পদক জয়ীরা কেন পদক কামড়ে ধরেন?
মাইকেল ফেল্পস হোক কিংবা রাফায়েল নাদাল, অলিম্পিকে পদক জয়ের পর নিশ্চয়ই তাঁদের পদকটি কামড়াতে দেখেছেন! অলিম্পিয়ানদের এমন পোজের ছবি পেলে খুশি হন চিত্রগ্রাহকরাও।
অলিম্পিকের আসরে আমরা সকলেই এই বিষয়টি সব সময় দেখে থাকি। প্রতিযোগিতায় পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে বিজয়ী ক্রীড়াবিদেরা নিজেদের পদক কামড়ে ধরেন। ব্যাপারটা খুবি অদ্ভুত, সন্দেহ নেই। কিন্তু কেন? অলিম্পিকের পদক নিশ্চয়ই খাওয়ার কোন বস্তু নয়! তবে কেন ক্রীড়াবিদেরা এই পদক কামড়ে ধরেন?
টোকিও অলিম্পিকে পদক কামড়ে ধরা খুব সাধারণ দৃশ্য। প্রায় প্রতিটি ইভেন্টেই বিজয়ী ক্রীড়াবিদদের এই কাজটা পরিণত হয়েছে ‘আবশ্যিক’ বিষয়ে। ব্যাপারটি লক্ষ করেই কিনা, টোকিও অলিম্পিকের অফিশিয়াল টুইটার পেজে একটা ‘সাবধান বাণী’ পোস্ট করা হয়েছে—‘আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এটা নিশ্চিত করতে চাই যে অলিম্পিকের পদক কোন খাওয়ার বস্তু নয়।’
আসলে ব্যাপারটি অন্য জায়গায়। অলিম্পিকের পদকে কামড় দেওয়ার চলটি এসেছে প্রাচীন সময় থেকে। একটা সময় ছিল যখন সোনার মুদ্রা আসল নাকি নকল, সেটি পরীক্ষা করতে লোকজন সেটিতে কামড় দিয়ে দেখত। সোনা সব সময়ই মানুষের দাঁতের চেয়ে নরম। আসল সোনায় কামড় বসালে সেটিতে একটু হলেও দাগ পড়তে বাধ্য। কিন্তু সেটি যদি নকল হয়, তাহলে কামড় দেওয়ার পর দাঁতে ব্যথা করবে—মূলত এমন রীতি থেকেই অলিম্পিকে পদকে কামড় দেওয়ার ব্যাপারটি এসেছে। এটি অনেকটা এমন যে খেলা জিতে পাওয়া পদকটি আসল না নকল, সেটি কামড় দিয়ে পরখ করে দেখেন ক্রীড়াবিদেরা।
অলিম্পিকের অফিশিয়াল টুইটার পেজ ক্রীড়াবিদদের স্বাস্থ্যবিষয়ক শঙ্কা থেকেই আরও লিখেছে, ‘এবারের অলিম্পিকের পদকগুলো ইলেকট্রনিকস পণ্য রিসাইকেল করে তৈরি করা হয়েছে। এই ইলেকট্রনিকস পণ্যগুলো জাপানের সাধারণ মানুষ দান করেছেন। সুতরাং এটা কামড় দেওয়া উচিত নয়। তবে আমরা জানি, এরপরেও অনেকেই কাজটা করবেন!’
অলিম্পিক ইতিহাসবিদদের সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব অলিম্পিক হিস্টোরিয়ানসের নির্বাহী সদস্য ডেভিড ওয়ালিচেনস্কি সিএনএনকে বলেছেন, ‘এটা বিশেষ কোন বিষয় নয়। খুব সম্ভবত ক্রীড়া ফটোসাংবাদিকদের অনুরোধেই এটা শুরু হয়েছিল। তাঁরা এটিকে দারুণ একটা ছবির বিষয় হিসেবে দেখে থাকেন। অলিম্পিকে ফটোসাংবাদিকেরা ক্রীড়াবিদদের তাই এভাবে পোজ দিতে অনুরোধ করেন। আমি মনে করি না ক্রীড়াবিদেরা এমনটা নিজে থেকে করেন।’
অলিম্পিকের সোনার পদকগুলোতে মূলত ১.৩৪ শতাংশ খাঁটি সোনা থাকে। বাকিটা ইমিটেশন। এর মধ্যে রিসাইকেল করা উপাদানও যুক্ত হয়। ২০১৬ সালে রিও অলিম্পিকে রিসাইকেলকৃত উপাদান যুক্ত করা হয়েছিল পদক তৈরির সময়।
ফোর্বস সাময়িকীর লেখক অ্যান্থনি ডি মার্কো হিসাব করে দেখিয়েছিলেন। সোনা, রিসাইকেলকৃত উপাদান মিলিয়ে অলিম্পিকে একটা ‘সোনা’র পদকের মূল্যমান ৫৬৪ মার্কিন ডলারের বেশি নয়।
তবে পদক কামড়াকামড়ির অভ্যাস কিন্তু কখনো কখনো দুর্ভাগ্যও বয়ে আনতে পারে। ২০১০ সালে জার্মানির লুজার ডেভিড মোয়েলার তার রৌপ্যপদকটিকে ফটোগ্রাফারদের অনুরোধে কামড় দিতে গিয়ে এতটাই জোরে কামড় দিয়েছিলেন যে তার দাঁতের এক কোণা তাতে ভেঙেই গিয়েছিলো!
সোনাজয়ী অ্যাথলেটরা বিজয়ীর মঞ্চে দাঁড়িয়ে সোনার পদকে কামড় বসাচ্ছেন, এমন ছবি আলোকচিত্রশিল্পীরা বেশি পছন্দ করেন। নামী ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও এই ছবিই দেখা যায়। এ ধরনের ছবি বেশি জনপ্রিয় বলে মনে করেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
এভাবেই হয়তো রীতিমতো চলমান থাকবে পদকে কামড় বসানো। তবে এই প্রথাটি কিন্তু মন্দ নয় এ ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন?