প্রেমের জেরে নারীহত্যা বন্ধ হবে কবে
বর্তমান সময়ে নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে এক্সট্রা ম্যারিটিয়াল অ্যাফেয়ার বা বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। দাম্পত্য সম্পর্কের টানাপড়েনে জায়গা করে নেয় তৃতীয় কোনো ব্যক্তি। এক্ষেত্রে দাম্পত্য সম্পর্ক ধীরে ধীরে শিথিল হতে থাকে। অন্যদিকের সম্পর্কটি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। মানুষ জীবনযাপন করতে চায় নিজস্ব স্বাধীনতায়, আত্মমর্যাদায়। যখন তা বাধাপ্রাপ্ত হয় তখন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন রোহিত হতে থাকে। এর ফলে মানুষ নিজের জীবনের শান্তি, স্বাধীনতা খুঁজতে অনেক সময় বাইরের দিকে হাত বাড়ায়। যা সমাজ, ধর্মের নিয়মে অনৈতিক, অবৈধতার ছাপযুক্ত।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দাম্পত্য সম্পর্ক টিকে আছে শুধু লোক দেখানো বা সমাজের ভয়-ভীতির জেরে। অনেক নারী-পুরুষ সন্তানের ভবিষ্যৎ ভেবেও দিন দিন নির্যাতন সহ্য করে চলে। তবে সবকিছুর মধ্যে এই সম্পর্কের টানাপড়েনের মাঝে যে অস্বাভাবিক ঘটনাগুলো ঘটে যায়, সেগুলো সমাজের জন্য অকল্যাণকর। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। যা কখনোই কাম্য নয়।
বর্তমান সময়ে বহু নজির সামনে তুলে ধরা যাবে, যেখানে দাম্পত্য সংকটকে কেন্দ্র করে স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন হচ্ছে। এর নেপথ্যে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কই বেশি চোখে পড়ে। তবে এই ঘটনা সৃষ্টির জন্য স্বাভাবিকভাবেই আমাদের পরিবারের অচল কিছু রীতি দায়ী। যেখানে দুটি মানুষের শত অমিল, দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও তাদের একসঙ্গে থাকতে বাধ্য করা হয়। যার পরবর্তী ফল খুনোখুনির রূপ নেয়!
পূর্ববর্তী যত দাম্পত্য সম্পর্ককে কেন্দ্র করে হত্যা, আত্মহত্যা, খুন, জখম হয়েছে, সবগুলোর রেকর্ড ঘাটলে এটাই দেখা যায় যে, এই সম্পর্কের অবনতি নতুন কোনো ঘটনা নয়। তবে ঘটনা পুরনো হলেও আশেপাশের মানুষ, আত্মীয়-স্বজন বুঝিয়ে, মানিয়ে, মেনে নিয়ে দুটি মানুষকে একসঙ্গে জীবনযাপনে বাধ্য করে । এর পরিণতি যখন ভয়াবহ হয় তখন এই পরিবার, আত্মীয়-স্বজন একবাক্যে স্বীকার করেন তার মেয়ে বা এই নারীর ওপর বহুদিন ধরেই অত্যাচার, নির্যাতন, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। তবে কেন সবার কথা মেনে মানিয়ে নিয়ে নারীটিকে হত্যা বা আত্মহত্যার শিকার হতে হচ্ছে!
পৃথিবীর পবিত্রতম সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। দুটি একদম ভিন্ন পরিবেশের মানুষ যখন এক ছাদের নিচে থাকতে শুরু করেন তখন অনেককিছুই ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়েই থাকতে হয়। কিন্তু পুরুষ বা নারী এই ছাড়কে অনেক সময় দুর্বলতা ভেবে বসেন। অন্যকে অবজ্ঞা করতে শুরু করেন। যার ফলে ধীরে ধীরে সংকট বৃদ্ধি পায়। মনের ওপর ধূলো জমতে থাকে। ক্রমাগত ধূলোর স্তর বাড়তেই থাকে যদি ভুল বুঝে সঠিক পথনির্দেশ না করা যায়। তবে এই সংকট-দ্বন্দ্ব-টানাপড়েন যদি দীর্ঘস্থায়ী রূপ নেয় তবে লোকলজ্জার বশবর্তী হয়ে দুটি জীবন শেষ করে দেওয়ার কোনোই অর্থ নেই। আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে এতটাই বোধের অভাব যে, তারা দাম্পত্য সংকটকে কেন্দ্র করে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়ায়। আর এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে খুন, জখমের সাহায্য গ্রহণ করে! যা একেবারেই বুদ্ধিহীন, যুক্তিহীন একইসঙ্গে ঘোরতর অন্যায়।
নারীদের উচিত সম্পর্কের প্রতি সচেতন হওয়া। বাংলা প্রবাদে আছেই, দড়ি বেশি টানলে ছিঁড়ে যায়, লেবু বেশি কচলালে তিতা হয়। সম্পর্কের বিষয় ঠিক তাই! ফলে নারী-পুরুষ উভয়কেই সচেতন হওয়া উচিত। সম্পর্কের অবনতি লক্ষ করলে দ্রুত দুজনের ভুল-ভ্রান্তি চিহ্নিত করে সম্পর্ক উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে হবে। যদি সেখানে কোন আশা লক্ষণীয় না হয় তবে তার জেরে খুন, জখম, নির্যাতন করার বদলে পথ পাল্টে নেওয়াই শ্রেয়। সেটা পুরুষ-নারী উভয়ের ক্ষেত্রে শতভাগ সত্য। পৃথিবীর বুকে শান্তি বিরাজিত হোক। মানুষ ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য উপলব্ধি করতে শিখুক। শান্তিময় জীবনের জন্য ভুল পথে না গিয়ে সঠিকতা নিরূপণ করে সেই মত-পথের দিশারি হয়ে উঠুক।