Skip to content

৩রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | শুক্রবার | ২০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমলকির যত গুনাগুণ 

আমলকি একটি ভেষজ ফল। দেশীয় ফল হিসেবে আমলকি সবার কাছেই পরিচিত। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ । যা অন্যান্য ফলের তুলনায় অনেক বেশি। বিভিন্ন রকম রোগ নিরাময়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা ছাড়াও ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করার ক্ষেত্রেও আমলকির ভূমিকা যেন অপরিসীম । এটি দামে যেমন সস্তা ও সহজলভ্য, ঠিক তেমনি এর রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা।
  

 

আমলকির পুষ্টিগুণ

আমলকির রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ। এই গাছের পাতা ও ফল উভয়ই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। আমলকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। যা পেয়ারার চেয়ে ৩ গুণ, কাগজি লেবুর চেয়ে ১০ গুণ, কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি। একজন পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তির জন্য প্রতিদিন ৩০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ‘সি’ খাওয়া প্রয়োজন। অর্থাৎ দিনে যদি দুটো আমলকি খাওয়া যায় তাহলে ঐ পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ পেতে পারে। আবার আমলকি খেলে মুখে রুচিও বাড়ে।    
 

 

আমলকির বিভিন্ন ওষধি গুনাগুণ

 

আলসার চিকিৎসায় 
গ্যাস্ট্রিক বা আলসার নামটি প্রায় সকলেই জানেন। সাধারণত চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় গ্যাস্ট্রিক বা আলসার বলতে পেপটিক আলসার বোঝায়। নিয়মিত আমলকি খেলে এই সমস্যা দূর হয়ে যায়।  
 

 

দাঁতের মাড়িতে স্কার্ভি দূরীকরণে
দাঁতের মাড়ির খুব পরিচিত একটি রোগ স্কার্ভি। সাধারণত শরীরে ভিটামিন ‘সি’ এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। এ রোগ হলে দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত ঝরে, মাড়িতে ঘা, শরীর দুর্বল, চামড়ার নিচে রক্তক্ষরণ, চেহারা ফ্যাকাসে হওয়া সহ হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই কেউ যদি প্রতিদিন ১-২টি আমলকি খায় তাহলে, এসব সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে পারে।

 

কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলস চিকিৎসায় 
আমলকিতে থাকে সলিউবল ফাইবার। যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে এবং খাবার হজমে সাহায্য করে। আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পাইলস রোগ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। 

 

ক্ষুধামন্দা দূর করতে
প্রতিবার আমলকি খাওয়ার আগে মাখন ও মধুর সঙ্গে আমলকির গুঁড়া মিশিয়ে খেলে ক্ষুধামন্দা দূর হয়।

 

দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে 
আমলকিতে ভিটামিন ‘সি’ এর পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে  ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। যা দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি ঝরা, চুলকানি রোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে। আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি পায়।    
 

 

গলা ব্যথা এবং ঠাণ্ডা দূর করতে 
আমলকির গুড়ার সাথে মধু মিশিয়ে দিনে ৩-৪ বার খেলে তা গলা ব্যথা এবং ঠাণ্ডা দূর করতে সাহায্য করে। দীর্ঘমেয়াদী সর্দি- কাশির জন্য আমলকির নির্যাস উপকারী।

 

হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে
উচ্চ কোলেস্টেরল হৃদরোগের ঝুঁকিকে আরো বৃদ্ধি করে দেয়। আমলকি খারাপ কোলেস্টেরল দূর করে, ধমনী ব্লক খুলে দিতে সাহায্য করে। নিয়মিত আমলকি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস হয়।   

 

রক্তে সুগার কমাতে
আমলকিতে আরো রয়েছে পলিফেনল। যা রক্তে অক্সিডেটিভ শর্করা থেকে শরীরকে রক্ষা করে। শরীরে ইনসুলিন শুষে নিয়ে ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে। 

 

দেহের চর্বি কমাতে
ওজন হ্রাস করতে আমলকির সাহায্য নিতে পারেন। এটি নিয়মিত খাওয়ার ফলে শরীরের প্রোটিনের স্তর বৃদ্ধি করে, যা দেহের চর্বি কাটতে সাহায্য করে। তাই ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিন আমলকি খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।

 

হাড় মজবুত করতে 
আমলকিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম আছে। যা হাড় মজবুত করতেও সাহায্য করে।

 

রক্ত পরিষ্কার করতে
রক্ত পরিষ্কার করতে আমলকি বেশ কার্যকর। এর এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান  শরীর থেকে টক্সিন দূর করে দেয়। আমলকি রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।

 

চুলের যত্নে ও খুশকির সমস্যা দূর করতে 
আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে। চুলের যত্ন নেওয়ার জন্য এটি একটি অপরিহার্য উপাদান। আমলকি খেলে শুধু চুলের গোড়াই শক্ত হয় না, চুল দ্রুত বেড়ে ওঠে। চুলকে খুশকি মুক্ত ও কম বয়সে চুল পাকা রোধে আমলকি বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া আমলকি খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং মুখের চামড়ায় কোন দাগ পড়ে না।

 

আমলকি ত্বক, চুল ও চোখের যত্ন ছাড়াও ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগ প্রতিরোধেও রাখতে পারে বিরাট ভূমিকা। তাই শারীরিক সুস্থতায় প্রতিদিন অন্তত একটি আমলকি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ