প্রকৃতিবান্ধব উপায়ে ভারতে মধু সংগ্রহ
ভারতের দক্ষিণে এক উপজাতি প্রকৃতির ক্ষতি না করে জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করে বিক্রি এবং রপ্তানি করছে৷ কিন্তু মৌমাছির বিনাশের কারণে তাদের জীবিকার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে৷
খাঁটি মধু, যা এখনো প্রক্রিয়াজাত করা হয়নি৷ ভারতের কোডাইকানাল নামের পাহাড়ি গ্রামে সেগুলি মোড়কে ভরা হয়৷ এই সোনালি তরল পদার্থ নারীদের কর্মসংস্থানে সাহায্য করছে৷ সেইসঙ্গে সমাজের প্রান্তিক আদিবাসী গোষ্ঠীগুলিকে আয়ের পথ দেখছে৷ ‘হুপু অন এ হিল’ সংগঠনের ম্যানেজার শোভনা বলেন, ‘‘গত চার থেকে পাঁচ বছরে প্রায় দশ জন নারী এখানে কাজ করছেন৷ ২০১৬ সালে আমাদের ইউনিট চালু হয়েছিল৷ আমাদের প্রতিষ্ঠাতা নিশিতা ও প্রিয়া সেটা শুরু করেছিলো৷ তারা একটি প্রকল্পের জন্য জঙ্গলে গিয়ে আদিবাসীদের সঙ্গে দেখা করেছিল৷ তারা দেখলো, আদিবাসীদের কাছে অনেক মধু থাকা সত্ত্বেও তারা সেগুলি বিক্রি করতে পারছে না৷ তখন তারা সেই মধু কিনে বিক্রির কথা ভাবলো৷”
মারিয়াপ্পন তামিলনাড়ুর শোলা জঙ্গলে পালিয়ান উপজাতির মধু সংগ্রহকারীদের মধ্যে একজন৷ কয়েকশো বছর ধরে তারা এই কাজ করে আসছে৷ তিনি জানালেন, ‘‘আমরা প্রতিটি মৌচাক থেকে এক বালতি করে মধু সংগ্রহ করি৷ কখনো আমরা বছরে দুই টনেরও বেশি মধু পাই৷ আমরা গাছে ওঠার দড়ি ব্যবহার করে মধু সংগ্রহ করি এবং দুপুর বারোটা বা একটার মধ্যে বাসায় ফিরি৷ দিনের আলোয় মধু সংগ্রহ করলে মৌমাছি বেশি হুল ফোটায়৷ সেগুলি আমাদের সারা শরীরে হুল ফোটায়৷ কিন্তু আমরা কাজ বন্ধ করি না৷”
পালিয়ানরা প্রাচীন এক কৌশল প্রয়োগ করে মৌমাছির হুল ফোটানো প্রতিরোধ করে৷ মারিয়াপ্পন বলেন, ‘‘আমরা ধোঁয়া দিয়ে মৌচাক থেকে মৌমাছিদের তাড়িয়ে দেই৷ কিন্তু তাদের যেন অনিষ্ট না হয়, সে দিকে লক্ষ্য রাখি৷ আগুন ডানা পুড়িয়ে দেয়৷ তাই আমরা এই সব পাতার গোছা করে ধোঁয়া দিয়ে শুধু তাদের তাড়িয়ে দেই৷”
প্রকৃতি বাঁচিয়ে মধু সংগ্রহ
ধোঁয়া মৌমাছিগুলিকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে৷ তখন তারা শান্ত হয়ে যায়৷ শুধু আত্মরক্ষার তাগিদে মানুষের শরীরে হুল ফোটায়৷ মৌমাছি কেন ধোঁয়ার কারণে এমন প্রতিক্রিয়া দেখায়, সে বিষয়ে গবেষকদের এখনো স্পষ্ট ধারণা নেই৷ কিন্তু কয়েকজনের মতে, চারিপাশে ধোঁয়া থাকলে মৌমাছি ততটা সজাগ থাকে না৷ ফলে মধু সংগ্রহের কাজ সহজ হয়৷
গ্রামে নারীরা মধু কিনে মোড়কবন্দি করেন৷ মোম থেকে খাদ্যের পচনযোগ্য মোড়ক তৈরি হয়৷ ছবি আঁকার মোম রংও তৈরি করা হয়৷ শোভনা বলেন, ‘‘বিওয়্যাক্স মোড়ক প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে দেখা হয় বলে আমরা বিভিন্ন দেশে সেগুলি রপ্তানি করি৷”
কিন্তু বিশ্বের অনেক প্রান্তের মতো তামিলনাড়ু রাজ্যের মধুভিত্তিক অর্থনীতিও হুমকির মুখে পড়েছে৷ মারিয়াপ্পন বলেন, ‘‘মৌমাছি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে৷ শাকসবজি চাষের সময় প্রচুর কীটনাশক ব্যবহারের কারণে যে সব মৌমাছি এখানে এসে ফুল থেকে নেকটার সংগ্রহ করে, মৌচাকে ফেরার সময় সেগুলি মরে যাচ্ছে৷”
পরাগায়নকারী হিসেবে মৌমাছির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কারো অজানা না হলেও গোটা বিশ্বে মৌমাছির সংখ্যা কমে চলেছে৷ মূলত কীটনাশক ও বাসস্থান হারানোর কারণেই এমনটা ঘটছে৷ শুধু ইউরোপেই সেই সংখ্যা ৩০ শতাংশ কমে গেছে৷
মারিয়াপ্পান বলেন, তিনি মৌমাছি শাবক থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন এবং মৌমাছির কলোনির খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কিছু মধু রেখে যান৷ আপাতত তিনি নিজে ও নারীদের সমবায় এখনো কিছু মুনাফার মুখ দেখছে৷ কোঅপারেটিভ আরও সম্প্রসারণেরও পরিকল্পনা করছে৷ অবশ্যই প্রকৃতির কথা ভেবেই সেই কাজ হচ্ছে৷
অনন্যা/এআই