Skip to content

৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শনিবার | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাতৃত্ব একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ অনুভূতি

মাতৃত্ব কী এবং মাতৃত্ববোধ কি? 

 

মাতৃত্ব মানে সন্তান জন্ম দেয়া তো বটেই, আবার মাতৃত্ব আসলে একটা বোধও। মনোবিজ্ঞানী ড. ক্যাথেরিন মংক মাতৃত্ব নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন, মাতৃত্বের তথাকথিত সংজ্ঞা অনুযায়ী, মাতৃত্বের প্রবৃত্তি হলো একটি সহজাত জ্ঞান এবং যত্নশীল আচরণ, যা মা হওয়ার একটি স্বয়ংক্রিয় অংশ। কিন্তু ড. ক্যাথেরিনমংক এর মতে, "বাস্তবে মাতৃত্বকালীন প্রবৃত্তির ধারণাটি বেশ অন্য রকম হতে পারে।"

মানুষের সহজাত প্রবৃত্তির মাধ্যমে সে তার আশপাশের সমস্ত মানুষ ও আপন মানুষের সাথে কেমন আচরণ করবে সেটা নির্ভর করে। কে কতটুকু স্নেহময় মানুষ, কে কতটা দায়িত্বশীল মানুষ, কে কতটুকু সাহায্য করার মতো মানুষ কিংবা কে কতটা নিষ্ঠুর, এ-সব নির্ভর করে তার সহজাত প্রবৃত্তির ওপর।  

সহজাত প্রবৃত্তির অনেকগুলো ভাগ রয়েছে। তার মধ্যে একটা অংশের নাম হলো মাতৃত্ব। এই ইনস্টিংক্ট বা সহজাত প্রবৃত্তি নারী-পুরুষ উভয়ের মধ্যেই থাকতে পারে৷ যেমন, অনেক মানুষকেই দেখা যায়, যারা পাশের মানুষের প্রতি খুব স্নেহময় আচরণ করে৷ বন্ধু-বান্ধবের সাথে খুব যত্নশীল, এগুলো আসলে  আসে মাতৃত্বের প্রবৃত্তি থেকে। 

তাহলে মাতৃত্ব আর নারীত্ব কী ভিন্ন ভিন্ন বিষয়?     

 

মাতৃত্ব ও নারীত্ব দুটো ভিন্ন বিষয়। এর সহজাত প্রবৃত্তিও খুব একটা আলাদা না হলেও একটু ভিন্ন। যেমন, নারীর যে সহজাত প্রবৃত্তি থাকে, এর মধ্যে কেয়ারিং হওয়া কিংবা স্নেহময় আচরণ না-ও থাকতে পারে। তাই বলে এমন না যে, সেই নারী এমনই নিষ্ঠুর যে, মানুষ খুন করতে পারে। একজন নারী কেবল তার নিজের ক্যারিয়ার এবং নিজেকে নিয়ে ভাবতে পারে, এমনকি এ-ও হতে পারে যে, নিজের কোনো সন্তান চায় না। কিংবা সন্তান লালন পালনে কোনো আগ্রহ বোধ করে না। এটা নিশ্চয়ই ব্যক্তি-বিশেষে ব্যক্তিগত অধিকার। 

 

মাতৃত্ব একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ অনুভূতি

 

অপর দিকে, মাতৃত্ব বোধ। এই বোধ একজন পুরুষেরও থাকতে পারে। হতেই পারে, একজন পুরুষ, তার বন্ধুমহলে এক মমতাময় ধারণা পোষণ করে। আশপাশের সব মানুষ তার কাছে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়৷ তার মানে এই না, যে পুরুষের মাতৃত্ব বোধ আছে, তার শাড়ি পরতে ভালো লাগবে বা চোখে কাজল আর ঠোটে লিপস্টিক দিতে ভালো লাগবে, বড় চুল রাখতে ভালো লাগে। 

 

মাতৃত্ব একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ অনুভূতি

 

 

যে-সব পুরুষের রান্না করতে ভালো লাগে, তাদেরকে জেন্ডার নিউট্রাল বলা যায়৷ কারণ, রান্না আরেকটি জেন্ডার নিউট্রাল টার্ম। সেটা নিয়ে অন্য একটি বিস্তর আলোচনা করা যায়। 

 

মাতৃত্বের নামে আরোপিত দায়িত্ব এবং সমাজের কিছু ছাঁচে ঢালা ফলক

 
মাতৃত্ববোধ যে লিঙ্গ-নির্বিশেষে একটা টার্ম, এ ব্যপারে সমাজ অতটা বোধগম্য হয়ে ওঠেনি এখনো। এই সমাজের ধারণা, নারী মানেই তার মাতৃত্ববোধ থাকতে হবে। নারী মানেই তাকে ঘর গুছিয়ে রাখতে হবে, নারী মানেই তাকে রান্নাঘরে পারদর্শী হতে হবে। 

 

আর পুরুষের ধারণা এ সমাজ তৈরি করেছে ভিন্ন ভাবে। পুরুষ মানেই অগোছালো হবে, পুরুষ মানেই তার রাগ বেশি হবে, আর পুরুষ মানে সন্তানের প্রতি কোনো দায়িত্বশীল হবে না। 

 

এ-ছাড়া, মা ও বাবা ভেদে সমাজে ভীন্নতা বিরাজমান। একজন মা যখন বাচ্চাদের জাংক ফুড কিনে দেন।  তখন তিনি হয়ে যান অসচেতন আর অলস মা।  কিন্তু একজন বাবা যখন বাচ্চাদের জন্য জাংক ফুড কিনে নিয়ে আসেন, তখন তাকে একজন মজার বাবা বলে আখ্যায়িত করা হয়। 

 

একজন বাবা যখন অফিসে যাওয়ার আগে তার সন্তানের সাথে সুন্দর করে বিদায় নিয়ে যান, তখন তাকে বলা হয় একজন ইনভলভড বাবা।  কিন্তু যখন কোনো মা চাকরিজীবী, তখন তাকে কর্মজীবী মা বলে আখ্যায়িত করা হয়। 

 

মাতৃত্ব একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ অনুভূতি

 

সন্তানের সাথে বাবার সময় কাটানোকে বলা হয় বেবি সিটিং আর মায়ের সময় কাটানোকে বলা হয় প্যারেন্টিং। এ-ছাড়া, বাবা যখন সন্তানের সাথে সময় কাটানোর সময় মোবাইল ফোনে ব্যস্ত থাকেন, তখন তাকে অন্তত উপস্থিত বলে বিবেচনা করা হয়।  কিন্তু মায়ের ক্ষেত্রে তাকে প্রায়ই অমনোযোগী মা বলে ফেলা হয়। 

 

নারী না হয়েও যারা মাতৃত্ব প্রবৃত্তি ধারণ করে

 

এ-কথা অনস্বীকার্য যে, সন্তান ধারণের ক্ষমতা একজন নারীরই থাকে। সে-সময় থেকেই একটা মাতৃত্ববোধের জন্ম নেয়। নারীত্ব আর মাতৃত্ববোধের সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা এখানেই। 

 

কিন্তু এই মাতৃত্ববোধ কি কেবল নির্দিষ্ট সময় উদিত হয়, আর নির্দিষ্ট সময়ে অস্তমিত যায়? নারী ছাড়া অন্য লিঙ্গের কি মাতৃত্ববোধ থাকে না? সন্তানের জন্ম না দিয়েও কি সন্তান লালন-পালন করছে না অনেকে!

 

মাতৃত্ব একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ অনুভূতি

 

– তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা তৃতীয় লিঙ্গের যে-সব শিশুদের বিতাড়িত করে দেয়া হয়, তাদের লালন-পালন করে বড় করে না? তারা কি কোনো শিশুকে মায়ের মতো  কোলে-পিঠে করে মানুষ করে না? তারা নিজেরা মা হতে পারলেও মাতৃত্ব বোধ থেকে একজন শিশুর প্রতি মমত্ববোধের প্রকাশ করে। 

 

না, একটা বেড়াল বা একটা কুকুরকে আদর-ভালোবাসা দিয়ে বড় করে তোলা। 

 

মাতৃত্ব একটি লিঙ্গ-নিরপেক্ষ অনুভূতি

 

 

– পুরুষদের নাকি মাতৃত্ব-প্রবৃত্তি থাকে না, শোনা যায়। কিন্তু এই ধারণাটি ঠিক নয়। সিংগেল মাদারের পাশাপাশি সিংগেল ফাদারও আছে, যারা নিজের সন্তান পালন করছে একা। সন্তানের কোনো অসুখ-বিসুখ কিংবা সমস্ত কিছুর দায়িত্ব যেমন মা নেন, তেমনই এই ক্ষেত্রে শুধু বাবা নেন। 

 

তাহলে মাতৃত্ব কিভাবে কেবল নারীদের একক সম্পত্তি হয়? মাতৃত্ব তো আদতে একটা দায়িত্বশীল অনুভূতি। দায়িত্বশীল বা দায়িত্বহীন অনুভূতি সবার থাকতে পারে৷ এর জন্য নির্দিষ্ট লিঙ্গের মানুষ হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ