ঈদে ঘুরে আসুন তাজহাট জমিদার বাড়ি
এসেছে খুশির ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে পরিবারের সকলে একসাথে সময় কাটানো। আর এই ঈদে পরিবারের সকলে একসাথে ঘুরতে না বের হলে কি কোন আনন্দ হয়?
ঈদে ঘুরতে যাওয়ার জায়গা ঠিক করার সময় অনেকে চিন্তায় পরে যান আসলে যাবেন কোথায়? ঘুরে দেখার জন্য আমাদের আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেগুলোতে পরিবারের সকলে মিলে সহজেই যাওয়া যায়। এমনই একটি দর্শনীয় স্থান হলো তাজহাট জমিদার বাড়ি।
তাজহাট জমিদার বাড়ি প্রাচীন স্থাপনার একটি। বাংলাদেশেও প্রাচীন শাসনব্যবস্থার ‘জমিদারি শাসনামল’ এর প্রচলন ছিল। রংপুর জেলার তাজহাট, ডিমলা, কাকিনা, মন্থনা, পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় বেশকিছু জমিদার বংশ ছিল। বিশাল আয়তনের বেশকিছু প্রাসাদও ছিল তাদের। এরই মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত ছিল তাজহাট জমিদার বাড়ি। যা রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। তাজহাট জমিদার বাড়িটি রংপুর শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত। প্রাসাদটির একটি অংশকে রংপুর জাদুঘর করা হয়েছে।
বিখ্যাত এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন তৎকালীন জমিদার মহারাজা কুমার গোপাল রায়। এটি নির্মাণে সময় লেগেছিল প্রায় ১০ বছর। গোবিন্দলাল সোনা, হীরা জহরত এর পেশায় লিপ্ত ছিলেন। তাঁর আকর্ষণীয় ‘তাজ বা রত্ন’ খচিত মুকুটের কারণে এলাকার নামকরণ তাজহাট করা হয়।
ঐতিহ্যবাহী প্রাসাদটি পূর্বমুখী দোতলা, এর দৈর্ঘ্য ৭৬.২০ মিটার। ইতালি থেকে আনা সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি ১৫.২৪ মিটার প্রশস্ত ৩১ টি কেন্দ্রীয় সিঁড়ি সরাসরি দোতলায় চলে গিয়েছে। বাড়ির পিছনে গুপ্ত সিঁড়ি ও শ্বেত মার্বেল পাথরের ফোয়ারা রয়েছে। প্রায় ২১০ ফুট প্রশস্ত প্রাসাদটি চারতলা ভবনের সমান উঁচু এবং এর সামনে রয়েছে বিশাল মাঠ। তার দু’পাশে রয়েছে পুকুর এবং সারি সারি গাছ। প্রাসাদটির নির্মাণ শৈলীতে মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে। এটি অনেকটা ঢাকার আহসান মঞ্জিলের আদলে তৈরি।
প্রাসাদটির মার্বেল সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেই জাদুঘর। সেখানে রাজা-বাদশাদের ব্যবহৃত অনেক নিদর্শন রয়েছে। রয়েছে বোন মরিয়মকে দেওয়া বেগম রোকেয়ার চিঠি। এছাড়াও রয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ, সম্রাট আওরঙ্গজেবের খুৎবা, বিখ্যাত কবি শেখ সাদির ফরাসি কবিতা, পোড়ামাটির ফলকসহ অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আঞ্চলিক কার্যালয় হিসেবে ১৯৮৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত প্রাসাদটি ব্যবহৃত হয়। পরবর্তীতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটিকে ১৯৯৫ সালে ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে পর্যটকদের কাছে প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে আকর্ষণীয় একটি জায়গা হলো তাজহাট জমিদার বাড়ি।
তাজহাট জমিদার বাড়ির জাদুঘরটি গ্রীষ্মকালে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬ টা এবং শীতকালে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। সেখানে প্রবেশে নির্দিষ্ট ফি রয়েছে।
পরিবারের ছোট সদস্যটিকে নিজেদের ঐতিহ্য নিয়ে জানানোর একটি নিদর্শন হলো তাজহাট জমিদার বাড়ি। এবারের ঈদে বাড়ির সকলে ঘুরে আসুন তাজহাট জমিদার বাড়ি এবং ভাগাভাগি করে নিন ঈদ আনন্দ।
অনন্যা/এসএএস