শবে বরাতের কয়েকটি রান্না
সামনেই পবিত্র শবেবরাত। এ দিনটিতে ঘরে ঘরে নানা ধরনের হালুয়া, বরফি, পায়েস তৈরি করে আত্মীয়-পরিজন, প্রতিবেশীদের বাড়ি পাঠানোর রীতি-রেওয়াজ চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। এ কথা মনে রেখেই দেওয়া হলো কিছু রেসিপি। রেসিপি দিয়েছেন দিলরুবা খান।
ছোলার ডালের হালুয়া
যা লাগবে- ছোলার ডাল ৫০০গ্রাম,চিনি ৭০০ গ্রাম, ঘন করা দুধ অথবা কনডেন্সড মিল্ক ২ কাপ, কিশমিশ আধা কাপ, পেস্তাবাদাম কুচি আধা কাপ, ঘি দেড় কাপ, এলাচ ৭/৮টি, দারুচিনি ৩/৪ টুকরো, গোলাপ পানি কয়েক ফোটা।
যেভাবে করবেন- ডাল ধুয়ে ভিজিয়ে রাখুন ২/৩ঘন্টা। পরে শীল পাটায় মিহি করে বেটে নিন। এবার কড়াইতে অর্ধেকটা ঘি গরম করে এতে অর্ধেকটা কিশমিশ, অর্ধেক এলাচ দারুচিনি এবং বাটা ডাল ছাড়ুন। মৃদু আচে অনবরত নাড়তে থাকুন। কিছুক্ষণ পর এতে চিনি এবং ঘনকরা দুধ অথবা কনডেন্সড মিল্ক দিন। আবার নাড়ুন। খেয়াল রাখুন যাতে তলায় ধরে না যায়। এবার এতে বাকি এলাচ দারুচিনি এবং ঘি দিন। আবার নাড়তে থাকুন। নাড়তে নাড়তে মিশ্রণটি আঠালোভাব হলে এবং ঘি এর উপর ভেসে উঠলে সামান্য গোলাপ পানি ছড়িয়ে দিয়ে নামান। এবার কাচের বাটিতে ঢেলে এর উপর ছড়িয়ে দিন ঘিয়ে ভাজা কিশ মিশ এবং পেস্তাবাদাম কুচি।
পেঁপের হালুয়া
যা লাগবে- পেঁপে ১ কেজি, চিনি ৫০০গ্রাম, ঘি আধা কাপ, কিশমিশ আধা কাপ, পেস্তাবাদাম কুচি আধা কাপ, এলাচ ৪/৫টি, দারুচিনি২/৩ টুকরো, গোলাপ পানি সামান্য।
যেভাবে করবেন- পেঁপের খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে টুকরো টুকরো করে কেটে অল্প পানিতে সিদ্ধ করে নিন। এমন পরিমাণে পানি দিন যাতে ঐ পানিতেই পেঁপে সিদ্ধ হয়ে যায়, একটুকু পানিও না থাকে। এবার ব্লেন্ডারে অথবা শীল পাটায় মিহি পেস্ট করে নিন।। কড়াইতে ঘি গরম করে অর্ধেক এলাচ দারুচিনি আর কিশ মিশ পেস্তাবাদাম কুচি দিন। নেড়েচেড়ে এতে দিন বাটা পেঁপে। বেশ কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন মৃদু আচে, যাতে তলায় ধরে না যায়, পোড়া না লাগে। আরও কিছুক্ষণ নাড়ুন। এবার এতে দিন বাকি এলাচ দারুচিনি ও কিশমিশ। মিশ্রণটি আঠালোভাব হলে এতে ঘি ছড়িয়ে দিয়ে নামান। বাটিতে ঢেলে এর উপর ছড়িয়ে দিন ঘিয়ে ভাজা কিশমিশ ও পেস্তাবাদাম কুচি।
মটরশুঁটির হালুয়া
যা লাগবে- খোসা ছাড়ানো মটরশুঁটি ৪ কাপ, চিনি ১কেজি, দুধের ক্ষীরসা অথবা কন্ডেন্সড মিল্ক দেড় কাপ, কিশ মিশ আধা কাপ, পেস্তাবাদাম কুচি আধা কাপ, ঘি আধা কাপ, এলাচ ৩/৪টি, দারুচিনি ২/৩ টুকরো।
মটরশুঁটি ধুয়ে ব্লেন্ডারে অথবা শীলপাটায় মিহি পেস্ট করে নিন। এবার কড়াইতে ঘি গরম করে এতে মটরশুঁটি পেস্ট ছেড়ে অনবরত নাড়ুন। ভাজা ভাজা হলে এতে চিনি দিন, আবার নাড়ুন। থকথকে হলে এতে দুধের ক্ষীরসা অথবা কন্ডেন্সড মিল্ক, কিশমিশ, এলাচ দারুচিনি দিন। মৃদু আচে আরো কিছুক্ষণ নাড়তে থাকুন। মিশ্রণটি আঠালো ভাব হলে এবং ঘিয়ের উপর ভেসে উঠলে নামিয়ে নিন। বাটিতে বেড়ে এর উপর ছড়িয়ে দিন কিশমিশ, পেস্তাবাদাম কুচি।
গাজরের হালুয়া
যা লাগবে- গাজর ৫০০ গ্রাম, চিনি ৭০০গ্রাম, দুধের ক্ষীরসা অথবা কন্ডেন্সড মিল্ক ১কাপ, কিশ মিশ আধা কাপ, ঘি আধা কাপ, পেস্তাবাদাম কুচি আধা-কাপ, এলাচ ৩/৪টি, দারুচিনি ২/৩টি, গোলাপ পানি, সামান্য।
যেভাবে করবেন- গাজর ধুয়ে ডুমো ডুমো করে কেটে পানিতে নরম করে সিদ্ধ করুন। এমন পরিমাণে পানি দিন যাতে ঐ পানিতেই সিদ্ধ হয়ে যায়। এবার ব্লেন্ডারে অথবা শীলপাটায় সিদ্ধ গাজর মিহি পেস্ট করে নিন। এবার কড়াইতে ঘি গরম করে গাজর পেস্ট ছেড়ে অনবরত নাড়ুন মৃদু আচে। ভাজা ভাজা হলে এতে চিনি দিন। আবার নাড়ুন। থকথকে হলে এতে দুধের ক্ষীরসা অথবা কন্ডেন্সড মিল্ক, কিশমিশ, পেস্তাবাদাম এলাচ, দারুচিনি দিন। মিশ্রণটি নাড়তে নাড়তে আঠালো চটচটে হলে এতে সামান্য গোলাপ পানি ছড়িয়ে দিয়ে নামান। বাটিতে বেড়ে এর উপর ছড়িয়ে দিন কিশমিশ ও পেস্তাবাদাম কুচি।
খেজুরের বরফি
যা লাগবে- খেজুর ৩০০ গ্রাম, চিনি ৭০০গ্রাম, ঘন করা দুধ অথবা কন্ডেন্সড মিল্ক ১ কাপ, ঘি আধা কাপ, কিশমিশ আধা কাপ, পেস্তাবাদাম কুচি আধা কাপ, এলাচ ৪/৫টি, দারুচিনি ২/৩ টুকরো।
যেভাবে করবেন- খেজুরের বোটা ছাড়িয়ে ধুয়ে ৩/৪ ঘণ্টা ডুবো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। খেজুর নরম হলে পানি থেকে তুলে ব্লেন্ডার অথবা শীল পাটায় মিহি পেস্ট করে নিন। এবার কড়িতে ঘি গরম করে খেজুরের পেস্ট ছেড়ে দিন। মৃদু আচে নাড়ুন। ভাজা ভাজা হলে এতে চিনি দিন। নেড়েচেড়ে এবার দিন ঘনকরা দুধ, এলাচ, দারুচিনি এবং অর্ধেক পরিমাণে কিশমিশ, পেস্তাবাদাম কুচি। অনবরত নাড়ুন মৃদু আচে। মিশ্রণটি আঠালো চটচটে হলে উনান থেকে নামিয়ে নিন। এবার রুটি বেলার পিড়ি অথবা থালায় একটু ঘি মেখে তাতে মিশ্রণ ঢেলে সমান করে নিন। এর উপর বাকি কিশমিশ পেস্তা বাদাম চেপে চেপে বসিয়ে দিন। একটু ঠাণ্ডা হলে ছুরি দিয়ে বরফির আকারে কেটে নিন।
পেস্তার বরফি
যা লাগবে- পেস্তা ২৫০ গ্রাম, চিনি ৭০০ গ্রাম, দুধের ক্ষীরসা অথবা কন্ডেন্সড মিল্ক ১ কাপ, কিশমিশ, পেস্তাবাদাম কুচি আধাকাপ করে, এলাচ ৪/৫টি, দারুচিনি ২/৩ টুকরো।
যেভাবে করবেন- পেস্তা সারা রাত ডুবো পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন। পরদিন সকালে পানি থেকে তুলে খোসা ছাড়িয়ে ব্লেন্ডার অথবা শীল পাটায় পেস্তা মিহি পেস্ট করে। নিন এবার কড়াইতে ঘি গরম করে পেস্তা পেস্ট ছেড়ে নাড়ুন মৃদু আচে ভাজা ভাজা হলে এতে চিনি দুধের ক্ষীরসা, এলাচ দারুচিনি দিন। অনবরত নাড়তে থাকুন যাতে তলায় ধরে না যায়, পোড়া না লাগে। মিশ্রণটি আঠালো ও চটচটে হলে উনান থেকে নামিয়ে নিন। এবার রুটি বেলার পিড়ি অথবা থালায় অল্প ঘি মেখে মিশ্রণ এতে ঢেলে সমান করে নিন। বাকি কিশমিশ, পেস্তাবাদাম কুচি এতে চেপে চেপে বসিয়ে দিন। ঠাণ্ডা হলে বরফির আকারে কেটে নিন।
কমলা লেবুর বরফি
যা লাগবে- বড় আকারের কমলালেবু ৮টি, দুধের ক্ষীরসা অথবা কন্ডেন্সড মিল্ক ৩ কাপ, চিনি ৭০০ গ্রাম, কিশমিশ, পেস্তাবাদাম কুচি আধা কাপ, এলাচ ৩/৪টি, দারুচিনি২/৩টি, ঘি ৪ চা-চামচ।
যেভাবে করবেন- কড়াইতে দুধ অথবা কন্ডেন্সড মিল্কের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে মৃদু আচে উনানে রেখে অনবরত নাড়ুন। মিশ্রণ ঘন ও থকথকে হলে কমলার খোসা ছাড়িয়ে কোয়া বের করে এর কোষগুলো ছাড়ুন। এতে অর্ধেক কিশমিশ, পেস্তাবাদাম কুচি দিন। নাড়তে থাকুন কিছুক্ষণ। আঠালো হলে নামিয়ে নিন। এবার রুটি বেলার পিড়িতে ঘি মেখে কমলার মিশ্রণ এতে ঢেলে সমান করে নিন এবং বাকি কিশমিশ, পেস্তাবাদাম কুচি চেপে চেপে বসিয়ে দিন এতে। ঠাণ্ডা হলে বরফির আকারে কেটে নিন।