Skip to content

৭ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পারিবারিক কলহ মানেই শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!

আজকাল নেহা বড্ড বেশি ডানপিটে স্বভাবের হয়ে গিয়েছে। বয়স সবে মাত্র ১৩ ছুঁই  ছুঁই। তবে নেহার বয়সের তুলনায় অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যাচ্ছে তার মধ্যে। বড়দের সাথে খুব একটা ভালো আচরণ করেননা। লেখাপড়ায় মন নেই বললেই চলে। বানিয়েছেন একগাদা বন্ধু, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদকাসক্ত। এ চক্রের মধ্যে পরে নেহা নিজেও দিন দিন ধূমপান বা মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এর কারণ কি, কিছু আন্দাজ করতে পারছেন?  

 

পারিবারিক কলহ মানেই শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!

 

সন্তানের বেড়ে ওঠার প্রথম কারিগর তার পরিবারের সদস্যরা। বেড়ে ওঠার প্রতিটি ধাপেই শিশু শিক্ষা নেয় তার পরিবার থেকে। পারিবারিক সম্প্রীতি শিশুর বেড়ে ওঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার পারিবারিক কলহ শিশুর বিকাশে মারাত্মক ভাবে বাঁধার সৃষ্টি করে। যেমনটা ঘটেছে নেহার সাথে। তার পরিবারে বিদ্যমান কলহ নষ্ট করেছে তার শৈশব, কৈশোর। তাকে ঠেলে দিয়েছে অন্ধকার গলিতে। 

 

পারিবারিক কলহ মানেই শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!

 

নেহা একটি একক পরিবারের সন্তান। বাবা-মায়ের এক সন্তান তিনি। চাকরিজীবী বাবা-মায়ের সাথে বসবাস করেন এক বাসায়। নেহার বয়স যখন ৪-৫ বছর অর্থাৎ যখন থেকে তিনি বুঝতে শুরু করেছেন চারপাশে কি ঘটছে, তখন থেকেই দেখতে পাচ্ছেন তার বাবা-মায়ের মধ্যকার দ্বন্দ্ব। তার বাবা-মা তাকে সময় না দিয়ে নিজেদের ঝগড়ায় ব্যস্ত থাকতেন ছুটির দিনগুলোতেও। এভাবে ধীরে ধীরে নেহার দূরত্ব বাড়ে পরিবার থেকে। নিজেকে যুক্ত করেন বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন ধরণের বন্ধুদের সাথে। আর এভাবেই বিঘ্নিত হয় তার স্বাভাবিক বিকাশ। এখানে নেহা কেবলই একটি প্রতীকী চরিত্র। তবে আপনার আশেপাশে খেয়াল করে বলুনতো, এ দৃশ্য কি আমাদের সমাজের নয়? 

 

পারিবারিক কলহ মানেই শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!

 

অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বর্তমানে আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসাতে গিয়ে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পারিবারিক কলহ। যার কারণে শিশুরাও ভুগছে নানা জটিলতায়। আপনি হয়তোবা মনে করছেন, একসঙ্গে থাকলে এসব কলহ স্বাভাবিক। কিন্তু আপনার ধারনার এই স্বাভাবিক ঘটনাই অস্বাভাবিক প্রভাব ফেলতে পারে শিশুর ওপর। বাড়ির ভেতরকার পরিবেশ  দীর্ঘ মেয়াদে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে কিছু স্বাভাবিক ঝগড়াবিবাদ হতেই পারে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা যখন একে অপরের প্রতি ক্রুদ্ধ আচরণ করেন, চিৎকার চেঁচামেচি, অথবা তারা একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন, তখনই হয়তো কিছু একটা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

 

পারিবারিক কলহ মানেই শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!

 

পরিবারের সদস্যরা একে অপরের সাথে কিভাবে কথা বলছে? কেমন আচরণ করছে? প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি জিনিস শিশুর জীবনকে প্রভাবিত করে। যদি পারিবারিক সম্প্রীতি না থাকে, দিনভর কলহ বিদ্যমান থাকে তখন আস্তে আস্তে শিশু নিজেকে গুটিয়ে নেয়, সবার থেকে আলাদা হয়ে যায়। ধীরে ধীরে নিজের পরিবারের মধ্যেই নিজেকে আর সুরক্ষিত মনে করতে পারেনা। বর্তমানে যৌথ পরিবার এবং একক পরিবার নিয়েও পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে বিভিন্ন তর্কবিতর্ক। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, যে প্রকৃতির পরিবারই হোক না কেন, শিশুর বেড়ে ওঠায় দরকার পরিবারের সম্প্রীতির।

 

পারিবারিক কলহ মানেই শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!

 

অনেকসময় দেখা যায় বাবা-মায়ের মধ্যে কলহের কারণ হয় সন্তান। সন্তানকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ঝগড়াঝাঁটি হয় বাবা-মাকে ঘিরে। একসাথে বসবাস করতে হলে মনোমালিন্য দেখা দিতেই পারে। কিন্তু তা নিয়ে যদি তীব্র কোনো সংঘাতের জন্ম নেয় তবে তা নিঃসন্দেহে শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আর এমন অবস্থায় সকল খারাপ পরিস্থিতির জন্য শিশুটি নিজেকে দায়ী করতে থাকে। তার মধ্যে নানাধরনের দুশ্চিন্তার তৈরি হয়। এমতাবস্থায় অনেক শিশু আত্মঘাতীও হতে পারে। 

 

পারিবারিক কলহ মানেই শিশুর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ!

 

তাই শিশুর একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে দায়িত্ব নিতে হবে তার পরিবারকেই। মনে রাখতে হবে পারিবারিক সম্প্রীতি যেমন শিশুকে ভালো বিকাশে সাহায্য করতে পারে ঠিক তেমনি পারিবারিক কলহ একমুহূর্তেই শেষ করতে পারে শিশুর ভবিষ্যৎ। পরিবারের যেকোনো সমস্যায়ই হোকনা কেন, তার আঁচ শিশুর গায়ে না লাগতে দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। সন্তানদের নিরাপদ ও আনন্দময় শৈশবের জন্য পিতা-মাতা, অভিভাবকসহ পরিবারের সকল সদস্যদের পারিবারিক সম্প্রীতি বজায় রাখা উচিত।  

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ