দেবী’র আগমন শরতেই হয়
প্রতি বছর শরতে দেবী দুর্গা ধরণীতে আসেন সকল অশুভ শক্তিকে নাশ করে শান্তি স্থাপন করতে। আজ থেকে ৫৮ বছর আগে শরতেই তিনি পৃথিবীতে এসেছিলেন, যিনি পরবর্তী সময়ে ভারতীয় চলচ্চিত্রের প্রচলিত ধারা পরিবর্তন করে বাংলা সিনেমায় শুরু করেছিলেন নতুন এক যুগ। তিনি হলেন আমাদের সবার প্রিয় ঋতুপর্ণ ঘোষ।
ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতে পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ একজন স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। কেবল পরিচালক হিসাবেই নয় অভিনেতা, গীতিকার, লেখক হিসাবেও তাঁর প্রতিভা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাঁর ৫৮ তম জন্মদিন আজ।
১৯৬৩ সালে আজকের দিনেই কলকাতায় জন্ম হয় ঋতুপর্ণ ঘোষের। বাবা সুনীল ঘোষ ছিলেন তথ্যচিত্র- নির্মাতা ও চিত্রকর। তাঁর মা ও চলচ্চিত্র জগতের সাথে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র হিসেবে বেশ মেধাবী ছিলেন ঋতুপর্ণ। সাউথ পয়েন্ট হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করার পর, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এই সময় থেকেই তাঁর সিনেমার প্রতি আগ্রহ প্রকাশ পেতে থাকে।
ঋতুপর্ণ ঘোষের কর্মজীবন শুরু হয় বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপিরাইটার হিসেবে। সেসময় বেশ কিছু জনপ্রিয় এক লাইনের শ্লোগান লিখে দিয়েছিলেন তিনি। ’৮০ এর দশকে তিনিই প্রথম কলকাতার বিজ্ঞাপন জগতে বাংলা লাইনে বিজ্ঞাপন লেখা শুরু করেন। তৎকালীন সময়ে "বরোলিন" এর বিখ্যাত এক লাইনের বাংলায় কপি লেখার পথিকৃৎ এই ঘোষবাবুই ছিলেন। কলকাতার বিজ্ঞাপন জগতের পট পরিবর্তনেও তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন।
১৯৯২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হিরের আংটি’ সিনেমার মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্র পরিচালনার জগতে প্রবেশ হয়। এটি ছিল ছোটোদের চলচ্চিত্র। সিনেমাটি তৈরি হয়েছিল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের একটি উপন্যাস অবলম্বনে। এতে অভিনয় করেছিলেন বসন্ত চৌধুরী, মুনমুন সেনসহ আরও অনেকে। এরপর একের পর এক মাস্টারপিস পরিবেশন করতে থাকেন তিনি।
দ্বিতীয় ছবি 'উনিশে এপ্রিল' মুক্তি পায় ১৯৯৪ সালে। এই ছবির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পান। তার পরিচালিত উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হল রেনকোট, চোখের বালি, চিত্রাঙ্গদা, অন্তর মহল, খেলা, সব চরিত্র কাল্পনিক, দোসর, দ্য লাস্ট লিয়ার, আবহমান, তিতলি, অসুখ, উৎসব, শুভ মহরৎ, খেলা, সত্যান্বেষী।
তাঁর পরিচালিত একাধিক সিনেমার জন্য জাতীয় পুরস্কার-সহ বহু আন্তর্জাতিক সম্মানেও সম্মানিত হয়েছেন। দুই দশকের কর্মজীবনে তিনি বারোটি জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ এবং সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি তাঁর কাজের উপর গভীরভাবে লক্ষ্য করা যেত।
তাঁর ব্যক্তিত্বের আরেকটি বিশেষত্ব হল তিনি সকলের সামনেই তাঁর সমকামি হওয়া স্বীকার করেছেন, যা চলচ্চিত্র জগতে খুব একটা দেখা যায়না।
২০১৩ সালের ৩০ মে কলকাতায় নিজ বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই কিংবদন্তি আমাদের ছেড়ে চলে যান। আজ তিনি আমাদের মাঝে না থাকলেও তাঁর অমর সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি চিরকাল আমাদের মাঝে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।