খরা কাটাতে ব্যবহৃত পানির পুনর্ব্যবহার
প্ল্যান্টের পানি কি পানের উপযুক্ত? স্পেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের টরডেরা এলাকার একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের কর্মীরা সেটাই যাচাই করছেন৷
পানি সমস্যা কাটাতে অঞ্চলটির মানুষ সাগরের জল থেকে লবণ সরানোকে সমাধান ভাবছেন৷ পাশাপাশি নোনা জলে থাকা অন্যান্য উপাদানের পরিমানও যাচাই হচ্ছে৷
আইটিএএম টরডেরার ডেপুটি প্ল্যান্ট ম্যানেজার মিকেল পুমাওলা গার্সিয়া এই বিষয়ে বলেন, ‘‘উপাদানের মাত্রার উপর নির্ভর করে আপনি বুঝতে পারবেন প্রক্রিয়াটির কিছু অংশ ঠিকভাবে কাজ করছে না৷ তখন ভুল মাত্রা দেখে পদক্ষেপ নিতে পারেন৷ অন্যভাবে বললে পরীক্ষাগারের কর্মীরা যন্ত্রচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তখন তারা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেন৷”
এটি একটি কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়া, কিন্তু প্রয়োজনীয়৷ প্ল্যান্টটির প্রক্রিয়াতে ব্যবহৃত অর্ধেকের বেশি নোনা জল আবার সাগরেই ফেলা হয়৷ আর বাকিটা আশেপাশের মানুষদেরকে সরবরাহ করা হয়৷
২০০২ সালে প্ল্যান্টটি চালুর পর থেকে এখানে কাজ করছেন মিকেল পুমাওলা গার্সিয়া৷ ইতোমধ্যে এটির ক্ষমতা দ্বিগুণ হয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি আসলে একটি পর্যটন এলাকা এবং একই সঙ্গে কৃষিপ্রধান অঞ্চল৷ আর নদী ধরে সামনে গেলে দেখবেন রাসায়নিক কারখানা রয়েছে, সেখানে পানি দরকার৷”
খরা কাটাতে চলতি দশকের শেষ নাগাদ পানি পরিশোধনাগারটির কর্মক্ষমতা তিনগুণ করতে চায় অঞ্চলের সরকার৷ তবে সাগরের জল নোনামুক্ত করা ব্যয়বহুল ব্যাপার৷ মিকেল পুমাওলা গার্সিয়া বলেন, ‘‘চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে জ্বালানি খরচ কমিয়ে একই পরিমান বা বেশি পানি পরিষ্কার করা, যাতে প্ল্যান্টের সক্ষমতা বাড়ে৷ সর্বাধুনিক প্ল্যান্টগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ তবে বিষয়টি জটিল৷”
টরডেরা নদীর পানি অনেক শুকিয়ে গেছে৷ কাতালোনিয়াতে গত চার বছর ধরে বৃষ্টিপাত অনেক কম হচ্ছে বলে এই পরিস্থিতি৷ জলাধারের স্তরও গত কয়েকবছরে বেশ কমেছে৷ এখানকার বাসিন্দাদেরকে পানির ব্যবহার সীমিত করতে নানাভাবে উৎসাহিত করা হচ্ছে৷
কাতালান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেরিটেল সারেত বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং জলবায়ু সংকটের প্রভাব যে বিশ্বের অন্যান্য অংশের চেয়ে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বেশি তা এক বাস্তবতা৷ অতীতেও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে খরা হয়েছে কিন্তু সেসবের ব্যাপ্তি এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির তীব্রতা অনেক বেড়ে গেছে৷ এই পরিবর্তন নজিরবিহীন৷”
জল সাশ্রয়ের সম্ভাব্য এক সমাধান দিচ্ছে সাম্বা হোটেল৷ ২৫ বছর আগে সংস্কারের সময় হোটেলটিতে আলাদা পাইপ বসানো হয়েছিল৷ যেমন, গোসলে ব্যবহৃত পানি আলাদা পাইপে নিয়ে তা টয়লেটে ব্যবহার করা হয়৷ বেসমেন্টে সেই পানি পরিশোধন করা হয়৷
হোটেল কর্তৃপক্ষের হিসেবে তারা এভাবে দেড় কোটি লিটার পানি সাশ্রয় করেছে এবং বেশ কিছু টাকাও সাশ্রয় করেছে৷
সাম্বা হোটেলের সাসটেইনিবিলিটি ম্যানেজার লাওরা পেরেজ ফ্লোরেস বলেন, ‘‘আমি মনে করি, যেসব হোটেল ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে, সেগুলো সংস্কারের সময় এই বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে৷ আর নির্মাণাধীন নতুন সব হোটেলে এই ব্যবস্থা বসানো বাধ্যতামূলক করা উচিত৷”
পানি সাশ্রয়ের নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও মনোযোগ আকর্ষণ করছে৷ জানলুইজি বুটলিয়ারি সাম্বা হোটেলে ব্যবহৃত গ্রে-ওয়াটার উদ্ভিদ এবং মাটির মাধ্যমে পরিষ্কার করার এক পদ্ধতি যাচাই করেছেন৷ তিনি এর প্রক্রিয়ায় এখন পুদিনার মতো খাওয়া যায় এমন উদ্ভিদ ব্যবহার করতে চাচ্ছেন৷
কাতালান ইন্সটিটিউট ফর ওয়াটার রিসার্চের বিজ্ঞানী জানলুইজি বুটলিয়ারি বলেন, ‘‘আমরা বোঝার চেষ্টা করছি, এই উদ্ভিদ মানুষের খাবার হিসেবে নিরাপদ কিনা৷ আমরা এটা এখনো জানি না, জানতে আরো অনুসন্ধান করতে হবে৷ এটা ভবিষ্যতে গবেষণার একটি বিষয়৷ তবে যদি একইসঙ্গে পানি পরিশোধন করে পুনরায় ব্যবহার করা যায় আর সেই প্রক্রিয়ায় মানুষ খেতে পারবে এবং অন্য কাজে লাগবে এমন উদ্ভিদও চাষ করা যায় তাহলে খুব ভালো হবে৷”
সাগরের জল লবণমুক্ত করার প্ল্যান্ট কাজ করে যাচ্ছে৷ তবে বেড়ে চলা খরার বিপরীতে বর্তমান এই প্রক্রিয়া কতদিন সংশ্লিষ্ট এলাকাকে সহায়তা করতে পারবে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে৷
অনন্যা/এআই