Skip to content

২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলাস্কা: মধ্যবয়সীদের মন ভালো করার দেশ

মধ্যবয়স জীবনের এমন এক পর্ব যখন কিছুটা বেহিসেবী হওয়াই যায়। এই সময়েই ভ্রমণের তাড়া অনেককেই চাঙা করে তোলে। তবে সব জায়গায় কি আর যাওয়া চলে? আজকাল তো অধিকাংশ স্থানেই অল্পবয়স্কদের ভিড়। আলাস্কায় গেলে অবশ্য তেমনটা মনে হবে না।

আমেরিকার ভাঙ্কুবার থেকে প্রমোদতরী ছাড়া আলাস্কায় যাওয়ার আর কোন উপায় নেই। প্রমোদতরীর নীরবতা আর আভিজাত্য যেন শুধু মধ্যবয়স্করাই ঠিকঠাক উপভোগ করতে পারেন। বিশেষত সাবলম্বী কোনো নারী যখন একটু নিজেকে সময় দিতে চান, তখন আলাস্কায় যাওয়ার পথের এই জাহাজতরী ভ্রমণটি বেশ ভালো লাগবে।

সৈয়দ মুজতবা আলী বেঁচে থাকলে রসিয়ে হয়তো গল্প বলতে পারতেন। আচমকা কারও সঙ্গে পরিচিত হতে পারার বিষয়টি সবসময় আনন্দের। হয়তো এই ভ্রমণে কিছুটা নিঃসঙ্গ লাগতেই পারে। খুব কম বাংলাদেশি কিংবা ভারতীয়দের দেখা মিলবে ভ্রমণের সময়। তবে যাওয়ার পথে নানা মুখরোচক খাবার ও বিনোদনের উপাদানের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়।

তবে জাহাজ আলাস্কায় পৌঁছানোর বেশ আগেই প্রবল কনকনে ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার মতো অবস্থা হতে পারে। এমন ঠাণ্ডায় হয়তো ভেবে বসবেন, আরে বাপু! আমার যে কি দুর্মতি হলো, এখানে এসেছি হাড় জুড়োতে! কিন্তু আলাস্কায় পা দেওয়ার আগে থেকেই নানা ট্যুরের আয়োজন আপনাকে উত্তেজিত রাখবে।

বলাই বাহুল্য, অধিকাংশ ট্যুরই আপনার জন্য নয়। জাহাজ থেকে নেমে বরং স্থানীয় ট্যাক্সির সঙ্গে কিছুটা দরকষাকষি করে নিন। আপনার গন্তব্য ম্যান্ডেনহল গ্লেসিয়ার। তিন লাখ বছর আগের এই স্থানটির কাছেই জুনো শহর। শান্ত এই শহরটির খুব কাছেই সমুদ্র। দূর থেকে দেখলে মনে হলে ড্রয়িং খাতার পাতায় আঁকা ছবি। সামনে থেকেও তাই।

এতক্ষণ ঠাণ্ডা নিয়ে যে বিরক্তি ছিল, তা নিমেষেই উবে যাবে। মনে হবে এখানেই বরং ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকি। আধুনিক এই শহরটির গায়ের খুব কাছঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে এক গ্লেসিয়ার। সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র আধুনিক শহর যার পাশেই এমন ভয়ঙ্কর সুন্দরের অবস্থান।

গ্লেসিয়ারের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকলেই হবে না। এই জুনো শহরেই যদি একদিন থাকেন, তাহলে অনেকবার দেখা হবে। তারচেয়ে বরং নাগেটস ফলস দেখা যাক।

হালকা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হাঁটাপথ দিয়েই চলে যেতে পারবেন নাগেটস ফলস দেখতে। কোনো গাইডের প্রয়োজন নেই। তবে কিছুটা সাবধান। আলাস্কার এদিকে গ্রিজলি ভালুকের উৎপাত একটু বেশি।

দুর্ভাগ্যক্রমে যদি সামনে এমন ভয়ানক জন্তু এসেই পড়ে, ভাল্লুকের চোখে চোখ রেখে এক পা করে পিছিয়ে আসবেন। মধ্যবয়স্কদের জীবনে একটু অ্যাডভেঞ্চার থাকলে মন্দ কী!

আলাস্কার ইতিহাস বেশ পুরনো। মূলত সমুদ্র ভ্রমণে আসা আমেরিকানদের জন্যে জুনো শহর গড়ে উঠেছে। ভাবা যায়! রাশিয়া থেকে মাত্র একডলার মূল্যে এই বিরাট ভূখণ্ডটি কিনে নিয়েছিল আমেরিকা? আগ্রাসী বিজ্ঞাপন নীতির ফলে এমন নিষ্প্রাণ অঞ্চলেও মানুষের ভিড় বেড়েছে।

জাহাজের যাত্রা কিন্তু শেষ হয়নি। সবে তো জুনো শহরে এলেন। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পর সকালে উঠেই অবাক হতে হবে। জুনো শহরের গ্লেসিয়ার ধরে জাহাজ যাত্রা শুরু করেছে। জুনোর আশেপাশে তাও শহরের আধুনিকতা ও সবুজের ছোঁয়া আছে। কিন্তু এখানে তো পানিতে ছোটবড় অজস্র বরফ। দেখেই বুকটা হিম হয়ে আসবে।

তবে একটু শান্ত হলেই অদ্ভুত কিম্ভুত বরফের স্থাপত্য আপনায় মুগ্ধ করবে। এমনকি বরফের গিড়িচূড়ায় পেঁজা তুলোর মতো মেঘের সারি কিছুটা হলেও বল জোগাবে।

জুনোর পর অন্তত তিনদিন জাহাজেই কাটাতে হবে সময়। চতুর্থদিন দেখা মিলবে স্কেগাওয়ে শহরের। এখানে অবশ্য ভুলেও গাইড ভাড়া করবেন না। সুন্দরী অনেক গাইডকেই পাওয়া যাবে। তবে পয়সাও খসাতে হবে অনেক। তারচেয়ে এই শহরে নিজে নিজেই ঘুরে বেড়ান।

আলাস্কার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। তবে একটানা দেখলে একঘেয়েমি চলে আসে। স্কেগাওয়ে এই একঘেয়েমি দূর করে। অনেকটা ঢাকার গুলিস্তান কিংবা নিউ মার্কেটের মতোই প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এই শহর। স্কেগাওয়ে আছেই এক সমাধিক্ষেত্র। সেই গোল্ড রাশে মৃত্যুবরণ করা ১৩৩ হতভাগ্যের সমাধি। আর ছেলেভোলানো গ্রিজলি বেয়ারের লোকগল্প।

হাসে ভরা বেলাভূমিও আপনাকে মুগ্ধ করবে। তবে মূল আনন্দই তো প্রমোদতরী। চারদিকে বরফে ঢাকা পাহাড়। শনশন করে হিমেল হাওয়া বইছে। বিনোদনের অভাব নেই। আর সারাদিন তো খাওয়া আছেই।

ষষ্ঠদিনে কেচিকানে পৌঁছেই কানাডার দিকে ঢোকার একটা পথ মিলবে। এখন বরফের রাজ্য থেকে আপনার বের হয়ে আসা। চারপাশের কালচে সবুজ শ্যাওলা ঢাকা পাহাড়ের মাঝ দিয়ে যাত্রার সময় আলাস্কার আদিবাসী, ওয়াইল্ড লাইফ এসব নিয়ে অনেককিছু জানা ও উপভোগ করার সুযোগ মিলবে।

তবে ট্যুর প্ল্যানের ফাঁদে পা দেবেন না। মধ্যবয়সীদের নিজের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে আলাস্কায়।

অনন্যা/ এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ