Skip to content

৬ই মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | সোমবার | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমাদের বটবৃক্ষ

কখনো কখনো মনে হতো বাবার পরিচয়-
একজন পুরুষ, একজন শাসক।
তার কন্ঠনালী থেকে নির্গত শব্দধ্বনি যেন বজ্রপাত 
চোখের আঙ্খিগোলকে খেলা করত জ্বলন্ত সূর্য 
তার পদধ্বনিতে বেজে উঠত যুদ্ধের দামামা ।

 

ঘরের চৌকাঠ পেরোনোর বয়স হলো- 
পথে পথে দেখি বাবার পদচিহ্ন, আমরা নির্বিঘ্নে হেঁটে যেতাম ।
পুকুর ভরা পানির জলতরঙ্গে বাবার রক্ত খেলা করত-
আমরা হাঁসের মতো এপার থেকে ওপারে সাঁতার কাটতাম।

 

তীব্র গরমে যখন একটু ছায়া খুঁজতাম – 
বাবা হাত প্রশস্ত করে বটবৃক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকত,
কনকনে শীতে উষ্ণতার চাদর হয়ে যেত।

 

গাঢ় অন্ধকারে বাবা ঝলঝলে চাঁদ হয়ে ঝুলে থাকত মাথার উপর ।
ফসলের মাঠে সবুজের গায়ে শিশিরবিন্দুর মতো বাবার ঘাম লেগে থাকত।
জীবনের প্রচন্ড খরায় বাবা মেঘ হয়ে যেত, আমরা আনন্দে ভিজতাম;
ক্লান্তির শরীরে ঝিরিঝিরি বাতাস হয়ে গায়ে লেগে থাকত।

 

আমাদের গায়ে কাদা লাগতো বলেই বাবা সাবান হয়ে যেত,
পানি দিয়ে ঘষলেই সুগন্ধি ফেনা হয়ে ঝরে ঝরে পড়ত।
আমরা মসজিদভিটায় যেতাম না বলেই বাবা কবরস্থানে শুয়ে গেল,
দিয়ে গেল দুরন্ত ঘোড়ার মতো চলার শক্তি।

 

আমরা ঘরের বাইরে এসেই জেনেছি বাবা একটি বটবৃক্ষ, 
আরেকটু দূরে গিয়ে দেখেছি বাবা একটি নীল আকাশ ।
আমি যদি এই মহাবিশ্বের বাইরে গিয়ে দেখতে পারতাম ,
বাবা আরো কত্ত বিশাল হতে পারে!

সমস্ত বিশালতার বাইরে গিয়ে যদি দেখতে পারতাম ,
তবে বুঝতাম- বাবার পরিচয় আর কত কী থাকতে পারে!

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ