Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নারীদের ব্ল্যাকমেইলিং: বন্ধ হবে কবে

সম্প্রতি নারীদের ব্লাকমেইলিং করা একটা ট্রেন্ডে দাঁড়িয়ে গেছে। কিছু অসাধুচক্র নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে তার থেকে টাকাপয়সা, সম্পত্তি ও নানাবিধ জিনিস হাতিয়ে নেওয়ার মতো কাজেও লিপ্ত হচ্ছে। শুধু টাকা-পয়াসা হাতিয়ে নিয়েই ক্ষান্ত থাকছে না এই শ্রেণী বরং নারীকে নানাবিধ অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং কাজেও অংশ নিতে বাধ্য করছে!

যুগের পরিবর্তন হয়েছে। অধিকাংশের হাতেই এখন স্মার্টফোন। তবে এই ফোনের উপর্যুপরি এবং ইতিবাচক ব্যবহারের চেয়ে নেতিবাচক ব্যবহারই বেশি। ইন্টারনেটের এই যুগে সবাই সহজভাবেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে-অন্যের সঙ্গে সহজেই যুক্ত হতে পারছে। তবে এই যুক্ত হওয়াকে কেন্দ্র করে অনেকেই তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে একে অপরের হৃদয়ের কাছাকাছি চলে আসছে। এসব আবেগ-অনুভূতি এবং নারীর সহজ-সরলতাকে কাজে লাগিয়ে অসাধু ব্যক্তিরা নারীকে ফাঁদে ফেলছে। ব্যক্তিগত ছবি ভিডিও হাতিয়ে নিয়ে নারীকে করায়ত্ত করছে। তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্তা ও নিপীড়নের শিকারে পরিণত করছে। তবে এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে তবু নারীরা সচেতনতা অবলম্বনে ব্যর্থ হচ্ছেন।

এর নেপথ্যে কিছু কারণ অবশ্য নেই তা নয়। প্রতিনিয়তই অপরাধীরা তাদের ভোল পাল্টাচ্ছে। একবার যে কৌশল রপ্ত করে তারা নারীকে করায়ত্ত করছে পরবর্তী অপারেশনে ঠিক তার অন্যটি প্রয়োগ করছে। ফলে নারীদের বিভ্রান্ত হতে হচ্ছে কে সত্যি তার কাছের এবং কে বা কারা তার ক্ষতির কারণ হবে! এমন দ্বিধাবোধ নিয়েই একসময় নারীরা এমনভাবে জড়িয়ে যাচ্ছেন যা থেকে তার পরিত্রাণ পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে!

প্রেমের ফাঁদ পেতে নারীর সর্বস্ব লুটপাট করার জন্য যে শুধু অশিক্ষিত, বেকার, জ্ঞানহীন ব্যক্তিই এতে অংশ নিচ্ছেন এমন না বরং সমাজের অধিকাংশ মানুষই এমন বিকৃত রুচি বহন করছে। সুযোগ পেলেই তা কাজে লাগিয়ে নারীদের ফাঁদে ফেলছে৷ এর জন্য শিক্ষা, অশিক্ষা বা অধশিক্ষা কোনো বিষয় নয়। বরং কারণটা হলো রুচির, বোধের, বিকৃত মানসিকতার। তাইতো শিক্ষিত ব্যক্তিও এমন ফাঁদ পাতছে অহরহ। বরং তাদের মধ্যেই এমন অপরাধের প্রবণতা বেশি উঠে আসছে ইদানিং।

রাজধানীর রূপনগর থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় মো. মনির হোসাইন নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খুলে তার মাধ্যমে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে ব্ল্যাকমেইল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

গণমাধ্যম বরাত জানা যায়, মনির ‘এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন এবং এর মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করে আসছিলেন। তিনি নারী সদস্যদের গ্রুপের মডারেটর বানানোর প্রস্তাব দিতেন। বিভিন্ন জায়গায় একসঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, খাওয়াদাওয়া ও বিভিন্ন ‘ছলনা করে’ নারীদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন।

প্রকাশিতব্য সংবাদমাধ্যমে আরও জানা যায়, এসএসসি বন্ধন ২০০১ বাংলাদেশ’ গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে মনির অভিযোগকারী নারীসহ একাধিক নারীর সঙ্গে গ্রুপের মডারেটর বানানোর কথা বলে প্রথমে ভিডিও কলে কথা বলে তা স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখতেন। পরে সেই ভিডিও দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন। শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ভিডিও করে রাখেন মনির। এ ছাড়া বিভিন্ন নারীকে নিজের কবজায় নিয়ে টাকার বিনিময়ে ধনাঢ্য লোকদের কাছে পাঠাতেন মনির। ভুক্তভোগী নারীরা সামান্য টাকা পেলেও মনির ভাগ পেতেন মোটা অঙ্কের টাকা। এছাড়া অভিযোগকারী জানান, হত্যার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করেছেন মনির। ভুক্তভোগীর স্বামী অফিসে চলে গেলে কখনও কখনও মনির ভুক্তভোগীর বাড়িতে গিয়ে হানা দিতেন। এভাবে জীবন অতিষ্ঠ করে তোলায় তিনি আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হন।

মনিরের মতো বিকৃত রুচির কিছু মানুষ এ সমাজে বিদ্যমান। যারা কাঁড়ি কাড়ি টাকা বানাতে নারীকে ফাঁদে ফেলেন। নানাবিধ কথা বলে নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। অন্যদিকে নারীরা বোকামি করে, সহজ-সরলতা দেখিয়ে এমনকি কথার জালে জড়িয়ে সম্পৃক্ত হন। যার ভয়াবহ পরিণতি উক্ত প্রতিবেদনে কিছুটা হলেও উঠে এসেছে।

এ সমাজে নারীরা এতটাই অনিরাপদ যে, বর্তমান সময়ে নারীর চলন-বলনে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে৷ অর্থাৎ কোথায় কী বলবেন, কতটুকু বলবেন, কার সঙ্গে চলবেন, কেনো চলাচল করবেন প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সত্যি কথা বলতে বর্তমান সময়টা একটা অদৃশ্য ছায়াজালে বন্দি। এখানে সবাই সবাইকে মনিটরিং করছে কোনো না কোনভাবে। ফলে বিপদ এড়িয়ে চলতে অপরিচিত, অজানা মানুষদের এড়িয়ে চলতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে না জেনে না বুঝে হুটহাট সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সর্বোপরি নারীকে সচেতন হতে হবে। ভুল করে নারী যদি ফাঁদে পা দিয়েই দেন তখন লাস্ট স্টেজে না গিয়ে বরং দ্রুত সমস্যার সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে৷

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ