Skip to content

৫ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষমতার নিপিষ্টে নারী, রক্ষকেরাই ভক্ষকের ভূমিকায়

নারীর প্রতি কুরুচিপূর্ণ অশ্রাব্য মন্তব্য করাটা নিশ্চয়ই কোনো সমাজের নেতিয়ে যাওয়া অসহায়ত্ব নয়। এক দিনেই এ কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের ভিত মজবুত হয় নি। বরং এ অবস্থায় পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয়েছে এক সুদীর্ঘ পথ।

 

নারীকে যুগের পর যুগ দাঁড়িপাল্লার বাটখারার অপর প্রান্তে রেখে মূল্যায়ন করাটা এই দেশের নজরে কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। তার চেয়ে বরং নারী অধিকারকর্মীদের দ্বারা একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে অপসারণ এর দাবী করাটা অপেক্ষাকৃত বেশী সমাদৃত। এর প্রভাব নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বিশদ ভূমিকা রাখতে সক্ষম কি না তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোনো পদক্ষেপে দাম্ভিকতার স্তরের নড়চড় হওয়া। যে দাম্ভিকতার পাহাড় এতদিন ক্ষমতা ও ভীতির স্তরে সসম্মানে স্তম্ভিত ছিলো, সেই স্তরে ফাটল ধরেছে কিনা। 

 

একজন অনিষ্টকারীর বিনষ্ট হোক, একজন অপরাধী তার অপরাধের ন্যায্য শাস্তিটুকু পাক, একজন দুর্নীতিগ্রস্থ মনীষী তার কৃতকর্মের জন্য পরিণতি ভোগ করুক এইসকল চাওয়া-পাওয়া যদি সমাজে লক্ষ্যস্থির করতে পারে তবে কুরুচিপূর্ণ অশ্রাব্য মন্তব্যের জন্য কেনো শাস্তির বিধান কেন থাকবে না? হোক সে নারীর সাথে সেই ব্যক্তির কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক কিংবা কোনো সামাজিক সম্পর্ক কিংবা যৌন সম্পর্ক। 

 

শুধু নারী কেন, সকল মানুষের প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতার বন্দোবস্ত করা বাধ্যতামূলক। এদিকে আবার, কোনো ব্যক্তি অনাগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে জোর, জবরদস্তি করে আওতায় আনাও একটা বিশ্রী রকমের অপরাধ। বলা বাহুল্য, এটাই মানবাধিকারের সার্বজনীন ধারণা। 

 

তবে সেক্সিজম এবং রেসিজমকে কেন্দ্র করে প্রহসনের যে সর্বোচ্চ মাত্রা ছাড়িয়েছে, সেটা দিন দিন একটা অভ্যস্ততায় পরিণত হচ্ছে। যা ভয়ংকর পরিণতির অপেক্ষা রাখে।

 

যদিও ব্যক্তিগত আলাপ ফাঁস হওয়াও একটি বিব্রতকর ঘটনা। তবে কিছু ফোন আলাপ ফাঁস হওয়া জীবন বান্ধব হয়। মামুনুল হক, সায়েম সোবহান এবং মুরাদ হাসানের অপরাধ কে অবশ্য অপরাধের ভিত্তিতে এক কাতারে দাড় করিয়ে সরলীকরণ করাটাও অনুচিত। কারণ উনারা বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত। অন্যান্য শ্রেণীর অপরাধের সাথে ডাঃ মুরাদ হাসানের অপরাধ তুলনা করলে তার অপরাধ লঘু হয়ে যায়। যদিও শাস্তি একই রকম  হতে পারে কিন্তু অপরাধের মানদণ্ডে এই বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ এক সরলরেখায় নেই। 

 

প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদ্বয় নিজেদের মতযোগে যত ইচ্ছা যৌন সম্পর্ক করলে সেখানে বলার কিছু থাকে না। বলার তখন ই থাকে যখন কেউ কাউকে ক্ষমতার দাপটে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করে এবং সেই একই ব্যক্তি সেই নারী কে পতিতা বলে আখ্যায়িত করে। পাশাপাশি একই ব্যক্তি যখন নারীসঙ্গকে হারাম বলে তকমা দেয় তখন দ্বিচারিতার সীমা ছাড়ায়।

 

৪০ নারী অধিকারকর্মী একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্যে প্রতিবাদ জানিয়ে অপসারণ দাবী করেছেন। গত ৬ ডিসেম্বর তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার নির্দেশ ও জানানো হয়। বিষয়টি যদি নজর আন্দাজ করা যায় তাহলে এটি একটি শান্ত এবং সুন্দর প্রতিবাদ বলে গণ্য করা যায়। কারণ পরিসংখ্যান অনুযায়ী এদেশের নারীরা বড় সড় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সম্মুখীন তো হচ্ছেই ছোটো পরিসরেও যে সকল সহিংসতার সম্মুখীন হচ্ছে সেটা একদমই অবজ্ঞা করার মত নয়।

 

গেলো ২৫শে নভেম্বর এর মহিলা পরিষদের আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কর্মসূচি তে মহিলা পরিষদের পরিচালক মাকসুদা আক্তার বলেন, ‘‘এদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা আন্দোলন কর্মসূচি হয়ে থাকলেও নারীর প্রতি সহিংসতা ও ভয়াবহতা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে।’’ 

 

এছাড়াও বিবিসি নিউজ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ নারীর প্রতি সহিংসতায় চতুর্থতম স্থানে থেকে মোটামুটি জয়যুক্ত হয়েছে। প্রথমে আসতে আর কতই বা দেরী পাঞ্জেরি? 

 

একমাত্র বৈবাহিক আইন প্রণয়ন ছাড়া সাধারণত অন্য কোনো ক্ষেত্রে নারীর প্রতি ন্যায্যতার হার কম বলেই দেখা যায়। তাই সেখানে অশ্রাব্য মন্তব্য কে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচনা করাটা এতটা মুখ্য বলে বিবেচিত হয় না। কারণ পথে ঘাটে নারীদের প্রতি অযাচিত দৃষ্টি রাখা একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। 

 

তবে একজন দায়িত্বে আসীন মানুষ যখন নারীর প্রতি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দ্বিধাহীনভাবে করছেন। এবং সেটা নিয়ে তার লজ্জিত বোধ করার কিঞ্চিৎ ইচ্ছাটুকু নেই। তখনই প্রশ্ন জাগে নারী স্বাধীনতার শ্বাসরুদ্ধকর অবহেলিত পরিস্থিতির এবং ভীতি হয় নারী জাগরণের সম্ভাবনা নিয়ে।

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ