করোনার টিকা এবং পিরিয়ড!
'কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন নিয়ে বিভ্রান্তি নয়
সঠিক তথ্যতে নিরাপদ জীবন দূর হোক ভয়'
করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে অসাধু ব্যবসায়ী থেকে বিভিন্ন পেশার মানুষেরা তাদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যস্ত। জীবন যেখানে সংকটের মুখে সেখানে ভুল এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির মানুষ। করোনার টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। তেমনই একটি গুঞ্জন হল, পিরিয়ড বা ঋতুচক্রে পরিবর্তন। অনেকে বলছেন, করোনার টিকা নিলে নারীদের পিরিয়ড দেরিতে হয় বা ঋতুচক্রে অন্যান্য প্রভাব পড়ে। এটা কি সত্য?
সম্প্রতি কিছু নারী দাবি করেছেন, করোনার টিকা তাদের পিরিয়ড স্থগিত করেছে বা ঋতুচক্রে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। তারা জানান- টিকা নেওয়াতে পিরিয়ড দেরিতে হয়েছে, পিরিয়ড পূর্ব উপসর্গের মাত্রা বেড়েছে, রক্তক্ষরণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বা কম হয়েছে এবং পিরিয়ড সংক্রান্ত আরো কিছু পরিবর্তন। এ ঘটনায় অনেক নারী করোনার টিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকছেন। এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তারা মনে করছেন যে, সন্তান ধারণের ক্ষমতাও চলে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার টিকা সরাসরি পিরিয়ড সংক্রান্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে তার পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, হরমোনের প্রভাবে নারীদের ইমিউন সিস্টেম ঋতুচক্রে পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
পুরুষের তুলনায় নারীর হরমোন বেশি পরিবর্তনশীল। ঋতুচক্রের সময় হরমোনতন্ত্রের পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। ডিম্বাণুর পূর্ণাঙ্গ গঠন ও নিঃসরণ সংক্রান্ত কাজে প্রচুর পরিমাণে হরমোন উৎপাদন হয়। যখন ডিম্বাণু নিঃসরণের সময় আসে তখন ইমিউন সিস্টেম সংক্রমণের জীবাণু প্রতিরোধের জন্য এক ধরনের বার্তা পায়, যেন সুষ্ঠুভাবে নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে। টিকা নিলেও নারীদের ইমিউন সিস্টেম এরকম বার্তা পেয়ে থাকে। এর প্রভাবে পিরিয়ড দেরিতে হতে পারে।
মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তায়ও পিরিয়ড বা ঋতুচক্র সংক্রান্ত পরিবর্তন হতে পারে। মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তায় ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ইমিউন সিস্টেম সম্পর্কিত অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রকৃত কারণ হল মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সঙ্গে টিকার প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, মানসিক চাপে পিরিয়ড বিলম্বিত হতে পারে বা ঋতুচক্রে অন্যান্য প্রভাব পড়তে পারে।
যারা টিকা নিতে যান তাদের অনেকেই প্রচুর মাত্রায় মানসিক চাপ বা উদ্বেগে ভুগেন। হয়তো এটাই হতে পারে দেরিতে পিরিয়ড হওয়ার কারণ। কিছু ওষুধও পিরিয়ডে বিলম্ব ঘটাতে পারে, যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড ও মানসিক সমস্যার ওষুধ। এটাকে কেমিক্যাল স্ট্রেস বলা হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টিকা সম্পর্কিত গুজবের প্রধান কারণ হল, অজ্ঞতা। গুজবে কান না দেওয়াই ভালো। দেখা গেল, গুজবে বিশ্বাস করে টিকা নিলেন না, কিছুদিন পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল। তাই কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি এড়াতে করোনার টিকা নেওয়ার কথা ভাবুন। তবে হ্যাঁ, টিকা নেওয়ার পর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে বেশ দুশ্চিন্তার মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এখনও পর্যন্ত টিকা গ্রহণের পর পিরিয়ড বা ঋতুচক্র সংক্রান্ত যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে তা ছিল সাময়িক। টিকা নিলে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যায় বা বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষা পেতে নারীদেরও টিকা নেওয়া উচিত। যারা বলে থাকেন পিরিয়ড চলাকালীন টিকা নেওয়া উচিত নয় তাদের কথাকে সমর্থনের জন্য কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তাই শোনা কথায় কান দিয়ে নয়, বিবেচনায় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের পরামর্শতে টিকা দিয়ে সুস্থ থাকুন।