নারীদের অনিয়মিত হৃৎস্পন্দনের ঝুঁকি বেশি থাকে
সাধারণত হৃদযন্ত্রের কিছু কিছু অসুখে বুক ধড়ফড় করতে পারে। আবার হরমোনজনিত কিছু অসুখে অথবা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ভয় থেকেও বুক ধড়ফড় করতে পারে। এর কারণ অনেক। যেমন, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন বা অনিয়মিত হার্ট-বিট মেয়েদের বেশি হয়ে থাকে, থাইরয়েডের সমস্যা তাঁদের বেশি হয়। আর এ থেকে হৃৎস্পন্দনে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে অর্থাৎ রক্তের সুগার কমে গেলে, রক্তশূন্যতা থাকলে, রক্তচাপ কমে গেলে, জ্বর হলে এমনকি পানিশূন্যতা হলেও বুক ধড়ফড় করতে পারে। রোগীর অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন হলে, হার্ট-অ্যাটাক হলে, হার্টে ও রক্তনালীতে ব্লকেজ থাকলে, হার্ট ফেইলিউর হলে, হার্টের ভাল্বে সমস্যা হলে এবং হৃদযন্ত্রের মাংসপেশিতে সমস্যা হলে বুক ধড়ফড় করতে পারে।
হরমোনের ওঠানামা, মেনোপজের পর বুক ধড়ফড়ানি বাড়ে। আমাদের দেশে মেয়েদেরই বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ বেশি দেখা যায়, যা থেকে পরবর্তী সময়ে হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে। আবার গর্ভকালীন অবস্থায়ও এ সমস্যা হতে পারে। রক্তশূন্যতা এ দেশে মেয়েদেরই বেশি দেখা যায়, তার কারণেও বুক ধড়ফড় করে। তাই দেখা যাচ্ছে, নারীদের বুক ধড়ফড়ানির সমস্যাটি একেবারে অপরিচিত নয়। তাই এটা অবহেলা করাও উচিত নয়।
বুক ধড়ফড় কোনো অসুখ ছাড়াই স্বাভাবিক কারণে যেমন- ব্যায়াম করলে, অতিরিক্ত পরিশ্রম করলে, প্রেগন্যান্সির সময় হতে পারে। অথবা অতিরিক্ত চা পান বা কফি পান বা মদ্যপান করলেও বুক ধড়ফড় করতে পারে। বুক ধড়ফড় যদি অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে হয়, তবে দুশ্চিন্তা পরিহার করা উচিত। সে ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকমের যোগ-ব্যায়াম ও অ্যারোমা থেরাপি নেওয়া যেতে পারে।
বুক ধড়ফড় করলে কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখুন। এটা কি সব সময়ই হয়, নাকি বিশেষ কোনো সময়ে? বিশ্রামের মধ্যেও এ সমস্যা হয় কি না, আপনি কোনো ওষুধ যেমন হাঁপানির ওষুধ বা ইনহেলার ব্যবহার করছেন কি না ইত্যাদি জানতে হবে। কেননা, অনেক ওষুধের প্রভাবেও বুক ধড়ফড়ানি হতে পারে।
এই সমস্যার পাশাপাশি খুব ঘাম, ওজন হ্রাস, হাত কাঁপুনি থাকলে থাইরয়েড পরীক্ষা করাতে হবে। মাসিক অনিয়মিত হতে থাকলে চিকিৎসককে জানান। মেনোপজের সময় ও পরে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। দুর্বলতা, মাথা ঘোরা থাকলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা দেখে নিতে হবে। বুক ধড়ফড়ানির এমন বিস্তারিত বর্ণনা আপনার চিকিৎসককে রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করবে।
তেমন কোনো কারণ পেলে অনেক সময় দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপকেও এ জন্য দায়ী করা হয়। সে ক্ষেত্রে ক্যাফেইনজাতীয় পানীয় পরিহার করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন, শ্বাস-প্রশ্বাসের কিছু ব্যায়াম হৃৎস্পন্দন ঠিক করতে সাহায্য করে, যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন, দুশ্চিন্তা কমান, যোগব্যায়াম করুন।
এ ছাড়া কিছু কিছু পরীক্ষা করে বুক ধড়ফড়ের কারণ বের করা যায়। যেমন- ইসিজি, ইকো-কার্ডিওগ্রাম, ইটিটি, থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা ও ইপি পরীক্ষা। এ ছাড়া যদি বুক ধড়ফড়ের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ পাওয়া যায় তবে সে অনুসারে চিকিৎসা করতে হবে।