Skip to content

২৯শে মে, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ১৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সম্পর্ক মূলত কী?

এটা কি একটি পারিপার্শ্বিক আকর্ষণ, নাকি পিতা-মাতা থেকে চলে আসা জিনেটিক একটি প্রতিফলন। তাই যদি হতো তবে  সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি মানুষকে একটি সম্পর্ক কিভাবে এক নতুন বাঁধনে বেঁধে ফেলতে পারে। তাহলে কি আমরা বলতে পারি না সম্পর্ক মূলত একটি পারস্পরিক চর্চা যাকে পরিচর্যার মাধ্যমে আমরা একটি নতুন রূপ দিয়ে থাকি। পূর্বেই বলেছি সম্পর্কের কোনো শ্রেণিবিভেদ নেই; কিন্তু সম্পর্কের বিভিন্ন নামকরণ হয়। এই সম্পর্কেই আমরা কখনো হয়ে উঠি স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা বিভিন্ন আত্মীয়। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্পর্কগুলোও হয়ে ওঠে ভিন্ন। কখনো কাছের মানুষ দূরে চলে যায় আবার কখনও সম্পূর্ণ অচেনা মানুষ হয়ে ওঠে কাছের।
সম্পর্ককে কী বলা যায়?
সম্পর্ক একটি ফুলের মালা যা শুকিয়ে গেলে নষ্ট হয়,  যা ছিঁড়ে গেলেও নষ্ট হয় আবার ধুলো লাগলে কিংবা মলিন হলেও আমরা তা বুঝতে পারি। তাহলে কি বলা যায় না, সম্পর্ক অনেক সংবেদনশীল। যাকে ছোঁয়া বা স্পর্শ করা যায় না; কিন্তু যা পুরাতন কিংবা নষ্ট হয়ে যাবার ভয় থাকে। সম্পর্ক যেন একটি উপলব্ধি। মানুষ তার নিজের গন্ডি থেকে তা রচনা করে থাকে। সম্পর্ক সম্পূর্ণ অচেনা কিছু মানুষকে জীবনের অংশ করে তোলে। কখন যে এই মানুষগুলো নিজের অস্তিত্বের অংশ হয়ে যায়, মানুষ তা বুঝতেও পারে না। মানুষে মানুষে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ জীবন পথের উঁচুনিচু রাস্তাগুলো পাড় করতে যে লোকগুলো এগিয়ে আসে তাদেরকেই হয়তো দুহাতে জড়িয়ে নিয়ে মানুষ গড়ে তোলে নতুন সম্পর্ক। সম্পর্কের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। এটি কখন কার সাথে কিভাবে গড়ে উঠবে মানুষ তা নিজেও বলতে পারে না। 
সম্পর্ক মূলত কিসের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে?
একটি সম্পর্ক মূলত কতগুলো উপাদানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। কিংবা বলা যায় যে একটি সম্পর্কের কাঠামো মূলত কতগুলো উপাদানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে। উপাদানগুলো নিম্নরূপ :
১। সততা : সততা একটি মানবিক গুণাবলি। এটি একজন মানুষকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। সততা একটি অত্যন্ত সুন্দর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। যা একটি মানুষকে অন্যদের কাছে সম্মানিত করে তোলে।
২। ওয়াদা বা কথা দিয়ে কথা রাখার প্রবণতা : ওয়াদা একটি কঠিন শব্দ যার গুরুত্ব অনেক এই মানব জীবনে। যে-লোক কথা দিয়ে কথা রাখে না, সে কখনো নিজেকে একজন ভালো মানুষ বলে দাবি করতে পারে না। যে- কোনো ধরনের সম্পর্ক ওয়াদার মাধ্যমে গড়ে ওঠে।
৩। বিশ্বস্ততা : যে-কোনো সম্পর্কের মাঝে বিশ্বস্ততা থাকা জরুরি।  অন্যথায় কোনো সম্পর্কই টিকে থাকে না। বিশ্বস্ততা অনেকটা দায়বদ্ধতার সাথেও সম্পর্কিত। তাই বর্তমান সমাজে এই বিশ্বস্ততায় খুব সহজেই চির ধরতে দেখা যায়।
৪। বন্ধুত্ব : বন্ধুত্বের মতো মিষ্টি সম্পর্ক বোধহয় আর কোথাও নেই। বন্ধুত্ব এমন একটি বাঁধন যা সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির বা আচরণের মানুষের সাথে গড়ে উঠতে পারে নিমিষেই। বন্ধুত্ব খুব সহজেই দুটি মানুষের মাঝে প্রাণের সখ্য গড়ে তোলে এবং তা আলোয় আলোয় ভরিয়ে দেয়। 
৫। দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতা : দায়িত্ব যা কিনা একটি ভারি শব্দ। প্রতিটি মানুষই এর ভার বহন করতে কিছুটা কুণ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু যে-কোনো সম্পর্ক গড়তে গেলেই এই শব্দটি চলে আসে। যে-কোনো সম্পর্কের ভিত্তি যেন এই শব্দটির সাথে জড়িত। তাই যে মানুষের এই দায়িত্ব নেয়ার ক্ষমতা বেশি থাকে সে খুব সহজেই মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে থাকে।
৬। বোঝার ক্ষমতা : একটি সুন্দর সম্পর্ক অনেকটা নির্ভর করে একে অপরের বোঝার ক্ষমতার উপর। যখন একজন অন্যজনের প্রয়োজন সুবিধা-অসুবিধা, রাগ-অনুরাগ বিভিন্ন অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করে এবং কিছুটা বুঝতে পারে তখনই একটি সুন্দর সম্পর্কের সৃষ্টি হয়।
৭। স্বচ্ছতা : মনের দুয়ার যার স্বচ্ছ কাচের মতো তার দৃষ্টি হয় সুন্দর ও মলিন। আর এমন একটি বৈশিষ্ট্য যার মধ্যে থাকে সে হয়ে যায় অনন্য।
৮। ভালোবাসা :  ভালোবাসা শব্দটি একটি অনুভূতির সাথে জড়িত। পৃথিবীতে মনে হয়, কেবল মানুষই আছে যে-কিনা ভালোবাসার অনুভূতিগুলো ব্যক্ত করতে জানে সুন্দর সুগভীর শব্দচয়নে।

একটি সম্পর্ক-বৈবাহিক সম্পর্ক
বিয়ে মূলত একটি সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা। যা কিনা সমাজ ২টি মানুষকে দিয়ে থাকে এবং এর মাধ্যমে ২জন মানুষ একসাথে থাকার অঙ্গীকার দিয়ে থাকে। এর সাথে দেশের কিছু আইনও জড়িত থাকে। যা কিনা একে অপরের প্রতি একটি দায়বদ্ধতার সৃষ্টি করে। এর ফলে ২টি মানুষ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয় এবং কিছু দায়িত্বে জড়িয়ে পড়ে একে অপরের প্রতি।
এখন প্রশ্ন চলে আসে বৈবাহিক সম্পর্কে না গিয়ে বৈবাহিক সম্পর্ক ভালো/ একত্রে থাকার প্রবণতা ভালো। এটি নিয়ে বহু বিতর্ক রয়েছে।
লিভিং রিলেশনসিপকে খুব খারাপ বলা যায়, ব্যাপারটা তা নয়। যখন ২টি মানুষ ওয়াদাবদ্ধ হয় কিন্তু নিজেদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানায় তখন এধরনের সম্পর্ক হতেই পারে। কিন্তু আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এখনও এতটা উদার নয়। তাই এক্ষেত্রে সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া যায় না। এবং নিজেদের বাচ্চাদের জন্য এটি একটি পরিচয় সঙ্কট হয়ে দাঁড়ায়। যা কিনা কোনো বাচ্চার মানসিক বিকাশের জন্য ক্ষতিকারক।
সর্বোপরি বলা যায়, সম্পর্ক এবং তার রেশ মানুষের মনে রয়ে যায় আজীবন। সম্পর্ক মূলত এক অদ্ভুত উপলব্ধিরই নাম।

 

মডেল : সোহানা নদী ও জাহিদ চৌধুরী 
ছবি : স্যাম রুবেল

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ