মান পেলাম না। তাদের কাছে নারীরা মা-বোন না হয়ে ভোগের বস্তু হয়ে গেছে। এই ইভটিজিং রোধের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষাও প্রয়োজন। আমরা তরুণীরা চাই বাংলার মুক্ত বাতাসে স্বাধীনভাবে চলতে।

সাদিয়া নিশাত লুবনা
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

২০২২ সালে এসেও আমাদের সমাজ ইভিটিজিংয়ের মতো ব্যাধি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পাবলিক প্লেসে কিশোরী থেকে শুরু করে বয়স্ক নারীরা ইভিটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এই ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ের দ্বারাই মেয়েরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন আইন থাকলেও যথাযথভাবে সেগুলোর প্রয়োগ না হওয়ায় ও দৃষ্টান্তমুলক সাজা না হওয়ায় এখনো নারীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরায় সংকোচ বোধ করে। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর হওয়া, আইনের যথাযথ প্রয়োগের পাশাপাশি বিভিন্ন জনসচেতনতা মূলক উদ্যোগ গ্রহণ করায় সমাজকে আরও আগ্রহী হতে হবে।

সুমনা আক্তার
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

নারী-পুরুষ দুজনেই সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমাদের সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্থ হচ্ছে। যৌন-নিপীড়ন বা ইভটিজিংয়ের মতো ভয়াবহ ব্যাধি থেকে নারীসমাজকে রক্ষা করতে বাংলাদেশ সরকার ১৩ জুনকে ইভটিজিং প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ইভটিজিং প্রতিরোধে নারী-পুরুষ উভয়কেই সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে। নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য পালন করতে শেখাতে হবে। পাশাপাশি নারীদের উত্ত্যক্ত না করার আহ্বান করতে হবে। নারীর প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে। অতপর সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নারী উত্ত্যক্তকরণ বা ইভটিজিং প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সাজিদা তাসনিয়া নিতি
শিক্ষার্থী, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

ইভটিজিং দিবস আমার কাছে শুধু একটা সচেতনতা বাড়ানোর উপায় হতে পারে। যা ছেলে-মেয়ে সবাইকে সচেতন করবে, কিন্তু মূল সচেতনতাটা আসা উচিত পরিবার থেকে। একটা ছেলেকে ছোট থেকে যদি নিষেধ করা যেতো যে মেয়েদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা যাবে না, তাহলে তারা এসব কাজে জড়াবে না। তাই আমার মতে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করাই ইভটিজিং প্রতিরোধ করতে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

মেহেরা রহমান সিমরান
শিক্ষার্থী, ফিল্ম এন্ড মিডিয়া ডিপার্টমেন্ট
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ

আমাদের প্রতিনিয়ত বাসে, ট্রেনে, রাস্তায় ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়। ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হলে আমরা সহজেই চলাচল করতে পারতাম। কোনো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নেই বলেই নারীদের এখন ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ