Skip to content

৮ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ২৫শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিমির মত ডায়নোসর এবার চিনে!

স্টিভেন স্পিলবার্গের জুরাসিক পার্ক ছবি থেকেই হয়ত মানুষের মনে তৈরি হয় সেই বিশালাকৃতি জন্তুটির ছবি। ছোট থেক বড়, সকলেরই ডায়নোসরের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ওই ছবিতেই। পৃথিবীর ইতিহাসের বিলুপ্ত ডায়নোসরের হারিয়ে যাওয়ার কথা সবাই জানি। বিবর্তনের ধারায় পৃথিবী যখন তাদের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরে ঠিক তখন থেকেই হারিয়ে যেতে থাকে এই বিশালাকৃতির প্রাণীগুলো। তবে কোটি কোটি পার হয়ে নতুন করে দেখা মিলল সেই হারিয়ে যাওয়া ডায়নোসরের।

 

চিনে খোঁজ মিলল দুটি নয়া প্রজাতির ডায়নোসরের। নয়া একটি গবেষণাপত্রে এমনই দাবি করা হয়েছে। সায়েন্টিফিক রিপোর্টসে প্রকাশিত ওই গবেষণা অনুযায়ী, উত্তর-পশ্চিম চিনে ওই দুটি নয়া প্রজাতির খোঁজ মিলেছে। যেখানে কখনও ডায়নোসরের জীবাশ্ম পাওয়া যায়নি। তবে ওই অঞ্চলে মাটির তলায় ডিম-সহ ডায়নোসরের বাসা থাকতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।

 

চিনা বিজ্ঞান অ্যাকাডেমি এবং ব্রাজিলের জাতীয় জাদুঘরের গবেষকরা জানিয়েছেন, দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটারের ব্যবধানে চিনা তুরপান-হামি অববাহিকায় তিনটি ভিন্ন ডায়নোসরের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে। যেগুলি ১২০ মিলিয়ন থেকে ১৩০ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে ছিল। শিনজিয়াঙে যে প্রজাতির হদিশ মিলেছে, সেটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘Silutitan sinensis’ বা ‘silu’ এবং ‘Hamititan xinjiangensis’। চিনা ভাষায় ‘Silu’-র অর্থ হল সিল্ক রোড। ‘পূর্ব এবং পশ্চিমে সংযোগকারী বাণিজ্য পথের স্মরণে’ সেই নামকরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ‘Hamititan xinjiangensis’-এর নামকরণ হয়েছে ‘Hami’ থেকে। ‘Hami’ বলতে হামি শহরকে বোঝানো হয়েছে। সেখান থেকে ডায়নোসরের জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে।

 

গবেষণাপত্রে জানানো হয়েছে, ‘Silutitan sinensis’ হল ‘sauropod’-র নয়া প্রজাতির ডায়নোসরের। যেগুলি লম্বা গলা-বিশিষ্ট গাছ খাওয়া ডায়নোসর ছিল। সেই প্রজাতির ডায়নোসরের লম্বা লেজ, বড় দেহ এবং ছোটো মাথা থাকত। ৬৫.৬ ফুটেরও বেশি লম্বা ছিল।

 

নয়া প্রজাতির এই ডায়নোসরের গলার কাছে এমন বৈশিষ্ট্য আছে, যা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে যে তা ‘sauropod’-র ‘Euhelopodidae’ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। যে প্রজাতির ডায়নোসরের জীবাশ্মের হদিশ এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া গিয়েছে।

 

‘Hamititan xinjiangensis’-এর ক্ষেত্রে গবেষকরা জানিয়েছেন, সেই প্রজাতির ডায়নোসর সম্ভবত ৫৫ ফুটেরও বেশি লম্বা ছিল। অর্থাৎ দৈর্ঘ্যে সেই প্রজাতির ডায়নোসর প্রায় নীল তিমির মতো লম্বা ছিল। যে ডায়নোসরের সঙ্গে দক্ষিণ আমেরিকার ‘sauropod’-র বৈশিষ্ট্যের কিছুটা মিল আছে। এই ডায়নোসরের গলার কাছে এমন বৈশিষ্ট্য আছে, যা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে যে তা ‘Titanosaurs’ প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। যা এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকায় প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। 

 

গবেষকরা জানিয়েছেন, তৃতীয় প্রজাতির ডায়নোসর সম্ভবত ‘somphospondylan sauropod’-এর অন্তর্গত। যে প্রজাতির ১৬০.৩ মিলিয়ন বছর আগে জুরাসিক কাল থেকে ৬৬ মিলিয়ন পর্যন্ত পৃথিবীতে অস্তিত্ব ছিল।

 

বিষয়টি নিয়ে অন্যতম গবেষক তথা রিও ডি জেনেইরোতে অবস্থিত ব্রাজিলের জাতীয় জাদুঘরের অধিকর্তা আলেকজেন্ডার কেননার এবিসি নিউজকে বলেছেন, ‘আমরা গবেষণার ওই অংশটা নিয়ে খুবই আগ্রহী। এটা এক ধরনের ধাঁধা, যা বুঝতে হবে। কীভাবে এই দক্ষিণ আমেরিকার ডায়নোসর এশিয়ায় গেল?’

 

তিনি জানিয়েছেন, আরও তথ্য পাওয়ার জন্য খননকার্য চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। উত্তর-পশ্চিম চিনের ওই অঞ্চলে মাটির তলায় ডিম-সহ ডায়নোসরের বাসা থাকতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। কেলনার বলেন, ‘ওখানে ডায়নোসরের বাসা পাওয়ার স্বপ্ন দেখছি আমরা। এখনও পর্যন্ত ওটাই আমাদের সবথেকে বড় আশা।’

 

হয়তো আবার নতুন করে এই শতাব্দীতে আবির্ভাব হতে পারে নতুন ডায়নোসরের। রূপকথার গল্প কিংবা ইংলিশ মুভি নয় বাস্তবে ফিরে আস্তে চলছে বিলুপ্ত ডায়নোসর। ২৩ কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত ডায়নোসরের নতুন কোন তথ্য দিয়েই হয়তো অবাক করতে পারেন বিজ্ঞানীরা।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ