Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের বড়দিন আজ

আজ বড় দিন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীদের জন্য মহাআনন্দের দিন আজ। প্রতিটি ঘরেই বইছে উৎসবের আনন্দধারা। বর্ণিল আলোতে সেজেছে। গির্জা, ঘর-দুয়ার আর অভিজাত হোটেলগুলো। সাজানো হয়েছে গো-শালা, ক্রিসমাস ট্রি আর বহুবর্ণ বাতি দিয়ে।

আজ ২৫ ডিসেম্বর, শুভ বড়দিন। ‘পাপিকে নয়, ঘৃণা করো পাপকে’ আর ‘ঘৃণা নয়, ভালোবাসো’-এই ’সদা দীপ্ত রহে অক্ষয় জ্যোতিময়’ আহ্বান নিয়ে মানুষের ’মনের রাজা’ যিশুখ্রিষ্ট এদিন আসেন এই পৃথিবীতে। তাই এ দিনে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় পালন করছেন তাদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব।

আজ প্রভাতে গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা (খ্রিষ্টযোগ) হয়েছে, সব বাড়িতেই থাকবে কেক, পিঠা, কমলালেবু, পোলাও-বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু ও উন্নতমানের খাবার-দাবারের আয়োজন। বেড়ানো, ধর্মীয় গান, কীর্তন, অতিথি আপ্যায়ন আর পরমানন্দে কাটাবেন তারা। আজ সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন, বেসরকারি টিভি ও রেডিও বড় দিনের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।

বড়দিন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ধর্মীয় সম্প্রদায় পৃথক বাণীতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

খ্রিষ্ট বিশ্বাস মতে, ঈশ্বরের অনুগ্রহে ও অলৌকিক ক্ষমতায় কুমারী মেরি যিনি মুসলমানদের কাছে হজরত মরিয়ম (আ.) হিসেবে পরিচিত কুমারী হওয়া সত্ত্বেও গর্ভবতী হন। ঈশ্বরের দূতের কথামতো শিশুটির নাম রাখা হয় যিশাস, বা ‘যিশু’। আজ থেকে প্রায় ২ হাজার ২০ বছর আগে জেরুজালেমের বেথলেহেম শহরের এক গোয়ালঘরে জন্ম হয় যিশুর। সেই শিশুটিই বড় হয়ে পাপের শৃঙ্খলে আবদ্ধ মানুষকে মুক্তির বাণী শোনালেন।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মানুসারীরাও আজ যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উৎসব এবং প্রার্থনার মধ্য দিয়ে শুভ বড়দিন উদযাপন করবে। সারা পৃথিবীর খ্রিষ্টানরা দিনটি পালন করতে শুরু করছেন নানাভাবে। পুণ্যার্থী, পর্যটকরা যিশুর জন্মস্হান বেথলেহেমে হাজির হচ্ছেন। সেখানে চার্চ অব নেটিভিটির বাইরে বয়স্কাউটরা ব্যান্ড বাজিয়ে মার্চপাস্ট করেছে। অনেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে উৎসব পালন করছেন।

বড়দিনের উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হিসেবে সান্তাক্লজ আসবেন নানা উপহার ও চমক নিয়ে। এজন্য দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় সাজানো হয়েছে খ্রিষ্টমাস ট্রি।

এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়। কাকরাইলের রমনা সেন্ট ম্যারিস ক্যাথিড্রাল চার্চ ও মোহাম্মদপুরের সেন্ট ক্রিস্টিনা গির্জার ভেতরে ও বাইরে নানা রঙের বেলুন, নকশা করা ককশিট, রঙিন কাগজ, জরি ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে কৃত্রিম ‘ক্রিসমাস ট্রি’। গির্জা প্রাঙ্গণে থাকা গাছে ঝোলানো হয়েছে রংবেরঙের বাতি। গির্জার মূল ফটকের বাইরে বসেছে ছোটখাটো মেলা।

বড়দিন উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, খ্রিস্ট ধর্মানুসারে যিশুখ্রিস্ট ছিলেন সত্যান্বেষী, মানবজাতির মুক্তির দূত ও আলোর দিশারি। স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি পৃথিবীকে শান্তির আবাসভূমিতে পরিণত করতে তিনি বহু ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্টিকর্তার মহিমা ও শান্তির বাণী প্রচার করেন। তিনি পথভ্রষ্ট মানুষকে সত্য ও ন্যায়ের পথে আসার আহবান জানান। মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সেবা, ক্ষমা, মমত্ববোধ, সহানুভূতি, ন্যায় প্রতিষ্ঠাসহ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের শিক্ষা দেন।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘আবহমানকাল থেকে এ দেশে সব ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম ও আচার-অনুষ্ঠানাদি স্বাধীনভাবে পালন করে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমি একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানাই।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বাণীতে বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতা অর্জনে অবদান রেখেছেন। আমাদের সংবিধানে সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আওয়ামী লীগ সরকার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। সব শ্রেণি-পেশা, সম্প্রদায়ের জনগণের উন্নয়নই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে আমরা সব সম্প্রদায়ের মানুষের মর্যাদাপূর্ণ ও নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রবর্তন ছিল যিশুখ্রিস্টের অন্যতম ব্রত। মহামতি যিশু বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। তাঁর জীবনাচরণ ও দৃঢ় চারিত্রিক গুণাবলির জন্য মানব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।

খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বীর মহা উৎসব বড়দিনে সকলের জন্য রইলো শুভেচ্ছা।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ