Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিস্টার বিন: নির্বাক চলচ্চিত্রের যাদুকর

মিস্টার বিন একজন এমন কৌতুক অভিনেতা যাকে উনিশ শতাব্দীর শেষের সময় থেকে আজকের সময় অব্দি পৃথিবীর সকল মানুষ ছোট কিংবা বড়ো সকলে ভালোবাসে। মিস্টার বিন দুনিয়াকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন কমেডি করার জন্য শুধু কথার প্রয়োজন হয় না। আসল কমেডি সেটাও হয় যা কোন কিছু না বলেও মানুষকে হাসায়।

 

Mr Bean নামে বহুল পরিচিত এই মানুষটির বাস্তবিক নাম কিন্তু রোয়ান অ্যাটকিনসন (Rowan Atkinson) অভিনয় জীবনে Mr Bean নামক ধারাবাহিকে অভিনয়ে পর ব্যাপক জনপ্রিয়তায় তার পারিবারিক নামের থেকে মিস্টার বিন নামে তিনি বেশি জনপ্রিয়।

 

মিস্টার বিন, ৬ জানুয়ারি ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম এরিক অ্যাটকিনসন এবং মায়ের নাম এলা মে। তার বাবা এরিক অ্যাটকিনসন একজন কৃষক এবং একটি কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট মি. বিন।

 

মানুষ হাসানোর এই কারিগর পড়াশোনায় খুবই ভালো ছিলেন। প্রাথমিক পড়াশোনা করেছেন ডারহ্যামের কোরিস্টার্স স্কুলে। এরপর সেন্ট বিস স্কুলে। ১৯৭৫ সালে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে মাস্টার্স করেন এবং কুইন্স কলেজ থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০৬ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানজনক ফেলো ডিগ্রি অর্জন করেন।

 

অন্যান্য সফল ও কিংবদন্তী মানুষগুলির মতই মিস্টার বিনকে তার ভিতরের প্রতিভাকে আবিষ্কার করার পরে সেটা সকলের সামনে প্রমাণ করতে ও প্রশংসা অর্জনে নিরলস পরিশ্রম করতে হয়েছে।

 

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়ন কালে মিস্টার বিনকে বলা হয়েছিল একটি ড্রামা তৈরি করার জন্য এবং সকলের সামনে অভিনয় করার জন্য। এই পরিস্থিতিতে মিস্টার বিন আয়নার সামনে বিভিন্ন অঙ্গ ভঙ্গি করতে থাকেন এবং সেটাই সকলের সামনে উপস্থাপনা করার মনস্থির করেন। তার উপস্থাপনা সকলের কাছে এতটাই ভাল লেগেছিল যে এই ঘটনা পরবর্তীতে তাকে অভিনয়ের জগতে আসতে আগ্রহ প্রদান করে। 

 

১৯৯০ সালে ‘মি. বিন’ নিয়ে টেলিভিশন পর্দায় হাজির হন রোয়ান অ্যাটকিনসন। মি. বিন মূলত ১৪ পর্বের একটি হাস্যরসাত্মক ব্রিটিশ টিভি ধারাবাহিক। আইটিভি নামক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এর প্রথম পর্বটি প্রচারিত হয় ১৯৯০ সালের প্রথম দিনটিতে। শেষ পর্বটির নাম 'হেয়ার বাই মি. বিন অব লন্ডন'। প্রথমে শুধু টিভি সিরিয়াল থাকলেও মি. বিন নিয়ে সিনেমা এমনকি কার্টুনও নির্মিত হয়েছে এবং মি. বিন প্রতিটি ক্ষেত্রেই অসম্ভব জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। টানা বিশ বছর রোয়ান এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন। 

 

তিনি দ্যা ব্ল্যাক অ্যাডার এবং ফানি বিজনেসসহ বেশ কয়েকটি তুমুল জনপ্রিয় টিভি সিরিজে নিয়মিত অভিনয় করেন। কিন্তু সবগুলোকে ছাড়িয়ে যায় ‘মি. বিন’। এমনকি নিজের নামটাকেও হারাতে হয় রোয়ান অ্যাটকিনসনকে। তারই তালগোল পাকানো কাণ্ড-কারখানায় ভরপুর এ ব্রিটিশ কমেডি সিরিজের লেখক হলেন রবিন ড্রিসকল এবং রোয়ান অ্যাটকিনসন নিজে। ১৯৯৭ সালে ‘বিন: দ্য আলটিমেট ডিজাস্টার মুভি’ এবং ২০০৭ সালে ‘মিস্টার বিন’স হলিডে’ চলচ্চিত্র দুটি মুক্তি পায়। এছাড়া যুক্তরাজ্যের ‘আইটিভি ওয়ান’ চ্যানেলে ২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ‘মিস্টার বিন’ কার্টুন প্রচারিত হয়।

 

২০১২ সালের নভেম্বরে রোয়ান অ্যাটকিনসন ডেইলি টেলিগ্রাফকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিন চরিত্রে আর হাজির না হওয়ার ঘোষণা দেন। কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন এই চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার জন্য যে শারীরিক শক্তির প্রয়োজন হয় সেটি আজকাল আর তিনি পাচ্ছেন না। এছাড়া একজন পঞ্চাশ ঊর্ধ্বের ব্যক্তিকে শিশুসুলভ অভিনয় করাটা একেবারেই বেমানান। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সিরিয়াসধর্মী চরিত্রগুলোতেই শুধু অভিনয় করবে। সুতরাং এই চরিত্রে তাকে আর দেখা যাবে না কখনোই।

 

মিস্টার বিন চরিত্রে অভিনয় করার পরে সকলে তাকে চরিত্রের আসল মানুষ মিস্টার বিন ভাবতে শুরু করেন। তার আসল নামটি শুনলে অধিকাংশ মানুষ চমকিত হয়, চিনেন না।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ