Skip to content

শিশুদেরও লুপাস হতে পারে

শিশুদেরও লুপাস হতে পারে

রোগটির সংক্ষিপ্ত নাম লুপাস। পুরো নাম সিস্টেমিক লুপাস এরিথেমাটোসাস (এসএলই)। এটি একটি ‘অটোইমিউন’ রোগ। এই রোগে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কোষ আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে কিডনি লুপাস বা লুপাস নেফ্রাইটিস অন্যতম। ২০ থেকে ৭৫ শতাংশ লুপাস রোগীর কিডনি আক্রান্ত হতে পারে। কিডনির পাশাপাশি শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র, রক্তরোগ, চামড়ার ক্ষত, গিরা, মাংসপেশি, ফুসফুস, হৃদ্‌যন্ত্র এমনকি চুল পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে।

লুপাস সাধারণত ১১–১২ বছর বয়সে দেখা দিতে পারে। তবে পাঁচ বছরের নিচে এই রোগ কম হতে দেখা যায়। এই রোগে ছেলে বা মেয়েশিশু উভয়ই আক্রান্ত হয়, তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি।

কারণ

লুপাস রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। তবে কিছু বিষয় যেমন বংশগত ও পরিবেশগত প্রভাব, ভাইরাস সংক্রমণ এবং হরমোনজনিত প্রভাব রোগের বিস্তার ও তীব্রতাকে প্রভাবিত করে। মূলত এটি অটোইমিউন ডিজঅর্ডার, শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার ত্রুটির জন্য হয়ে থাকে। যখন রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা তার নিজের কোষ এবং অঙ্গকে আক্রমণ শুরু করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে (যাকে অটোইমিউন রোগ বলে) তখনই এমন হয়।

উপসর্গ

লুপাস রোগের উপসর্গ মৃদু থেকে গুরুতর হতে পারে। দীর্ঘদিনের জ্বর, ক্লান্তিবোধ, চুল পড়া, মুখে ঘা, রোদে সংবেদনশীলতা, সারা শরীরে লাল র‌্যাশ (মুখের র‌্যাশের ধরনকে বাটারফ্লাই র‌্যাশ বলা হয়ে থাকে), জিবে ঘা, ওজন কমে যাওয়া, প্রস্রাবের রং পরিবর্তন, প্রস্রাবে তলানি জমা, শরীর ফুলে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ, গিরাব্যথা বা ফুলে যাওয়া, মাথাব্যথা, চোখে দেখতে অসুবিধা, খিঁচুনি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, পেটব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।

চিকিৎসা

এই রোগের চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে এমনকি আজীবন চালিয়ে যেতে হয়। এর কোনো স্থায়ী নিরাময় নেই, চিকিৎসার লক্ষ্য হলো এর তীব্রতা কমানো ও অঙ্গগুলোকে ক্ষতিসাধন থেকে রক্ষা করা। কিডনির টিস্যু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে রোগ কোন পর্যায়ে আছে বের করা এবং পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা সম্ভব। কিছু ওষুধ সারা জীবন সেবন করতে হয়, যাতে রোগ জটিলতর না হয়ে ওঠে বা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর ক্ষতিসাধন না হয়।

লুপাস রোগের লক্ষণগুলো দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর কিডনি, স্নায়ুতন্ত্রসহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আক্রান্ত হয়ে কার্যক্রম হ্রাস পেতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা নিলে এই লক্ষণগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে, জীবনের মান উন্নত করে লেখাপড়াসহ অন্যান্য কাজে সফল হওয়া সম্ভব।

– ড. ইমনুল ইসলাম, অধ্যাপক, শিশু বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক বিএসএমএমইউ)