বেগম রোকেয়ার আদর্শে জেগে উঠুক নারীসমাজ
একটি দেশ, একটি জাতির পরিবর্তন সূচিত হয় সে দেশের জনগণকে কেন্দ্র করে। মূলত তরুণ সমাজ দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার। ফলে তাদের হাত ধরেই দেশের উন্নয়নের গতিধারা প্রবাহিত হয়। কিন্তু এই তরুণ সমাজই যদি মস্তিষ্কের বিকারগ্রস্ততায় ভোগে তাহলে জাতির জন্য নিঃসন্দেহে দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে।
আমরা জানি, আমাদের সমাজে নারীরা সবদিক থেকে নির্যাতনের শিকার। পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রে নারী কোনোদিক থেকেই নিরাপদ নয়। দেশের গণ্ডিতে নারী সহিংসতার চিত্র দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এই চিত্র কেনোই বা বৃদ্ধি পাবে না সে সম্পর্কেও সন্দেহ! কারণ যে দেশের তরুণ সমাজের মস্তিষ্কের অসড়তা রয়েছে, যাদের মধ্যে জীবন সম্পর্কে সঠিক ধারণা নেই, নারীর প্রতি শ্রদ্ধা নেই তাদের থেকে এই দেশ কী-বা আশা করতে পারে!
৯ ডিসেম্বর নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখওয়াত হোসেনের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হলো। প্রতি বছরই ৯ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে দিবসটি পালিত হয়। তবে প্রশ্ন থেকে যায়, দিবসটি পালনের মধ্যে দিয়ে কি আদৌ আমাদের সমাজের চিত্র পাল্টানো গেছে? সমাজের মাঝে গজিয়ে ওঠা মোল্লাতন্ত্র, গোঁড়ামি, নারীকে সবসময় পায়ের তলায় পিষ্ট করে রাখার সে চিত্র কতটুকু বদল ঘটেছে?
নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বহু আগে নারীকে ঘরের বাইরে বের করে আনার তাগিদ দেন। নারী সুশিক্ষা গ্রহণ করে যাতে দেশের এবং দশের কল্যাণে মনোনিবেশ করতে পারেন সেলক্ষে নারী শিক্ষার প্রসার বৃদ্ধিতে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখেন। সমাজে নারীর অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তির জন্য তিনি নারী জাগরণের প্রতি আহ্বান জানান।
পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে মানব ধর্মকে প্রাধান্য দিতে হবে। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টি হলে তবে ভবিষ্যতে নারীর মুক্তি হয়তো সম্ভব।
বেগম রোকেয়ার সেই উদ্যোগের ফলে কিঞ্চিৎ হলেও নারীর মনে ধাক্কা দিয়েছিল। এর ফলস্বরূপ নারীরা শিক্ষায় অগ্রসর হয়েছে। সময়ের সঙ্গে নিজেদের পরিবর্তন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু তবু নারীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত সম্মান, মান, মর্যাদা, মূল্যায়ন পাচ্ছে না। এর কারণ সমাজ মানসিকতার অন্ধত্ব।
খুব আশ্চর্য হতে হয় যখন নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন দিবস পালিত হচ্ছে কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু বিকৃত তরুণ সমাজ তাকে কটুকথা বলছে। বাজে মন্তব্য করছে। তাদের এই হীন মানসিকতায় বলে দেয় এ সমাজকে পরিবর্তন হতে হলে আগে সমগ্র মানবের আত্মিক বন্ধত্ব দূর করতে হবে। যিনি সমাজকে বদলের জন্য, নারীকে এগিয়ে নিতে, নারী জাগরণে সাহায্য করেছেন সেই মহয়সী রমণীর প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় তরুণ সমাজের এমন বিকৃত মন্তব্য নারীকে অশ্রদ্ধার নামান্তর। ফলে নারীকে সম্মান করতে হলে প্রত্যককে নারীকে মন থেকে শ্রদ্ধা, ভক্তি করতে হবে। নতুবা মা দিবস, কন্যা দিবস, নারী দিবস, রোকেয়া দিবস কোন তাৎপর্য বহন করবে না।
আমাদের সমাজে নারী জাগরণে আগে এই হীন মানসিকতা দূর করতে হবে। তরুণ সমাজ যেহেতু দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার তাই তাদের মনের এরূপ কলুষতা সমাজের জন্য ভয়াবহ অশনি সংকেত! তরুণ সমাজকে বদলাতে হলে আমাদের পরিবারগুলোর মধ্যে গজিয়ে ওঠা সংস্কার দূর করতে হবে। নারীর সম্মান যদি পরিবার থেকে শুরু না হয় তবে সেই সন্তানেরা তো একই মানসিকতায় বেড়ে উঠবে। তাই বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জরুরি নারী জাগরণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা। পরিবারে, সমাজে, রাষ্ট্রে মানব ধর্মকে প্রাধান্য দিতে হবে। মানুষের প্রতি মমত্ববোধ সৃষ্টি হলে তবে ভবিষ্যতে নারীর মুক্তি হয়তো সম্ভব। নতুবা মিছিল, মিটিং, দিবস পালন করলেও নারীর প্রতি সম্মান-মর্যাদা বাড়বে না। তাই মনের দৈন্য দূর করে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।