যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম বাংলাদেশি ফেডারেল বিচারক: বাঙালি জয়গাথা বাজুক দেশে-দেশে
সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক ইস্যু নিয়ে বেশ সরগরম। বিশেষ করে ভিসানীতিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে দুই দেশের মধ্যে এক ধরনের নানামুখী জল্পনা-কল্পনা বেশ ডালপালা মেলছে। আর এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগে এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। এর মূলে যিনি রয়েছেন তিনি বাংলাদেশি নারী। যা দেশের জন্য গর্বের।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একজন ফেডারেল বিচারকের পদে প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি-আমেরিকান নারী নুসরাত জাহান চৌধুরীর নাম নিশ্চিত করা হয়েছে। নিউইয়র্কের ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট আসনের জন্য তার নির্বাচনের কথা সিনেট নিশ্চিত করেছে। ৪৬ বছর বয়সী এই নারী দীর্ঘকাল যুক্তরাষ্ট্রের একটি নাগরিক অধিকার রক্ষা-সংক্রান্ত আইনজীবীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই নারী নিউইয়র্কের (ইস্টার্ন ডিস্ট্রিক্ট) পূর্বাঞ্চলীয় আদালতের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা ও সিনেটর চাক শুমার।
ডেমোক্র্যাট নেতা শুমার টুইটারে লিখেছেন, নুসরাত চৌধুরী আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের একজন আইনি পরিচালক (লিগ্যাল ডিরেক্টর)। দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তার নাম সুপারিশ করতে পেরে আমি গর্ববোধ করছি। নুসরাতকে নিয়োগ দেওয়ার এ প্রস্তাব সিনেটে ৫০-৪৯ ভোটে পাস হয়েছে।
শুমার আরও লিখেছেন, নুসরাত ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন। প্রথম বাংলাদেশি এবং প্রথম মুসলিম নারী হিসাবে ফেডারেল বিচারকের দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক করেছেন। এরপর ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন। এর আগে ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম ফেডারেল বিচারক হিসেবে জাহিদ কুরাইশিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তাকে দেশটির নিউ জার্সির ফেডারেল ট্রায়াল কোর্টে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বর্তমানে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়নের (এসিএলইউ) ইলিনোয়েস চ্যাপ্টারের আইনি পরিচালকের দায়িত্বে আছেন নুসরাত। সেখানে তিনি বৈষম্যমূলক আচরণ ঠেকাতে পুলিশে সংস্কারের সুপারিশ করেন, যা কার্যকর হয়েছিল। এসিএলইউর নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি রোমিও বিবৃতিতে বলেন, নুসরাত একজন দারুণ বেসামরিক অধিকার আইনজীবী। আমাদের জাতির সবার জন্য সমান বিচার নিশ্চিত করতে তার উল্লেখযোগ্য রেকর্ড আছে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত চৌধুরীর এই অর্জন দেশের সুনাম বয়ে আনবে নিশ্চিত। সম্প্রতি বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে যে ভাটা পড়েছে সেখানে দেশটির এ ধরনের সিদ্ধান্ত আশা জাগানিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ফেডারেল বিচারক নিয়োগের মাধ্যমে তিনি বহির্বিশ্বের কাছে দেশকে তুলে ধরতে সক্ষম হবেন। যা দেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করবে। নুসরাত চৌধুরীর মতো নারীদের হাত ধরে এগিয়ে যাক বাংলা। দেশে এবং দেশের বাইরে নারীদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাক। নুসরাত চৌধুরী বাঙালি নারীদের প্রেরণা হয়ে উঠুক। সব প্রতিকূল পরিস্থিতিকে ডিঙিয়ে নিজের পরিচয়, দেশের পরিচয় বৃদ্ধি করুক।