টেলিগ্রামচক্রের ফাঁদে তরুণীরা: সাবধানতাই অন্যতম পন্থা
আমাদের সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার। একশ্রেণীর হীন মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ নারীর সরলতাকে কেন্দ্র করে ফাঁদে ফেলে। প্রথম পর্যায়ে ছলে-বলে-কৌশলে নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর একসময় সুযোগ বুঝে নারীর সর্বনাশে মেতে ওঠে। এসব ঘটনা এখন মোটামুটি বেশ পুরনো।
যুগের আধুনিকতায় অসাধু এসব ব্যক্তি ভোল পাল্টেছে। তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের ফলে এই শ্রেণী আবার নারীকে ফাঁদে ফেলতে ব্যবহার করছে অত্যাধুনিক কৌশল। এসব কৌশল তারা ব্যবহার করছে নারীকে বিপদে ফেলতে।
অবাধ ইন্টারনেটের ব্যবহারের ফলে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম আইডি হ্যাক করে পমপম নামের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপ নারীর ব্যক্তিগত ছবি, ভিডিও বিভিন্ন গ্রুপে ছড়িয়ে দিচ্ছে। টাকা-পয়সা দাবি করছে। দিতে না পারলে ভিডিও কলে এসে আপত্তিকর সব কর্মকাণ্ড করতে বাধ্য করছে। কোনো প্রস্তাবেই সাড়া না দিলে ভুক্তভোগীদের নাম-পরিচয়- ব্যক্তিগত তথ্যসহ লাখ লাখ সাবসক্রাইবারের টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোতে ভাইরাল করে দিচ্ছে।
কিশোরী-তরুণী সর্বোপরি নারীদের সঙ্গে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নতুন নয়। তবে টেলিগ্রাম চক্রের ফাঁদ বেশ নতুন। এসব অসাধু চক্র বারবার তাদের পথ পরিবর্তন করে। যখনই একটি অপরাধ প্রকাশিত হয়, মানুষ একটু সচেতন হতে শুরু করেন ঠিক তখনই এসব চক্র নতুনভাবে নারীকে হেনস্তা করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইন্টারনেট দুনিয়ায় আন্তর্জাতিক এই চক্রের রয়েছে বিভিন্ন গোপন গ্রুপ ও পেজ। এদের ফলোয়ার সংখ্যা সোয়া ৪ লাখ। মাসে ১ থেকে দুই হাজার টাকা সাবস্ক্রিপশন ফি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, পর্তুগাল, কানাডা, আমেরিকা এবং ইংল্যান্ডের মতো দেশের অসংখ্য ক্রেতা গ্রুপটির সদস্য হয়েছেন। এই চক্রটি ইন্টারনেট দুনিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে ২০ হাজার আপত্তিকর ভিডিও ও ৩০ হাজার ছবি। এই চক্রের কাজই হচ্ছে তরুণীদের টার্গেট করে তাদের ব্যক্তিগত ছবি এসব গ্রুপে ছড়িয়ে দেওয়া।
চক্রের মূল হোতা সায়েমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হলো মশিউর, ক্যাকটাস ওরফে কেতন চাকমা, এল ডোরাডো ওরফে শাহেদ, তূর্য ওরফে মারুফ এবং মিঞা ভাই ওরফে নাজমুল সম্রাট। এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। নারীদের টার্গেট করে তাদের প্রতি গড়ে তোলা এ ধরনের ঘটনাকে এড়িয়ে চলতে নারীদের সচেতন হওয়া অতীব জরুরি।
এ বিষয়ে জান্নাতুল যূথী তাঁর লেখা একটি প্রবন্ধে নারীদের সচেতন থাকা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ টেলিগ্রাম চক্রের ফাঁদে তরুণীরা: অপরাধীদের কঠোর শাস্তি চাই’ শীর্ষক প্রবন্ধে তরুণী তথা সবশ্রেণির নারীদের রক্ষা করতে নারীকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। অসাধু চক্রের কৌশল যে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় তাই এশ্রেণির প্রতি সচেতন হতে হবে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সহজ কোনো পাসওয়ার্ড নয়। এমনকি যেখানে সেখানে আইডিতে লগ ইন থেকেও বিরত থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে নারীরা যদি সচেতন না হন তবে এই হীন মানসিকতাপূর্ণ নরকের কীটেরা নারীকে ভোগ্যপণ্যই ভেবে চলবে আজীবন।
কঠোর আইন করে এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সাইবার ক্রাইমের সঙ্গে যারা জড়িত থাকবে তাদের অপরাধের উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ নিশ্চিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। মূলত এদেশের লোকজন এতটাই নিচে নেমেছে যে, তাদের কাছে মৃত্যুও যেন নস্যি হয়ে গেছে! যেমন ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ্বন্দ্ব করেও যেন এ থেকে পরিত্রাণ মিলছে না! তাই মৃত্যুদ্বন্দ্ব না দিয়ে বরং এদের এমন শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত যা দেখে সব মানুষের হৃদয়ে ভয় সৃষ্টি হয়৷ বেঁচে থেকে সর্বোচ্চ নিকৃষ্ট জীবনের অধিকারী হয়। শুনতে রূঢ় মনে হলেও নারীদের জীবনকে একটু নিরাপদ করতে এমন শাস্তি এখন সময়ের দাবি৷
তরুণী তথা নারীদের বিপদ থেকে রক্ষা করতে হলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। এখনই সময় যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অসাধু চক্রের কুচক্রী কাজ থেকে নারীদের রক্ষা করতে হবে। আর এজন্য আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি নারীদের সচেতন হওয়া অবিশ্যম্ভাবী। নারীদের ফেসবুক বা যেকোনো ধরনের পাসওয়ার্ড কারো সঙ্গে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেকোনো স্থানে আইডি লগইন করা যাবে না। সাধারণ দেখা যায়, সবার মধ্যে একটা প্রবণতা কাজ করে- মূলত ফ্রি ওয়াইফাই পেলেই অনেকেই হুটহাট করে লগইন করেন৷ এমনকি সিসিক্যামেরা আওতায় এলেও সচেতন হওয়ার কোনোই বালাই নেই।
নারীদের নজরটা তীক্ষ্ণ করতে হবে। কারণ অসাধু চক্রের ফাঁদ কিন্তু নারীর জন্যই বেশি। আর যুগের আধুনিকতায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে, বিভিন্ন অ্যাপসের সাহায্যে নারীর ফোন ট্রেক করা, হ্যাক করা খুবই সহজে করছে! তাই নারীদের মাথায় রাখতে হবে যাতে কোনো বিপদ না আসে৷ সেজন্য নিজের সাবধানতা সার্বপ্রথম নিজেকেই গ্রহণ করতে হবে৷ তাও যদি কোনভাবে সমস্যায় পড়েই যায় তবে কালক্ষেপণ না করে যতদ্রুত সম্ভব আইনের সহোযোগিতা গ্রহণ করতে হবে৷ আমাদের সমাজে মেয়েদের সুস্থ ও সুন্দর জীবনের স্বার্থে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।