পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা কেঁচো!
আমার অনেকেই জানি কেঁচো কে বলা হয়ে থাকে প্রকৃতির লাঙল। কেঁচো মাটির বিভিন্ন স্তর ছিদ্র করে চলাচল করে ফলে কৃষক এর দেওয়া সার ও অন্যান্য পুষ্টি মাটির স্তর গুলোয় পৌঁছে যায়।এর ফলে গাছ মূলের সাহায্যে পুষ্টি,পানি ও অক্সিজেন প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রহণ করে।ফলশ্রুতিতে ফলন ও ভাল হয়।তাই কেঁচোকে কৃষক এর বন্ধু বলা হয়। তবে স্বাভাবিক ভাবে একটি কেঁচোর যে আকার হয়ে থাকে তার রেকর্ড ভাঙল এবার পৃথিবীর সবচেয়ে লম্বা কেঁচো।
মনে প্রশ্ন আসতে পারে একটা কেঁচো কত লম্বা হতে পারে? নাকি নিছকই গল্প? প্রকৃতিতে কি আদৌ এর কোন অস্তিত্ব রয়েছে? তবে এসব প্রশ্নের উওর মিলবে এবার অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের গিপসল্যান্ডে ব্যাস নদীর উপত্যকায়। যেখানে পাওয়া যায় সবচেয়ে লম্বা কেঁচো। এর দৈর্ঘ্য হতে পারে ৬ দশমিক ৬ ফুট পর্যন্ত। সারা বিশ্বে ৪০০০ প্রজাতির কেঁচো পাওয়া যায় যার মধ্যে এক অষ্ট্রেলিয়াতেই পাওয়া যায় ১০০০ প্রজাতির কেঁচো।
বিশালাকার এই জিপসল্যান্ড কেঁচো পৃথিবীর অন্যতম কৌশলী এবং অদ্ভুত সৃষ্টি। মাটির উপরে এর দেখা পাওয়া বিরল ঘটনা। বিশালাকার এই কেঁচো দেখতে পাওয়া যায় মাত্র ১৫০ বর্গ মাইল এলাকায়। এক সময়ে এলাকাটি ঘন জঙ্গলে পূর্ণ থাকলেও বর্তমানে এটি সম্পূর্ণ কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে।
১৮০০ শতকে প্রথম এই কেঁচোটির সন্ধান পাওয়া যায়। ওই সময়ে রেল লাইনের জরিপ কর্মীরা দুর্ঘটনাক্রমে এই প্রজাতিটির দেখা পায়। তাদের ধারণা ছিল এটি হয়তো কোনও প্রকার সাপ। পরে তারা সেটিকে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি নিশ্চিত করেন এটি বিশালাকৃতি পাওয়া কেঁচো।
নরম ত্বকের এই কেঁচো স্থায়ীভাবে আর্দ্র এলাকায় বসবাস করে। বিশালাকার আর মাটি চাষের ক্ষমতার কারণে জিপসল্যান্ড কেঁচো অদ্ভুত শব্দ তৈরি করতে পারে। এই শব্দ মাটির উপর থেকেও শোনা যায়। ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া, শৈবাল আর ছোট ছোট পোকামাকড় খেতে এই কেঁচো মাটির পাঁচ ফুট গভীর পর্যন্ত যেতে পারে। কেবল ভারি বৃষ্টিতে নিজের থাকার জায়গা প্লাবিত হয়ে গেলে এই কেঁচো মাটির উপরে উঠে আসে।
বছরে কেবল একটি ডিম দেয় এই কেঁচোর এক বছরে একটি বাচ্চার জন্ম হয়। জন্মের সময় প্রায় এক ফুট দীর্ঘ হয় এই কেঁচো। তবে জীবনকালের বাকি সময়ে এটি খুব ধীরে বাড়ে। এই কেঁচো প্রায় দশ বছর বা তার চেয়েও বেশি সময় বেঁচে থাকে। এদের জীবন কাল বেশ দীর্ঘ। এদের বয়স যখন সবে মাত্র ৫ হয় তখন এরা কেবল মাত্র যৌবনে পা দেয়।
প্রকৃতিবিজ্ঞানীদের মতে, এই অমেরুদণ্ডী প্রাণীটির স্থান ডাইনোসরেরও ওপরে। কারণ কেঁচোর প্রকৃতির প্রতি ভূমিকা হয়তো বলে শেষ করা সম্ভব না। তাই এসব বিলুপ্তির পথে প্রাণীগুলোর সংরক্ষণ চিন্তা এখন থেকেই জরুরি।