Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্রেইন অ্যান্ড লুকস: হেডি ল্যামার

সেলুলয়েডে গ্ল্যামারের দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। অনেকেই তাকে বিশ্বের সবচেয়ে রূপসী নারী বলে আখ্যায়িত করেন। তবে শুধু রুপালী পর্দাতেই দ্যুতি ছড়িয়েছেন এমন নয়। ২০১৫ সালে প্রমাণ মিললো তার বুদ্ধির দৌড়েরও। সমগ্র পৃথিবী জানলো ওয়াইফাই, ব্লুটুথের মতো ওয়ারল্যাস প্রযুক্তি তার গবেষণার হাত ধরেই এতদূর এসে পৌঁছেছে। হেডি ল্যামার জন্মে যেমন ছিলেন গ্ল্যামারাস, মৃত্যুর পরেও তার প্রভাব যেন সরে যায়নি।

১৯১৪ সালে হেডউইগ ইভা মারিয়া কেইসলারের জন্ম এক সচ্ছল ইহুদি পরিবারে। অনেক অল্প বয়সেই অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন। শিশুকাল থেকেই ব্যাংক ডিরেক্টর বাবা তাকে ভীষণ আদর করতেন। বাবা কৌতূহলী ছিলেন তাই ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে পৃথিবীর দিকে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকানোর বিষয়ে অনুপ্রেরণা দিতেন। প্রায়ই হাঁটতে বের হলে মেয়েকে বিভিন্ন মেশিন কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে আলোচনা করতেন।

অল্প বয়সেই অভিনয় জগতে প্রবেশ করেন হেডি ল্যামার

পাঁচ বছর বয়সী হেডি তখন থেকেই কৌতূহলী হয়ে উঠেন। তাইতো নিজের দামি মিউজিক বক্সটি আলাদা করে ভেতরের মেকানিজম বোঝার চেষ্টা করেছিলেন। অন্যদিকে ল্যামারের মা একজন পিয়ানিস্ট। তিনিই মেয়েকে আর্টের সাথে পরিচিত করিয়ে দেন।

হেডির মেধাবী মননের বিষয়ে কারোই তেমন মনোযোগ ছিলোনা। ডিরেক্টর ম্যাক্স রেইনহার্ডের সাথে ষোল বছর বয়সে পরিচিত হওয়া একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। রেইনহার্ডের সাথে বার্লিনে একসাথে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। অস্ট্রিয়া বংশোদ্ভূত এই আমেরিকান ১৮ বছর বয়সেই চেক সিনেমায় অভিনয় করেন। ১৯৩০ সালে সর্বপ্রথম তার অভিনয় শুরু। জার্মান ফিল্ম মানি অন দ্য স্ট্রিটে অভিনয় করেন তিনি। কিন্তু ১৯৩২ সালে তিনি সর্বপ্রথম সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করে একস্ট্যাসি মুভির মাধ্যমে। আজও সমুদ্রসৈকতে আবেদন ছড়িয়ে ঘোড়ার পেছনে দৌড়ানোর দৃশ্য অনুরাগীদের মুগ্ধতা আদায় করে নেয়।

১৯৩০ সালে হেডি ল্যামার অভিনয় জগতে পা রাখেন

তখন অস্ট্রিয়ার প্রখ্যাত অস্ত্র ব্যবসায়ি ফ্রিটজ ম্যান্ডল একবার হেডিকে সিসিতে অভিনয় করতে দেখে মুগ্ধ হন। ম্যান্ডল আর হেডি দ্রুতই বিয়ে করেন। কিন্তু ১৯৩৩ সালে তাদের বিয়ে হলেও এই বিয়ে টেকেনি। একবার হেডি বলেছিলেন, “আমি বুঝতে পেরেছিলেন ওর সাথে ঘর করলে আমার পক্ষে অভিনয় করা সম্ভব হবেনা। বিয়ের পর যেন আমাকে পুতুলের মতোই সামলে রাখা হতো। নিজেকে মনে হতো একটা যন্ত্র। কোনো আনন্দ নেই।” হেডি মোটেও সুখি হতে পারেননি। তাকে জোর করে হোস্টের ভূমিকা পালন করতে হতো। সেখানেই এই ব্যবসার সাথে তার পরিচয়। প্রথম অস্ত্র দেখা। ম্যান্ডল থেকে তিনি ১৯৩৭ সালে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে লন্ডনে পাড়ি জমান। তবে এতদিনে যুদ্ধকালীন অস্ত্রশস্ত্রের বিষয়ে জ্ঞানও নিয়ে গিয়েছিলেন।

লন্ডনে পৌঁছেই লুইস বি মেয়ারের সাথে তার পরিচয় ঘটে। লুইসের সাথে পরিচয়ের মাধ্যমে হলিউডে প্রবেশের পথ সুগম হয়। এখানেই আবার তার পরিচয় ঘটে এক চমৎকার চরিত্রের সাথে। হাওয়ার্ড হিউজের উদ্ভাবনের প্রতি আগ্রহ ছিলো। আর এই হিউজের প্রভাবেই ল্যামারের মধ্যে একজন উদ্ভাবকের জন্ম হয়। হিউজই তাকে এয়ারপ্লেন ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যেতেন। সেখানে প্লেন কিভাবে বানাতে হয়, কিভাবে কাজ করে এসব বিষয়ে অনেককিছু জানতে পারেন হেডি। হিউজ দ্রুতগতির প্লেন বানাতে চেয়েছিলেন যাতে ইউএস মিলিটারিতে যোগ দিতে পারেন।

তার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো সোডা ট্যাবলেট আবিষ্কার

হেডি অনেক বই কিনে আনলেন। বিশ্বের দ্রুতগতির পাখি আর মাছ নিয়ে বই। দ্রুতগতির পাখির ডানার আদলে বিমানের উইং স্কেচ করলেন। হিউজকে দেখাতেই দ্রুত জিনিয়াস তকমাও পেয়ে গেলেন। তার উদ্ভাবনী মন ছিলো প্রাকৃতিক। তার একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হলো সোডা ট্যাবলেট আবিষ্কার করা। এসব কিছুর মাঝে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেই তার উদ্ভাবন সবচেয়ে চমকপ্রদ বলা যায়।

১৯৪০ সালে জর্জ আনথেলের সাথে দেখা হওয়ার পর যেন নিজের জীবনের বাঁকে পরিবর্তন আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে সমগ্র পৃথিবীর এই অবস্থা দেখে তিনি ব্যথিত হয়েছিলেন। এমন সময়ে হলিউডে বসে আরামে টাকা আয়ের পথ ধরে রাখাটা তার ভালো লাগছিলো না। তারা দুজনে প্রচুর কথা বলে অবশেষে একটি কমিউনিকেশন সিস্টেম আবিষ্কার করেন। রেডিও ওয়েভের মাঝে ফ্রিকুয়েন্সি হপিং এর ব্যবহার করেছিলেন। মুলত বেতার তরঙ্গকে প্রভাবিত বা বিকল করে দেয়া যায়। কিন্তু হেডি চাইলেন এমন কিছু করতে যা কিনা বেতার তরঙ্গকে প্রভাবিত করবেনা।

‘আই টেক দিজ ওমেন’ (১৯৪০) চলচ্চিত্রের দৃশ্যে হেডি

এভাবেই স্প্রেড স্পেকট্রাম কমিউনিকেশন্সের জন্ম হয়। এর স্বত্বাধিকার পেয়ে গেলেও তারা ১৯৪২ সালেই এটি নৌবাহিনীকে বিনামূল্যে প্রদান করেন। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবিষ্কারক পরিষদ ২০১৪ সালে তাদের শততম জন্মবার্ষিকীতে আজীবন সম্মাননা প্রদর্শন করেন।

২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করা এই রূপসী যেন রূপকথার এক দেবী। এই আবিষ্কারই আসলে ওয়াইফাই বা তারবিহীন যোগাযোগের আবিষ্কার করে।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ