Skip to content

২২শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | মঙ্গলবার | ৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেকের প্রসঙ্গ প্রেমে-দাম্পত্যে কেমন প্রভাব ফেলে

সংসারে কিংবা নিজের বর্তমান সম্পর্কে প্রাক্তনের প্রসঙ্গ আসতে পারে যেকোনো সময়েই। মানুষ অতীতকে নিয়ে বাঁচে, কিন্তু অতীতে বাঁচার প্রচেষ্টা থেকে তাকে বের হতেই হয়। সেই বের হয়ে আসাটা কঠিন নয়। কখনো বইয়ের পাতা উল্টে যেমন বর্তমানের গল্প বুঝতে পেছনের গল্পে চোখ বুলাতে হয়, তেমনই নিজ সঙ্গীর সামনেই প্রাক্তনের প্রসঙ্গ আসতে পারে। প্রেমে সাবেকের প্রসঙ্গ সবসময়ই স্বাভাবিকতা নষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে, সাবেকের প্রসঙ্গ আসলেই কি রাগ করতে হবে?

বিষয়টি নিয়ে ভাবা প্রয়োজন। অতীতের কোনো অধ্যায়কে সামনে তুলে আনা উচিত নয়। সচরাচর সম্পর্কের জায়গায় নিজের অবস্থানকে সংকীর্ণ ভাবাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। সাবেকের প্রসঙ্গে আপনার সঙ্গী নিজেকে এক ধরনের তুলনামূলক অবস্থানে ভাবতে শুরু করেন। তাতে আখেরে মনোমালিন্য আর অস্বস্তিকর পরিবেশের সূচনা ঘটে।

আলোচনার প্রাসঙ্গিকতায় সাবেকের উল্লেখ আসাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু তাতেই বেঁধে যেতে পারে মন কষাকষির মতো পরিস্থিতি। তার প্রভাব খুব সামান্য বলে মনে হলেও দেখা দিতে পারে বড় সমস্যার। কারণটি আগেই বলেছি , সাবেকের প্রসঙ্গ উল্লেখেই আপনার সঙ্গী নিজেকে তুলনামূলক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেন। ঈর্ষা ও সন্দেহ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। অনেকে ভাবতে পারেন, আপনি তাকে নিয়ে খুশি নন তাই সময় পেলেই সাবেকের কথা ভাবছেন। নারী ও পুরুষভেদে সাবেকের প্রসঙ্গ নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় পার্থক্য আছে। তবে তার প্রভাবটুকু অনেকটা একইরকম থেকে যেতে পারে।

মূলত সম্পর্কে সাবেকের প্রসঙ্গে আপনার কি কি সমস্যা হতে পারে তা প্রথমে দেখে নেওয়া যাক। অন্তত এসব দেখে আপনি একটু সতর্ক হবেন, সাবেকের প্রসঙ্গ তুলে আনবেন না।

আপনার সঙ্গী ভাবতে পারেন সাবেকের সঙ্গে তাকে তুলনা করছেন

আপনার সঙ্গীর সঙ্গেই কোনো ভালো মুহূর্ত কাটাচ্ছেন। সেই পরিস্থিতির সৌন্দর্য তুলে ধরতেই হয়তো সাবেকের সঙ্গে কাটানো কোনো মুহূর্তের প্রসঙ্গ চলে এলো। আপনি বোঝাতে চেয়েছেন এই মুহূর্ত সেই মুহূর্ত থেকে বেশি পরিপূর্ণ। কিন্তু তাতে আদৌ আপনার সঙ্গীর প্রতিক্রিয়া ঠিক ভালো বলা যাবেনা। এ ধরনের পরিস্থিতিগুলো সচরাচর সঙ্গীকে খুশি করার জন্যে তৈরি করা হলেও তা সবসময় ভালো দিকে আগায় না।

আপনার সঙ্গী মানসিকভাবে আপনার সাবেকের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করতে শুরু করেন। এতে নিজেকে নিয়ে তার হীনমন্যতা যেমন আসে তেমনই মানসিকভাবে আপনি সাবেকের কাছেই আটকে আছেন এই সন্দেহের কাটা তার মনে বারবার খোঁচাতে শুরু করে। ফলে নিজেকে মানসিকভাবে তুলনার পর্যায়ে নিয়ে একসময় অপমানবোধ করতে শুরু করেন। যার ফলে ঝগড়া আর ছোটখাটো সন্দেহের প্রশ্ন আসতে শুরু করে। এতে আপনার সেই মুহূর্তটি ধূসর হয়ে উঠে।

তাই সঙ্গীর সামনে ভুলেও সাবেকের প্রসঙ্গ উল্লেখ না করাই ভালো। সঙ্গীর ইনসিকিউরিটি আপনার নিজে মানসিক পরিস্থিতির জন্যেও ভালো কিছু নয়। এমনকি আপনার সঙ্গীর জন্যেও ভালো কিছু না। তাই নিজের অতীত সম্পর্ক নিয়ে যতদূর সম্ভব কম তথ্য দিন। একথা মনে রাখুন, সঙ্গত কারণেই সে আপনার সাবেক – বর্তমান কেউ নন। অতীতকে অতীতেই রাখুন।

আপনার বর্তমান সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে

হয়তো সাবেকের প্রসঙ্গ সামান্য কিছু সময়ের জন্যে মনোমালিন্যের সূত্রপাত ঘটিয়েছে। একসময় আপনি নিজের ভুলটি হয়তো বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। কিন্তু তবুও সম্পর্কের স্বাভাবিকতা কিছুটা হলেও নষ্ট হতে শুরু করে। প্রথমেই বলেছি, আপনার সঙ্গী কিছু সময়ের জন্যে ভাবতেই পারেন আপনি সাবেকের সঙ্গে বর্তমানের তুলনা টেনে আনছেন। পরবর্তীতে যখন তা অপমানের অনুভূতিতে রূপ নেয় তখন আপনার সম্পর্কে সহজ ও স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে দেয়না।

আপনার সঙ্গে তার আচরণে সে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতে শুরু করে। যা কিনা আপনাদের মাঝে যোগাযোগ ব্যহত করে। অনেক ক্ষেত্রে সন্দেহের তীর আপনার দিকে আসতে শুরু করে ও অমূলক সন্দেহ থেকে তা বিচ্ছেদের দিকে আগায়। বিশেষত সংসার হলে সেই পরিস্থিতিতে দুটো পরিবার একত্রিত হতে থাকে। এতে সামান্য প্রেক্ষাপট এক বিরাট সংকটে রূপ নেয়।

আপনার সঙ্গীর বিষণ্নতা ডেকে আনতে পারে

যেকোনো সম্পর্কেই তর্ক আসবে। সেই তর্কের গতিবিধিও অবশ্য স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। আমার সাবেক এরকম কখনই করেনি। আবার সাবেক আমার উপর আরও বিশ্বাস রাখতো। এসব শব্দ প্রায়শই আপনার বর্তমান সঙ্গীর মাঝে বিষণ্ণতা ও অস্বস্তি ডেকে আনতে পারে। হ্যাঁ, অনেক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই সাবেকের প্রসঙ্গ তোলাটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় না। কিন্তু তবু যতদূর সম্ভব এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়াই উচিত।

সন্দেহের তীর আপনার দিকে

সাবেকের প্রসঙ্গ যেকোনোভাবেই আসতে পারে। আর সাবেকের প্রসঙ্গ এলেই তার সঙ্গে আপনার যোগাযোগের সূত্র খুঁজে পাওয়ার সন্দেহটুকু এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। তখন প্রতিনিয়ত আপনাকে হতে হয় নানাবিধ প্রশ্নের মুখোমুখি। এমনকি তাতে আপনার প্রাইভেসিও নষ্ট হতে পারে। এরকম কিছু মোটেও আপনার মানসিক শান্তির জন্যে ভালো কিছু নয়। শুধু আপনি নন, আপনার সঙ্গীরও মানসিক অবস্থা ভালো থাকেনা।

এসব ক্ষেত্রে হয়তো বিষয়গুলো বিরক্তিকর লাগতে পারে। কিন্তু একবার আপনার সঙ্গীর কথাই ভেবে দেখুন। তার মানসিক অবস্থা ও ইনসিকিউরিটির কথা ভাবলেই বুঝতে পারবেন কতটা অস্বস্তিকর অবস্থা হতে পারে। সম্পর্ক-ভেদে এমনটা যে কারো ক্ষেত্রেই হতে পারে। তাই সুযোগ পেলেই তার সাথে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলুন। চেষ্টা করুন বোঝানোর।

সংসার ও আপনার পরিবেশ বিঘ্নিত হতে পারে

সাবেকের প্রসঙ্গে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়তো সংসারেই দেখা দিতে পারে। সংসারে আপনার রয়েছে কিছু দায়। সেই দায় শুধুমাত্র আপনার সঙ্গীর প্রতিই না। আপনার সঙ্গীর পরিবার ও তার পরিবেশকে কেন্দ্র করেও। যখন সাবেকের প্রসঙ্গটি বাজে দিকে মোড় নেয় তখন স্বভাবতই আপনার পরিবার ও চারপাশের মানুষজন অন্তর্ভুক্ত হতে শুরু করেন। এতে আপনাদের শান্তি যেমন বিঘ্নিত হয় তেমনই আপনার নিজস্ব অবস্থানও ভাঙতে শুরু করে।

প্রতিনিয়ত আপনার পরিবারে ঝগড়া ও অশান্তি লেগে থাকলে তার পরিবার সন্তানদের উপর পড়ে। তাদের যেমন সুস্থ পারিবারিক জীবন নিশ্চিত করা অসম্ভব হয়ে পরে তেমনই সংসারে আপনার মনোযোগও কমে যেতে শুরু করে। তাই সংসার জীবনে সাবেককে একদমই গোপনে রেখে দেয়াই ভালো। এমনকি তার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখারও কোনো প্রয়োজন নেই।

সঙ্গীকে ঈর্ষান্বিত করারই প্রয়োজন নেই

অনেকে সচরাচর সঙ্গীর মনে ঈর্ষা জাগাতে সাবেকের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বিশেষত নতুন সম্পর্কের শুরুতে অনেকেই এমনটা করে থাকেন। কিন্তু সম্পর্ক কিছুদূর পুরোনো হতেই এসব বিষয় সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। নিজের সঙ্গীর সাথে সময় কাটানোর সময় এসকল প্রসঙ্গ টেনে আনার কোনো মানেই নেই। মুহূর্ত তৈরির জন্যে অনেক উপায় আছে। কিন্তু অতীতকে ব্যবহার করে বর্তমানের ভবিষ্যৎকে বিশ্রী করার কোনো মানে নেই।

এটুকু তো নিশ্চিত – সম্পর্কে অন্তত সাবেকের প্রসঙ্গ টেনে আনাই উচিত নয়। এ বিষয়ে সবসময় কোনো না কোনো ঝামেলা লেগে থাকবেই। আপনার অতীত সম্পর্ককে যতদূর সম্ভব গভীর গোপন রাখাই শ্রেয়। যদিওবা প্রসঙ্গক্রমে তা চলে আসে তাহলে সাথে সাথেই বিষয়টিকে মীমাংসা করে ফেলা উচিত। নতুবা ভবিষ্যতে তা বড় অশান্তি হিসেবে রূপ নিবে। সাবেকের প্রসঙ্গ সবসময় আপনার বর্তমান সঙ্গীর জন্যে অপমানজনক। তাই সাবেকের প্রসঙ্গ টেনে না আনাই ভালো।

অনন্যা/এআই

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ