নজরুলের প্রেম ও বিরহ: শঙ্খ লাগা সাপ
প্রেম কী-এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গেলে আজও তার তল পাওয়া কঠিন। তবে মোটাদাগে বলা যায়-প্রেম মূলত মানব-মানবীর একের প্রতি অন্যের দুর্বার আকর্ষণ ও শর্তহীন নিবেদন, বিমূর্ত অনুভূতি অথবা মিলনবিনা প্রগাঢ় শূন্যতার এক গভীর গভীরতর অসুখ। প্রেম শাশ্বত, সুন্দর, সৃষ্টিশীল। আবার একইসঙ্গে বিধ্বংসীও। প্রেম যেমন সৃষ্টি করতে পারে অনাবিল শান্তির জীবন, তেমনি দাউদাউ দাবানলে সাজানো বাগানকে পুড়িয়ে ছারখারও করে দিতে পারে। এরপরও মানবজীবনে প্রেম এক অপরিহার্য অনুষদ, বেঁচে থাকার সঞ্জীবনী। প্রেমের বিপরীত অবস্থা অপ্রেম, না কি বিরহ? এ নিয়ে বিস্তর তর্ক চলতে পারে। তবে আমার মনে হয়, বিরহের অবস্থান প্রেমের বিপরীতে নয়, সমান্তরালে। বিরহও প্রেমেরই আরেক নাম। যেখানে প্রেম আছে সেখানে বিরহ থাকবেই।
যুগে যুগে দেখা গেছে-শিল্পসৃষ্টির অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে প্রেম। সে কবিতা হোক, সংগীত হোক, চিত্রকলা বা ভাস্কর্য অথবা শিল্প সাহিত্যের অন্য যেকোনো শাখা। চিত্রশিল্পী, ভাস্কর, কারিগর তুলির আঁচড়ে বা পাথর খোদাই করে প্রেমের প্রতিমাই গড়েছেন। অন্যদিকে কবি, কথ সাহিত্যিক কবিতা, গান, গল্প ও উপন্যাসের মাধ্যমে প্রেমকে বাঙ্ময় করে তুলেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম এই প্রেমের নাওয়ের উদাস মাঝি। প্রেমের গাঙে নাও ভাসিয়ে তিনি বেয়ে চলেছেন খেয়া। ঝড় এসে সে তরী নিয়ে গেছে বিরহের বিষাদময় কোনো রুক্ষ ডাঙায়। তিনি একাধারে দ্রোহের কবি, প্রেমের কবি, বিপ্লব আর বিষাদচেতনার কবি।
কাজী নজরুল ইসলামের রচনায় বিচিত্র বিষয়ের সমাহার দেখা যায়। তাঁর কবিতা, গান, উপন্যাস ও গল্প আলোচনা করলে দেখা যাবে, মানবজীবনের এমন কোনো বিষয় নেই যে, তিনি তাঁর অনুভূতির কলমে নিপুণ শব্দজালে তুলে আনেননি। তবে, প্রধানত তাঁর রচনায় দুটি ধায়া বর্তমান-একথা সর্বজনবিদিত। যার একটিতে আছে বিদ্রোহী-বিদাংসী মনোভাবের প্রকাশ। দ্রোহ আর প্রতিবাদের পাথর দিয়ে গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছেন সমাজের যত অন্যায় আর অনাচারকে। আর একদিকে তিনি বিরহী বুলবুল। আবেগে খরোখরো এক প্রেমিক পুরুষ। দুই সত্তাকে তিনি চিত্রায়িত করেছেন ‘একহাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণতূর্য’ বলে। কিন্তু তাঁর সাহিত্যকে গভীরভাবে দেখে তুল্যমূল্য বিচার করলে দেখা যাবে-এই দুই সত্তা এক ছাড়া আর এক যেন বাঁচে না। যেন একে অন্যকে পেঁচিয়ে ধরে রাখে শঙ্খলাগা সাপের মতো। এই প্যাঁচে দ্রোহের বিষও আছে, প্রেমের মধুও আছে।
কাজী নজরুলের মেধার বিকাশ ঘটেছিল মূলত সমকালকে অবলম্বন করে। সময়টা ভাঙনের, আবার গড়ে ওঠার। ভাঙা-গড়ার সেই সন্ধিলগ্ন ছিল নজরুলের রচনার কালসীমা। উপমহাদেশের তৎকালীন বিক্ষুব্ধ রাজনৈতিক অবস্থা, রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-নিপীড়ন, পরাধীনতার গ্লানি-ইত্যাকার ঘটনা নজরুলের মানসলোকে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তিনি নিজে সৈনিক জীবন বেছে নেন আবার চেতনার মশাল জ্বালাতে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। তাঁর রচনায় সম-সময়ের অনাচার অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি কবিতাকে আশ্রয় করেছেন। ফলে রচিত হয়েছিল ‘বিদ্রোহী’ কবিতার মতো এমন বিধ্বংসী কবিতা। কবিতার মাধ্যমে তিনি সমাজের সব শৃঙ্খলকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে চেয়েছিলেন। যা কিনা নজরুলকেই বিদ্রোহী অভিধার শৃঙ্খলে বেঁধে ফেলেছে। কিন্তু তাঁর গল্প গান এমনকি অনেক প্রবন্ধের আবেগোঙ্কুসিত বিষয় ও ভাবের সামগ্রিক বিশ্লেষণে গেলে অনুধাবন করা যায় তিনি দ্রোহ নয় বরং গ্রেমের কবি হিসেবেই অধিক সার্থক ছিলেন।
একদিকে রাজনৈতিক টানাপড়েন, রাজদ্রোহিতার অভিযোগে কারাবন্দি অস্থির সময়, যৌবনের উদ্দামতা, বৃটিশশোষণ থেকে মুক্তির উদগ্র বাসনা, অন্যদিকে নজরুলের ব্যক্তিগত জীবনে প্রেম-বিরহ-জীবিকা নিয়ে নানা সংকট-এসবের প্রভাবে গড়ে উঠেছিল তাঁর সৃষ্টি-সন্ধায়। তাই তাঁর কবিতায় আমরা একই সময়ে প্রেম-বিরহ আর বিদ্রোহের সমান্তরাল যাত্রা দেখতে পাই।
বলা চলে, এ কারণে নজরুলের প্রেমিকসত্তা ও বিদ্রোহীসত্তা একে অন্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়, বরঞ্চ চৌম্বকীয়। যার কারণে তাঁর রচিত দ্রোহের কবিতাতেও যেমন প্রেমের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়, তেমনি প্রেমের কবিতার মাঝেও দ্রোহী চেতনা বা তেজোদীপ্ত স্বরের উপস্থিতি টের পাই। তাই যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে কামান দাগাতে গিয়েও তিনি প্রেমকেই আশ্রয় করেছেন। যুদ্ধের ভূর্যনিনাদের মধ্যেও গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি দেখেছেন।
সৃজনশীল মানুষ মাত্রই আবেগী ও রোমান্টিক। ভাবের উত্থান-পতনে তারা সদা আক্রান্ত। কবি নজরুল ছিলেন এমনই রোমান্টিক একজন মানুষ। তিনি ছিলেন আজন্মের প্রেমিকগুরুষ। নানা সময়ে একাধিক নারী তাঁর জীবনে প্রেমিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। আর প্রেমিক পুরুষ মানেই নারীকে জয় করার কলাকৌশলে পারঙ্গম। নজরুল তাঁর প্রণয়িণীদের নানা সময়ে গানের চরণে চরণে স্তবস্তুতি গেয়ে আকৃষ্ট করতে চেয়েছেন। এই প্রেমভাবনা তাঁকে করেছিল প্যাম স্বপ্নপ্রবণ। অসাধারণ রোমান্টিকতায় আচ্ছন্ন কবি সৃষ্টি করেছেন অমর সব উপমা ও চিত্রকল্প। তিনি আকাশ থেকে তারা এনে প্রিয়ার খোঁপায় গুঁজে দিতে চেয়েছেন। কানে দোলাতে চেয়েছেন তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল। প্রেমিকার জন্য রচনা করেছেন অপূর্ব নিবেদনের অঞ্জলিকাব্য:
তোমার কেশের গন্ধে কখন
লুকায়ে আসিল লোভী আমার মন।
কিংবা
কানের দুলে প্রাণ রাখিলে বিধিয়া
আঁখ ফিরা দিয়া চোরি ক্যায় নিন্দিয়া।
প্রকৃত প্রেমিক যারা, তারা তার প্রিয় মানুষকে একজীবনে ভালোবেসেও আশা মেটে না। প্রেমের জন্য বারবার এই ধরায় আসার সাধ ব্যক্ত করেছেন। প্রেম তো চিরন্তন, প্রেম সত্য-সুন্দর। কবি এই বিষয়টিকে এমনভাবে ধারণ করতেন যে, তিনি স্বর্গীয় প্রেমের আশা বাতিল করে পার্থিব প্রেমে মশগুল হতে চেয়েছেন। কবিতার চরণে চরণে, সংগীতের পর্বে পর্বে তার স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন। তিনি গেয়েছেন, বঁধু মিটিল না সাধ ভালোবাসিয়া তোমায়।
তাই আবার বাসিতে ভালো আসিব ধরায়।
প্রেমের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হলো বিরহ। প্রেম থাকলে বিরহ থাকবেই। যার প্রতি প্রেমের গভীরতা যত বেশি, তার প্রতি বিরহের প্রগাঢ়তাও তত। দয়িতকে না পাওয়ার ব্যর্থতা প্রেমিককে বিরহকাতর করে তোলে। মানবমনের সেই আর্তি উঠে এসেছে নজরুলের কবিতা-গানে। বিশেষ করে প্রেমের গানগুলোতে। বিরহের বেদনাই তাঁর শ্রেষ্ঠ গানগুলোতে রয়েছে। বেদনার বাণীই তাঁর গানের চিরন্তনতা। বাস্তব জীবনে বিচ্ছেদের অন্তর্দাহ তাঁর অনেক কবিতাতেও দেখা যায়। তিনি বিরহী মনের কাতরতা এভাবে প্রকাশ করেছেন,
আবার বিরহে তব কাঁদিব
আবার প্রণয়-ভোরে বাঁধিব,
শুধু নিমেষের তরে আঁখি দুটি ভ’রে
তোমারে হেরিয়া ঝ’রে যাব অবেলায়।
কবি নজরুল ভাগ্যবিড়ম্বিত, অত্যাচারিত, শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ে যেমন হাতে কলম তুলে নিয়েছিলেন, তেমনি তাঁর অপরিমেয় সাহস, অফুরন্ত প্রাণশক্তি দ্বারা সোচ্চার হয়েছিলেন। অসহায় মজলুমদের জন্য পরলে তাঁর চোখ বিষণ্ণ তারার মতোই মিটিমিটি কেঁপেছে। কিন্তু কলম উঠেছে লাঙলের ফলার মতো ধারালো হয়েছে। একের পর এক ফলিয়ে তুলেছেন দ্রোহী কবিতার ফসল। আবার বিষণ্ণ কোনো অবেলায় কোনো বৃষ্টিমুখর রাতে বা একাকী কোনো কালবেলায় তাঁর মন প্রেমের যন্ত্রণায় না-পাওয়ার বেদনায় মুষড়ে পড়েছে। বিরহী চক্রবাক উড়ে এসে বসেছে তাঁর লেখার টেবিলে। তখন একের পর এক কবিতা গান রচনা করেছেন। ব্যক্তিজীবনে নার্গিসের সঙ্গে বিচ্ছেদের মর্মদাহ আর অন্তর্বেদনাও নজরুলকে অনেকগুলো বিপ্লবের অগ্নিকরা কবিতা লিখতে প্রাণিত করেছিল। একদিকে প্রেমের আকাঙ্ক্ষা, হতাশা ব্যর্থতা, অন্যদিকে পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরাজয়ের গ্লানি, আত্মশ্লাঘা, বিদ্রোহ-এইসব কিছুর মিশ্র প্রতিক্রিয়া ঘটে কবির সে-সময়ের রচনায়। নজরুল-জীবনে একাধিকবার প্রেম এসেছে। দেখা গিয়েছে তাঁর জীবনে যে কজন নারী এসেছেন, তাঁদের তিনি গভীরভাবে ভালোবেসেছেন, আবার বিচ্ছেদে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছেন। তাঁদের ভালোবেসে নতুন নামকরণ করেছেন। এটাও ছিল তাঁর প্রেমিক রূপের অসাধারণ প্রকাশ। তাঁর জীবনের প্রথম নারী ছিল কুমিল্লার মুরাদনগরের বাসিন্দা সৈয়দা আসার খাতুন। নজরুল তাঁর নাম দেন নার্গিস। সে ১৯২১ সালের কথা। এত গভীরভাবে ভালোবেসেও নার্গিসের সঙ্গে নজরুলের প্রেমের সফল সমাপ্তি ঘটেনি। বিয়ের আসর থেকে ওই রাতেই কোনো এক অজ্ঞাত অভিমানে নার্গিসকে ত্যাগ করে চলে যান নজরুল। কিন্তু তাঁর এই প্রস্থান তাঁকে আজীবন দুঃখী আর পীড়িত করে রেখেছিল। তার সেই সময়ের প্রেমপর্বের কবিতাগুলোতে তাই জীবন নিয়ে অতৃপ্তি, বিরহ বিষাদ, আর প্রবল চাঞ্চল্য দেখা যায়। তিনি পনের বছর পরে নার্গিসের কাছে একটা পত্র লিখেছিলেন, যেটি বিশ্বের ইতিহাসে একটি সেয়া প্রেমপত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। তিনি নার্গিসকে যে পত্র লেখেন, তার অংশবিশেষ আলোচনাসুত্রে উল্লেখযোগ্য।
‘আমার অন্তর্যামী জানেন তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কী গভীর ক্ষত, কী অসীম বেদনা কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমি পুড়েছি, তা দিয়ে তোমায় কোনোদিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না, আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।’ ‘বেদনা-অভিমান’, ‘অবেলা’, ‘বিদায় বেলা’, ‘পথিক প্রিয়া’ এসব কবিতাসহ অনেক কবিতা নার্গিসকে স্মরণ করে তিনি লিখেছেন। দীর্ঘ পনের বছর পর নার্গিদের পত্র পাওয়ার পরে অভিমান করে লিখেছিলেন,
যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই
কেন মনে রাখো তারে
ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে।
নজরুলের জীবনে নার্গিসের পরেই আসেন প্রমীলা দেবী। কান্দিরপাড়ের মেয়ে প্রমীলার আসল নাম ছিল দুলি বা দোলনচাঁপা। নজরুল ভালোবেসে তাঁর নাম দেন প্রমীলা
দেবী। এই নারীর সঙ্গে ১৯২৪ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবন্ধ হন, যিনি ছিলেন তাঁর আমৃত্যু জীবনসাথী।
এরপরে কবি আসক্ত হন মহীয়সী নারী ফজিলাতুন্নেসার প্রতি। কিন্তু তিনি এই প্রেমে পুরোপুরি ব্যর্থ হন। ফজিলাতুন্নেসার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। ফলত সেই ব্যর্থতা আর হতাশার গ্লানি নিয়েও তিনি বহু কবিতা- গানের মাধ্যমে বিরহ বেদনার স্ফূরণ ঘটিয়েছেন।
এই তিন জন ছাড়াও কবির জীবনে রানু সোম, উমা মৈত্র, কানন দেবী, মিরা ইত্যাদি নামের নারীয়া প্রেমিকা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে কেউ কেউ মনে করেন।
এসব প্রেম, বিরহ, বিদ্রোহ কবি নজরুলের আবেগতাড়িত হৃদয়কে পুড়িয়ে থাক করেছে। তিনি ক্ষতবিক্ষত হয়েছেন আবার মনকে নতুন করে গড়েছেন। শক্ত পাথরের মতো তাঁর মন দ্রোহে প্রতিবাদে সমাজের গায়ে তীক্ষ্ণ আঘাত করেছে পাশাপাশি আবার না পাওয়ার বেদনায় হাহাকার করে উঠেছে হৃদয়।
ভগবান। ভগবান! একি তৃষ্ণা অনন্ত অপার।
কোথা তৃপ্তি? কোথা তৃপ্তি? কোথা মোর তৃষ্ণাহরা প্রেমসিন্ধু
অনাদি পাথার,
মোর চেয়ে স্বেচ্ছাচারী দুরস্ত দুর্বার।
কোথা গেলে তারে পাই
যায় লাগি এতবড় বিশ্বে মোর নাই শান্তি নাই।
(পুজারিণী)
শোনা যায়, শৈশবে দুখু মিয়ার হৃদয়ে প্রেমের সঞ্চার ঘটেছিল, তখন তিনি কেবল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। বলা যায় নজরুল এক জন্যপ্রেমিক, জন্মদাখী, জন্মদ্রোষী। তাঁর প্রেমের কবিতার সর্বত্র যেমন পাওয়ার আনন্দ, বিচ্ছেদের বেদনার গুঞ্জরণ, তেমনি দুঃখদায়িনী দয়িতায় প্রতি ক্ষোভ- বিক্ষোভও পরিলক্ষিত হয়।
‘গ্রেম সত্য চিরন্তন, প্রেমের পাত্র সে বুঝি চিরন্তন নয়।’
কবি, প্রবন্ধকার আমিনুল ইসলাম তাঁর ‘নজরুল সংগীত।
বাণী বৈভব’ নামক গ্রন্থে নজরুলের প্রেমসংক্রান্ত গানের আলোচনায় বলেছেন, ‘নজরুল আবেগে রোমান্টিক এবং চিন্তনে আধুনিক মানুষ ছিলেন, যে কারণে তাঁর হাতে প্রেম লাভ করেছে রোমান্টিকতার মাধুর্য-মোড়ানো আধুনিক অবয়ব। তিনি মনে করেছেন প্রেমই সৃষ্টির উৎস, বিশ্বসৃষ্টির উৎস এবং জীবনের উৎস। তিনি বারবার জন্মলাভ করতে চেয়েছেন প্রেমিক রূপে এবং তাঁর মনে হয়েছে বিশ্ব প্রেমময় স্থান।’ কী বিদ্রোহে, কী বিপ্লবে, কী প্রেমযাপনায়, কী বিরহ যন্ত্রণায় নজরুল সত্তা সততই ছিল একের সঙ্গে আর এক যুক্ত হয়ে। সেই এক ‘দ্রোহী’ আর এফ ‘বিরহী’।