Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গাড়িচাপায় রুবিনার মৃত্যু: হোক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি

বাংলাদেশের মানুষ সাক্ষী হলো আরও একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার। আসলে এটা দুর্ঘটনা হিসেবে কতটা মেনে নেওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে সত্যিই সন্দেহ রয়েছে। বরং এঘটনাকে হত্যাকাণ্ড বলাই শ্রেয়। এটা স্পষ্ট যে, দিনে দিনে মানুষ পাশবিক হয়ে উঠছে! মানুষের মাঝে ন্যূনতম মূল্যবোধটুকুও নষ্ট হয়ে গেছে।

মানুষ এখন স্রেফ একটি যান্ত্রচালিত দানবে পরিণত হয়েছে। জীবনের স্বাভাবিকতা যেন বিলুপ্তির পথে। আমাদের সমাজ আজও মানুষকে মেপে চলেছে তার ডিগ্রি দিয়ে। পুঁথিগত বিদ্যার ঝুলি কত ভারী, তা দিয়ে। আরও একটি বিষয় একইসঙ্গে ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত, টাকা। অর্থাৎ যার কাছে যত অর্থ আছে, সমাজে তিনি তত নামিদামি, প্রভাবশালী ব্যক্তি। কিন্তু কিছু বিকারগ্রস্ত টাকাওয়ালা প্রভাবশালী ব্যক্তির দম্ভের শিকার হয় সাধারণ মানুষ। গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রাইভেট কারের নিচে পড়ে রুবিনা আক্তার নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।

যদিও আমাদের দেশে বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা যেন কোনো ব্যাপারই নয়। এটাই যেন স্বাভাবিক মৃত্যুর খাতায় নাম লিখিয়েছে! বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কোনো মানুষই জানে না আসলেও সুস্থ শরীর নিয়ে তিনি আবার ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা! এক আজব সমাজ, রাষ্ট্রের বাসিন্দা আমরা। যার আপনজন চলে যাচ্ছে সেই কেবল বেদনা বহন করে চলছেন। আর সবাই একদিন-দুদিন আলোচনা করলেও তৃতীয়দিন ভুলে যাচ্ছে। দিনে দিনে দেশ এক মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে। রুবিনাদের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দায় কার?

দেবর নুরুল আমিনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে রুবিনা আক্তার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বাসা থেকে হাজারীবাগে বাবার বাড়ি যাচ্ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বিপরীতে টিএসসি অভিমুখী সড়কে একটি প্রাইভেট কার পেছন থেকে তাদের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে নুরুল আমিন মোটরসাইকেলসহ এক পাশে ছিটকে পড়েন। রুবিনা গাড়ির নিচে চাপা পড়েন।

এ সময় গাড়ির বাম্পারে তার শাড়ি আটকে যায়। চালক গাড়ির নিচে আটকে যাওয়া রুবিনাকে নিয়ে বেপরোয়া গতিতে টিএসসি হয়ে নীলক্ষেতের দিকে যান। নীলক্ষেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তোরণের কাছে গাড়িটি আটকে রুবিনাকে জীবিত উদ্ধার করেন পথচারীরা। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি মারা যান। পথচারীরা যখন রুবিনাকে উদ্ধার করে, ততক্ষণে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে ছিন্নভিন্ন হয় তার শরীর। নারীর এমন মৃত্যু শুধু একজন মানুষের মৃত্যু নয় এটা মানবতার মৃত্যু, জাতির বিবেকের মৃত্যু। মানুষ কতটা দাম্ভিক হলে এমন পিশাচসম কাজে লিপ্ত হতে পারে?

একজন নারী গাড়ির চাকায় পিষ্ট হচ্ছে আশেপাশের লোকজন তাকে ধাওয়া করছে আর তিনি তত জোরে গাড়ি চালিয়ে চলেছেন। তার নির্বিকার মনুষ্যত্ব যদি জাগতো হয়তো রুবিনা বেঁচে যেতেও পারতেন। আমাদের সমাজের বিবেকশূন্য এসব মানুষ সমাজকে কলুষিত করছে। এই ধরনের ঠাণ্ডা মাথার খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যেন মানুষের বিবেক যদি মরেও যায় ন্যূনতম আইনকে অন্তত তারা ভয় করে।

শুধু এক রুবিনায় নয় প্রতিদিন পথে মারা পড়ছে অসংখ্য মানুষ। এখনই এর নিয়ন্ত্রণ আনা জরুরি। বহুদিন ধরে সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করার কথা বলা হলেও তা নিশ্চিত করা যায়নি। এখনো সময় আছে দেশ রসাতলে যাওয়ার আগে অন্তত মানুষকে বাঁচতে সহয়তা করুন। মানুষের হৃদয়ের হাহাকার কখনোই দেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে না। ফলে সড়ক দুর্ঘটনায় আর কোনো তাজা প্রাণ এভাবে অকালে না ঝরুক। মানুষের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত হোক। কঠোর আইন প্রয়োগের মাধ্যমে রাস্তায় চলাচলকৃত সব পরিবহন এবং চালকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে। রাস্তায় রুবিনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে পাশবিকতা মুক্ত হোক আমাদের প্রিয় স্বদেশ।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ