Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্তানের সাফল্যে আবেগ প্রকাশে সংযত হই

মানুষ মাত্রই আবেগপ্রবণ তবে আবেগ কিভাবে প্রকাশিত হচ্ছে, সে বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি। কেননা একই আবেগ ব্যক্তি ভেদে আলাদা অর্থবহন করতে পারে। ২৮ নভেম্বর এসএসসির পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এসএসসির মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৫ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৪৬ জন। ছাত্রের সংখ্যা ১ লাখ ২১ হাজার ১৫৬। এবার গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমে ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে। পাসের হার কমেছে ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ ছিল।

প্রত্যেক বছরই দেখা যায়, ফল প্রকাশের পর আত্মীয়-স্বজনের অতি আবেগ, উচ্ছ্বাস প্রকাশ পায়। তবে সবাই যে আনন্দে বিগলিত হন এমন নয়। যুগের চাহিদায় জিপিএ-৫-এর কাটতিই বেশি। ফল বলতেই সবার মাথায় একযোগে খেলে যায় জিপিএ-৫-প্রাপ্ত বাদে বাদবাকি ফল যেন ফলের মধ্যে গণ্যই হয় না। এদিকে যেই সন্তানেরা জিপিএ পাচ্ছেন তাদের থেকেও দেখা যায় পরিবার বা অভিভাবক শ্রেণি বিষয়টিকে নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করেন। যা চোখেও লাগে অনেক সময়। কথা হলো, সন্তানের গৌরবান্বিত অর্জনে অবশ্যই পরিবারবর্গ খুশি হবেন কিন্তু সেই খুশি যেন অন্যের দুঃখ-কষ্টের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়।

আমাদের সমাজে বর্তমানে একটি শ্রেণি গজিয়ে উঠেছে, যারা সন্তানের ভালো ফল অর্জনকে বেশ গৌরবের সঙ্গে বলে বেড়াতে পছন্দ করেন। কোথাও যেন মানসিকভাবে এক ধরনের বিকৃতি আমাদের পেয়ে বসেছে। সন্তান ভালো ফল অর্জন করেছে বলেই সে বা ভালো ফল অর্জনকারী বাদে অন্য শিক্ষার্থীরা জীবনে ভালো করতে পারবেন না, এ ধারণা একেবারেই যুক্তিহীন। কিন্তু এই যুক্তিহীন ধারণাকেই একশ্রেণি শোষণের হাতিয়ার বানায়। অপেক্ষাকৃত ভালো ফল নাহলে শিক্ষার্থী তো বটেই এমনকি পরিবার, পরিজনদেরও করুণার চোখে দেখার মানসিকতা গড়ে উঠেছে। এই অপসংস্কৃতির চর্চা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপথে ঠেলে দেওয়ার জন্য একমাত্র কারণ হতে পারে। তাই ফল অর্জনকে নিয়ে অতি উচ্ছ্বসিত না হই।

লক্ষ করলেই দেখবো যে, এসএসসি, এইচএসসি কিংবা ভর্তিপরীক্ষা, চাকরি পরীক্ষার ফলের সঙ্গে জীবনকে খুব বেশিরভাবেই সম্পৃক্ত করে ফেলা হয়। ভালো রেজাল্ট অবশ্যই সাধুবাদ যোগ্য। উৎসাহ, অনুপ্রেরণার অংশ। কিন্তু তা যদি হয় কাউকে আক্রমণ করে তবে তা নিশ্চিত অর্থেই মনুষ্যত্ব, বিবেকের প্রশ্ন তোলে!

তবে এসএসসি পরীক্ষার ফল বৃহত্তর পর্যায়ে জীবনের প্রথম অর্জন শিক্ষার্থীদের। তাই বিষয়টি নিয়ে বেশ পরিকল্পনা, আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত সবই বিষ মনে রাখা প্রয়োজন। অতি উচ্ছাস, আনন্দ প্রকাশ অন্যের ওপর যেন অত্যাচার হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে নজর দিতে হবে। যেকোনো কাজে নমনীয়তাই শ্রেয়। ফলে রেজাল্ট প্রকাশের ক্ষেত্রেও নমনীয় হলে নিজের আনন্দটাও ভাগাভাগি হবে আবার অন্যের সন্তানকেও ছোট করা হবে না। ছোটবয়সে প্রথমেই ধাক্কা খেলে অনেকসময় শিক্ষার্থীরা সামলে উঠতে পারে না। এর ফল হয় ভয়াবহ। পড়াশোনায় অনীহা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আত্মহত্যাপ্রবণ মানসিকতাও গড়ে উঠতে পারে। খারাপ সঙ্গ লাভ করতে পারে।

যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সন্তানের ফল পরিবারের জন্য যেন একধরনের সুনাম বহন করে আনে বলেই বিশ্বাস করা হয়। আর এই ধারণা পোষণ করে অনেক অভিভাবক সন্তানকে খুব চাপের মুখে রাখেন। ফল সন্তোষজনক নাহলে তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলেন। বকাঝকা, কটুকথা বলেন। যা সন্তানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। বিধায় যদি সন্তান মনোমতো বা আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থও হয়, তবে তাকে অনুপ্রাণিত করুন। যেন পরবর্তী পদক্ষেপে দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে যাওয়ার মনোবল সঞ্চয় করে। ভালোবেসে পৃথিবী জয় করা যায় ফলে সন্তানের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য আপনাকেও ভালোবাসাই প্রদান করতে হবে। শুধু ধমক বা শাসনের ওপর রাখলে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাই সন্তানের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি না করি যা তার পূর্ণ বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে।

তাই আসুন সন্তানের ফলাফলকে কেন্দ্র করে তার ওপর চাপসৃষ্টি না করি। সবাইকে নমনীয়ভাবে সাধুবাদ জানাতে চেষ্টা করি। আর যারা কিঞ্চিৎ পিছিয়ে পড়েছে তাদের উৎসাহ প্রদান করি। যাতে পরবর্তীকালে আরও দ্বিগুণ উৎসাহ, অনুপ্রেরণা নিয়ে এগিয়ে যেতে পারে।

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ