স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নারীদেরও স্মার্ট হওয়া জরুরি
যেকোনো দেশের উন্নতিতে প্রধান সহায়ক ভূমিকা পালন করেন সে দেশের জনগণ। একটি দেশের মানুষ কতটা সুশিক্ষায় শিক্ষিত, একইসঙ্গে কতটা উদার, মানবিক ও বিজ্ঞানসম্মত মানসিকতা ধারণ করে তার ওপর দেশের কল্যাণ অনেকাংশেই নিহিত থাকে। তবে দেশের কল্যাণের জন্য পুরুষের তুলনায় বলা চলে নারীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। এর কারণ অনেকটাই আমাদের সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করার পদ্ধতি।
পরিবারে যদি দুটি সন্তান থাকে, তবে স্বাভাবিকভাবেই তারা কিছুটা হলেও মাকে বেশি কাছে পায়। যদি বাবার বদলির চাকরি হয় বা যেকোনো ধরনের পেশা হয়, সেক্ষেত্রে মায়ের কাছেই সন্তান সর্বোচ্চ সময় অতিবাহিত করে। ফলে একজন মা তথা একজন নারী যদি স্মার্ট হন, তাহলে তার সন্তানদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তিনি ততটাই দক্ষ হবেন। ফলে নারীরা যদি নিজেদের মন, মস্তিষ্কের কলুষতা দূর করতে পারেন, তবে সন্তানও প্রাগ্রসর মনের অধিকারী হবে। তাই বাংলাদেশ প্রত্যাশা-অনুযায়ী দেশকে এগিয়ে নিতে দেশের নারীদেরও নিজেদের এগিয়ে নিতে হবে যুগের চাহিদা অনুযায়ী।
বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজের দিকে লক্ষ করলে এক নিমেষেই চোখের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিভৎস, কদর্য সমাজের নগ্ন চিত্র। যেই সমাজে নারীরা প্রতিনিয়ত গুম, খুন, হত্যা-আত্মহত্যার শিকার হচ্ছে। কেউবা যৌতুকের দায়ে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। এর দায় সত্যিকার অর্থে আমাদের পরিবারগুলোর। তার কারণ সন্তান পৃথিবী যখন জন্মগ্রহণ করে, তখন সে থাকে পবিত্রতার প্রতীক। নিষ্পাপ শিশু। এই সমাজ, পরিবারই তাকে শেখায় হিংস্রতা, আত্মকেন্দ্রিকতা, স্বার্থপরতা, কদর্যতা। ফলে পরিবারগুলো যদি উদার, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক, বিবেকবোধসম্পন্ন হয় তবে নিশ্চিত অর্থেই সমাজের মাঝে বেড়ে ওঠা কলুষতার প্রায় অর্ধেকই কমে আসবে। আমরা পাবো এক অসাম্প্রদায়িক মানবিক পরিবেশ।
নারীরা প্রতিনিয়ত নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবে, ভাবতে গেলে বা যদি সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে বিবেচনা করা যায়, তবে দেখা যাবে, নারীদের নির্যাতনের চিত্র একটা চক্রে বা সার্কেলে ঘুরছে। একজন মেয়ে যখন অন্যের ঘরে বউ হয়ে যাচ্ছে তখন সে বিভিন্নদিক থেকে নানারকম শোষণ-নিপীড়নের-কটুকথার শিকার হয়। এই বিষাক্ত বা কদর্যতা তার মনে বিশেষভাবে ক্ষত সৃষ্টি করে। সেই ক্ষতের প্রতিশোধ চলে যখন তার ঘরে ছেলের বউ আসে। তিনিও আগের সঞ্চিত কষ্ট লাঘব করতে গিয়ে পুত্রবধূর কোনটা করা উচিত, কোনটা নয়, তার শাশুড়ি কেমন ছিলেনে, তিনি কতটা উদার নানাবিধ কথায় প্রায় দিগ্বিদিক শূন্য করে তোলে আরেকটি নারীকে। ফলে নারীদের এই রূপ কিন্তু জেনারেশন বাই জেনারেশন সার্কেল ওয়াইজ ঘুরতেই আছে। আর এই সার্কেলে বা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার শিকার হচ্ছে কন্যা, স্ত্রী, শাশুড়ি সর্বোপরি সব নারীই।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে আমরা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের বাসিন্দা। ২০৪১ সাল নাগাদ ডিজিটাল থেকে এদেশ স্মার্ট বাংলাদেশে উপনীত হওয়ার তাগিদে কাজ করে যাচ্ছে সরকার ও তার প্রতিনিধিবর্গ। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে একটি সুবর্ণ দিনের আশায় জাতি উন্মুখ হয়ে আছে সামনের দিকে। তবে এই উন্মুখতার উৎসমুখে আছে নারী। তারা যদি দেশকে এগিয়ে নিতে তথা মানবসম্পদকে সুসম্পদে পরিণত করতে পারে, তবে এই দীর্ঘ অপেক্ষা অচিরেই আমাদের হাতে এসে ধরা দিবে। তার জন্য চায় সম্মিলিত উদ্যোগে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
নিজেদের মেধা, মনন, যোগ্যতা, দক্ষতার স্মার্টলি উপস্থাপন করা। সন্তানকে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা চিন্তা ভাবনার ধারক-বাহক করে তোলা। যদি নারীরা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুদিন দেখতে চান তবে আগে নারীদেরই তাদের বদ্ধমূল সংস্কার-কুসংস্কার-প্রথা থেকে সরে আসতে হবে। স্মার্টভাবে পরিবার, সমাজ দেশকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে হবে।