Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাচেন্দ্রী পাল:  এক সাহসী নারী পর্বতারোহী 

ভারতকে এভারেস্ট অংশের শুভ্রতা এবং অলৌকিকতা বিশাল সময় ধরে মানুষের সমীহ আদায় করছে। আধুনিক মানুষের কাছেও এভারেস্ট সমীহ আদায় করে চলেছে। কিন্তু প্রকৃতিকে জয়ের ক্ষেত্রে মানুষ কখনই পিছপা হয়নি। তাই এভারেস্ট বেশি দিন অধরা থাকেনি। অথচ একবার তাকিয়ে দেখুন, নারীদের বলা হয় দুর্বল, এমন বিশাল পর্বতের বুকে কোনো ভারতীয় নারী চড়ে বেড়াবেন, এমন কিছু সত্যিই অকল্পনীয়। কিন্তু এই অকল্পনীয়কে প্রথম বাস্তব করে তুলেছিলেন বাচেন্দ্রী পাল নামে এক নারী। প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে তিনি এভারেস্ট জয় করেন।

 

উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল জেলায় এই অসম সাহসী নারীর জন্ম। মজার ব্যাপার হলো তার জন্মের ঠিক পাঁচ দিন পরেই তেনজিং নোরগে এবং এডমন্ড হিলারি এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন। নিজের অঞ্চলের মানুষের মাঝে সেই থেকেই এভারেস্ট জয়ের গল্প বড় হতে থাকে। সেই উৎসাহ ক্রমশ বাচেন্দ্রীকেও ভর করে। ১২ বছর বয়সেই বাচেন্দ্রী পর্বতারোহন শুরু করেন। ১৯৮২ সালেই জাতীয় পর্বতারোহন ইন্সটিটিউটের হয়ে তিনি গঙ্গোত্রী, রুদ্রগিরির মতো পর্বতারোহণ করেন। যদিও এগুলো ছোটখাটো পর্বত।

 

এভাবেই আস্তে আস্তে তিনি এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। তবে তখনো শুধু নারী হিসেবেই অভিযান পরিচালনা সম্ভব ছিলো না। ১৯৮৪ সালেই ভারতের প্রথম মহিলা ও পুরুষ সম্মিলিত দলের মাউন্ট এভারেস্টে অভিযানের সুযোগ লাভ করেন। সেই দলে দক্ষতার জন্য বাচেন্দ্রী পালও সুযোগ পেয়ে যান। ওই দলে ১১ জন পুরুষ এবং ৬ জন মহিলা ছিলেন। কাঠমুন্ডু থেকেই তাদের আরোহণ শুরু হয়। কিন্তু যাত্রার শুরু মোটেও সুখপ্রদ ছিল না।

 

যাত্রার আগে বরফধসে ক্যাম্প চাপা পড়ে যায়। দলের অন্তত অর্ধেক পর্বতারোহী আহত হয়। পাহাড়ি মানুষের কাছে পর্বত ঠিক দেবতার মতো। বাকি অভিযাত্রীরা এই অভিযানে যাওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। ১৯৮৪ সালের ২২ মে শেরপা আং-দোরজের সাথে সাউথ কল দিয়ে বাচেন্দ্রী পালের দল এভারেস্টের চূড়ায় ওই রোহণ করেন। এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত! ওই মুহূর্ত তাদের কাছে স্বর্গীয় সুখের মতোই ধরা দিয়েছিল।

 

বাচেন্দ্রী পালের সমগ্র জীবনই পর্বতারোহণের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেছে। ১৯৯৩ সালেই ইন্দো-নেপালি মহিলাদের মাউন্ড এভারেস্ট অভিযানেও তিনি অংশগ্রহণ করেন। এ-ছাড়া, অংশ নেন দ্য গ্রেট অন্জডিয়ান উইমেন রাফ্টিং ভয়েজে। মাত্র ৩৯ দিনে গঙ্গা বেয়ে হরিদ্বার থেকে কলকাতায় আসার এই অভিযানটি অনেককেই মুগ্ধ করেছিল। নিজের সাহসিকতার কৃতিত্বস্বরূপ বহু পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই তিনি নারীদের উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন।

 

বয়স ষাট পেরিয়ে গেলেও তিনি দমে যাননি। নিজের ঘরের কোণে বিশ্রাম করার মতো মানসিকতাও তাঁর নেই। এইতো ২০১৮ সালেও উত্তরাখণ্ডে গঙ্গার বুকে এক মাসের রিভার রাফটিং কর্মসূচি পরিচালনা করেন। ২০১৯ সালেই পান পদ্মভূষণ উপাধি।

 

বাচেন্দ্রী পালের কৃতিত্বের সব চেয়ে বড় সাফল্য ভারতীয় নারীদের সব দিকে ছড়িয়ে পড়ার মধ্যে। অসংখ্য ভারতীয় নারী অ্যাডভেঞ্চারের মতো পুরুষপ্রধান স্থানেও নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করতে শুরু করেন। অথচ নিজেকে তিনি শুধু লিঙ্গের ভিত্তিতেই পরিচিত করান না। বরং একজন খাঁটি পর্বতারোহীর ভূমিকাতেই তাঁকে ইতিহাস জেনে থাকবে।
 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ