পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী!
'ডাইনোসর যেখানে বিলুপ্তির খাতায়
টার্ডিগ্রেড এখনো আছে নানা প্রতিকূলতায়'
চোখ বন্ধ করে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণীটির কথা ভাবুন। এখন কল্পনা করে দেখুন সেই প্রাণীটি চরম প্রতিকূল পরিবেশে পড়লে কি করতে পারে? উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আপনি যদি ভেবে থাকেন ভাল্লুকের কথা, তবে ইচ্ছে করলে তাঁকে কল্পনা করতে পারেন মাউন্ট এভারেস্ট এর চূড়ায় যাকে হামলা করছে এক পাল গরিলা! সে কিন্তু হেরে যাবে।
তবে আপনার ধারণাটি ভুল। ভালুক বা গরিলা কিন্তু সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণী নয়, বা পরিবেশটিও সবচেয়ে প্রতিকূল পরিবেশ নয়। আপনি কি জানতে চান সবচেয়ে কষ্টসহিষ্ণু,নাছোড়বান্দা সেই প্রাণীটি আদতে কি?
পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রাণীটির নাম টার্ডিগ্রেড। একে ‘ওয়াটার বেয়র’ নামেও ডাকা হয়। এটি শৈবাল শুষে খেতে পছন্দ করে। এধরনের প্রাণীকে বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন ‘এক্সট্রেমোফাইল’।
যার সারমর্ম হচ্ছে তারা যে পরিবেশে বাস করে তার ব্যাপারে তারা কোন গ্রাহ্য করেনা। এর পেছনে রহস্য হচ্ছে যখন পরিবেশ প্রবল প্রতিকূল রূপ ধারণ করে তখন তারা যে কাজটা করে তা হলো তারা কিছুকালের জন্য মরে যায়!
শুনতে আশ্চর্যজনক হলেও তা সত্যি। অবশ্য পরিবেশ অনুকূলে আসলে এরা আবার পুনর্জীবিত হয়। এটাই টার্ডিগ্রেডের সবচেয়ে অদ্ভুত একটা বিষয়। এদের কাজ হচ্ছে কোন কারন ছাড়াই শৈবালের মধ্যে হেলে-দুলে চলা আর পানি শুষে নেয়া।
অথচ সুপ্ত অবস্থায় এরা পরম শূন্য তাপমাত্রাও সহ্য করতে পারে, একই সাথে টিকে থাকতে পারে ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত তাপমাত্রার বৃদ্ধিতেও। বেঁচে থাকতে পারে এমন তেজস্ক্রিয়তা যার এক হাজার ভাগের এক ভাগই একটি হাতিকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। সয়ে থাকতে পারে পৃথিবীর সমুদ্রের গভীরতম অঞ্চল থেকেও ছয় গুন বেশী পানির চাপ। এই প্রচণ্ড সহনশীলতার কারনেই এদেরকে গবেষণার জন্য পাঠানো হয় মহাকাশে, মহাশূন্য থেকে প্রতিকূল পরিবেশ আর কি হতে পারে!
২০০৭ সালে নাসা একপাল টার্ডিগ্রেড মহাকাশযানে পুরে মহাশূন্যে পাঠিয়ে দেয়। এরপর এদের কে ছেড়ে দেয়া হয় মহাকাশযানের বাইরে যেখানে এদেরকে মহাশূন্যে রাখা হয় একটানা দশদিন যেখানে তারা সংস্পর্শে আসে অস্বাভাবিক তীব্র মহাজাগতিক অতিবেগুনী রশ্মির।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল যখন তাদেরকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হয় তারা পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে, এমনকি তাঁদের একাংশ ডিম পেড়ে নতুন টার্ডিগ্রেড এরও জন্ম দেয়। বাচ্চাগুলোও ছিল পুরোপুরি স্বাভাবিক।
এভাবে প্রতিনিয়তই মহাকাশ বিজ্ঞানীরা টার্ডিগ্রেড মহাকাশে পাঠিয়ে এদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে যান। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন এই প্রাণীটিকে বার বার মহাশূন্যের চরম বৈরী পরিবেশে পাঠান হচ্ছে।
এর একটি কারন হচ্ছে তারা বৈজ্ঞানিকভাবে বের করতে চান যে কিভাবে এই প্রাণীটি এইরকম ভয়ানক পরিবেশে গুলোতেও টিকে থাকতে পারে।
দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে তারা একটি থিওরি প্রমাণের চেষ্টা চালাচ্ছেন যাকে বলা হয় ‘প্যান্সপারমিয়া হাইপোথেসিস’।
চিন্তা করুন একটি উল্কা এসে পৃথিবীতে পতিত হয় যার ফলে পৃথিবীর কিছু অংশ টুকরো হয়ে মহাকাশে ছড়িয়ে গেলো যেখানে এই টার্ডিগ্রেডরা রয়েছে এবং তারা সফল ভাবে টিকে থেকে অনন্ত কাল ছুটে চলেছে। হয়তো একদিন কোন একটি গ্রহ তে অনুকূল পরিবেশ পেলো। সেখানে বংশ বিস্তার শুরু করলো!
এখনো এলিয়েন এর খোঁজ মেলেনি।তবে অদূর ভবিষ্যতে আশা করা যায় ভিনগ্রহ-বাসীদের খোঁজ মিলবে। তবে পরবর্তীতে ভিনগ্রহ-বাসী হিসাবে অন্য কোন গ্রহে টার্ডিগ্রেড পাওয়া গেলে মন্দ হবে নাহ বটে।