Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেই যে একটা নোংরা স্পর্শ!

পথে চলতে চলতে কখনো একটা স্পর্শ মনে পড়ে। কেমন একটা নিদারুণ আবেগহীন নোংরা একটা স্পর্শ ছিল, সে-দিন পাবলিক বাসের ভেতরে। সেই থেকে বাসে আর উঠতে ইচ্ছা করে না। বাস বাদ দিয়ে রিকশায় চলাচল করাটা হয়তো বেশি নিরাপদ। কিন্তু রিকশায় উঠেও একদিন হঠাৎ মনে হলো, রিকশাচালক হয়তো হুড তোলার বাহানায় একটা কুৎসিত রকমের স্পর্শ করল শরীরে। মনটা খারাপ হয়ে গেল একেবারেই। এর পর ঠিক হলো, না-বাস, না-রিকশা, না কোনো পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। এখন থেকে প্রাইভেট বাইক বা গাড়িতেই চলব। 

 

খরচের বিষয় চলে এল স্বাভাবিক ভাবেই।এ-ছাড়া, সমাজের একটা তকমা আছে, মেয়েদের গণপরিবহনে ওঠা ঠিক না, তার্ ওপর নতুন আপত্তি দাঁড়ালো, অপরিচিত এক পুরুষের বাইকে চড়ে কী করে একটা মেয়ে ঢাকার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে চলে যেতে পারে? আরে! মেয়েদের তো একজন অপরিচিত পুরুষের কাছেই চট করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়, তখন এই সব মন্তব্য কোথায় থাকে? 

 

একটা স্পর্শ ! সেই যে এককালীন একটা স্পর্শ । ছোট বেলায় অথবা বড় বেলায়, রাস্তায় কিংবা ঘরে। এই স্পর্শ কি কখনো ভুলে থাকা যায়? মমতার স্পর্শ যেমন মানুষকে জড়িয়ে ধরে রাখে, বাঁচতে সাহায্য করে। একটা নোংরা স্পর্শ তার উল্টো। প্রতিনিয়ত স্পর্শিতকে মেরে ফেলতে থাকে। এর পরিণতি বোঝাই বোঝাই মানসিক পীড়া, কত দিন সহ্য করা যায় এটা! 

 

যদিও মানুষের কাজ হচ্ছে প্রতিনিয়ত নিজেকে নতুন করে বেঁচে থাকায় অনুপ্রাণিত করা। সব অবসাদ, ক্ষত, ব্যাধি থেকে বের হয়ে নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস জোগানো, জীবন তো এমনই। কিন্তু  এই যে একটা ভালোবাসাহীন নিরাবেগ আর অবাঞ্ছিত একটা স্পর্শের স্মৃতি । এটা কখনো মুছে যায় না কেন! কেন বারবার স্বপ্নে ফিরে আসে এই ক্ষতগুলো। কেন হঠাৎ কোনো কাজের মাঝে এই স্পর্শ নিজের শরীরকেই ঘৃণা ও আতঙ্কে কাঁপিয়ে দেয়?

  

এর কারণ কী নারীরা কখনো  ন্যায্য বিচারের মুখ দেখতে পায়নি বলে? যখন এই সব অন্যায় স্পর্শের বিরুদ্ধে নারীরা যতবার মুখ খুলেছে, সাহস করে কর্তৃপক্ষের কাছে যখন গিয়েছে, তখন কি বারবার তাকে খালি হাতে ফেরত আসতে হয়নি? 

নারীরা মেনে নিতে শিখেছে। যাবতীয় কুদক্তি মেনে নেওয়া মেয়েকেই লোকে সম্মানিত নারী বলে ভূষিত করেছে।  ভালো-খারাপের একটা সংজ্ঞা বানিয়ে সমাজ সেই বাক্সে জনবল নিয়োগ করছে। আর এই সব অবমাননা নারী সহ্য করে নিচ্ছে, প্রতিবাদ করছে না তার পরিবারের ভালোর জন্য, তার সামাজিক মর্যাদার জন্য। তাতে আসলে কী হচ্ছে? না কমেছে সহিংসতার হার, না বেড়েছে নারীর স্বাধীন পদচারণার হার।  

 

মন না চাইল্ওে সমাজের চাপে সেই মেনে নেওয়া, সেই নিজেকে অবদমনের ফলই, সেই নোঙরা স্পর্শটাকে ভুলতে না পারার প্রকৃত কারণ। নিজেকে দোষারোপ করা, এই ভেবে যে, সেদিন যদি আমি প্রতিবাদ করতাম আজকে হয়তো অনেক মেয়েই এই কষ্ট থেকে বেঁচে যেতে পারত।  নারীরা হয়তো নিজেদের অধিকারকে অধিকার হিসেবেই নেওয়া শিখত। নারীরা হয়তো নিজের প্রতি নিজে আরো দায়িত্বশীল হতো । আরো আত্মবিশ্বাসী হতো। আমার হয়তো আরেকটু নাছোড়বান্দা হওয়ার দরকার ছিল। আমি হয়তো আরেকটু জেদি হতে পারতাম। আরেকটু হয়তো সাহসীও হওয়া যেতো সে-সময়। 

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ