ঘরটাই যখন অফিস
সকালে ঘুম থেকে উঠেই কোন রকম নাওয়া-খাওয়া সেরে সোজা অফিস। দিনভর ছোটাছুটি, মিটিংয়ের পর মিটিং, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজ়েন্টেশন, ফিল্ড ওয়ার্ক। সব মিটিয়ে দিন শেষে নিজ ঘরে। সেখানে আর অফিসের কাজের পাহাড় নেই, মিটিং নেই, বসের ধমক নেই, সহকর্মীদের সঙ্গে সৌজন্যতা নেই, পুরোটাই পার্সোনাল স্পেস। বছর খানেক আগেও অফিস আর বাসা- এরকমই ছিল জীবনটা, আলাদা দু’টো জায়গা। কিন্তু এখন সব মিলেমিশে জগাখিচুড়ি! এখন অফিসই বাসা, যেখানে বোর্ড মিটিং, সেখানেই খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা, সিনেমা দেখা। ডাইনিং টেবিলটা বা লিভিং রুমের ডিভানটাই হয়তো আপনার ওয়র্কস্টেশন। সন্তানের রিপোর্ট কার্ড থেকে ক্লায়েন্টের জরুরি ডকুমেন্ট, বাজারের ফর্দ সবই এক ফাইলে।
দেখুন, সঙ্কটময় পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বাসাতেই যে অফিস খুলতে হয়েছে তাই বলে বাসা আর অফিসের মধ্যে কোনও ফারাক রাখবেন না, সেটা কিন্তু ঠিক নয়। দু’টো ঠিকানা আগামী কিছুমাসও হয়তো একই থাকবে। তার ওপর নতুন করে 'ব্ল্যাক ফ্যাঙ্গাস' নামক এক রোগের আবির্ভাব দেখা যাচ্ছে।
সুতরাং, সংসার আলাদা হলে তো ক্ষতি নেই! পার্সোনাল আর প্রফেশনাল স্পেস আলাদা রাখতে হলে পুরো বাসাটাকে অফিস বানালে চলবে না। অফিস থাকুক বাসার একটা অংশে। আর সেখানে থাকুক স্বস্তিকর ওয়ার্ক এনভায়রনমেন্ট। বড় বাসা হলে সহজেই বাসার কোনও একটা ঘরকে অফিস রুম হিসেবে কনভার্ট করে নিতে পারেন। সেই ঘরেই অফিস-সংক্রান্ত কাগজপত্র থেকে শুরু করে জরুরি সরঞ্জাম, ষ্টেশনারী সব রাখুন। তবে যদি আলাদা রুম অ্যালোকেট করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে বাড়ির কোনও একটা ছোট অংশকেই ওয়ার্ক স্টেশন হিসেবে সাজিয়ে নিতে পারেন। টেলিভিশন, হোম থিয়েটার বা মিউজ়িক সিস্টেম থাকলে, ওয়র্ক স্পেস তার ধারেকাছে রাখবেন না। কিচেনের কাছেও রাখবেন না। এতে আপনারও কাজে অসুবিধা হবে, বাসার অন্য সদস্যদেরও বিনোদনে/কাজে সমস্যা হবে।
ওয়ার্কস্পেসে একটা মোটামুটি বড় মাপের টেবিল এবং আরামদায়ক চেয়ার অবশ্যই রাখুন। কারণ অফিসে যতক্ষণ চেয়ারে বসে থাকেন, বাড়িতে তার চেয়ে একটু হলেও বেশিক্ষণ ওই চেয়ারে থাকেন। আর্গোনমিক চেয়ার, যা উচ্চতা অনুযায়ী অ্যাডজাস্ট করা যায়, বা কমফর্ট অনুযায়ী টিল্ট করা যায়, সেরকম অপশন বাছুন। অতিরিক্ত গদিওয়ালা চেয়ার কিনবেন না। এগুলো দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার জন্য আদর্শ নয়। ল্যাপটপে কাজ করলেও, আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র রাখার জন্য টেবিলে ড্রয়ার্স থাকলে ভাল। যারা ডেস্কটপে কাজ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রপার কম্পিউটার টেবিলই আদর্শ। টেবল-চেয়ার ছাড়াও আশেপাশে কিছু এক্সট্রা স্টোরেজ ড্রয়ার্স রাখতে পারেন। এতে কাগজপত্র গুছিয়ে রাখতে সুবিধে হবে। দরকারি টুকিটাকি জিনিসপত্র, যেমন পেন, স্টেপলার, কাঁচি, স্টিকি নোট, হাইলাইটার, মার্কার ইত্যাদি জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার জন্য ছোট ছোট বক্স ব্যবহার করতে পারেন। অবশ্যই একটা ভাল টেবিল ল্যাম্প রাখুন। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের আলো সরাসরি চোখে গেলে চোখের ক্ষতি হতে পারে। তাই ওয়র্কস্পেসে যথাযথ আলোর ব্যবস্থা থাকা দরকার।
স্পেস নিয়ে সমস্যা থাকলে, কোনও একটা জানালার কাছে বসে কাজ করতে পারেন। এতে আলো নিয়ে সমস্যা হবে না। টেবিলের নীচে কিছু স্টোরেজ বক্স রেখে দিন। জানালার উপর রাখুন ছোট এয়ার পিউরিফাইং প্ল্যান্টস, মোটিভেশনাল ফ্রেমস। তৈরি আপনার ওয়র্কস্টেশন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বেডরুম থেকে ওয়র্কস্পেস যত দূরে থাকে, ততই ভাল। ওয়র্করুমের আলাদা দরজা থাকলে আরও ভাল। কাজ করার সময় যে দেওয়ালের দিকে মুখ করে বসছেন, সেই দেওয়ালে কোনও দরজা না থাকাই ভাল। বাড়িতে ওয়ার্কস্পেস বানাতে হলে এই টিপসগুলো মনে রাখুন। দেখবেন, কাজ করতে বাড়তি এনার্জি পাবেন।