দৃষ্টিহীন ‘ঝাং’ এর এভারেস্ট জয়
৪৬ বছর বয়সী চীনের নাগরিক ঝাং হং।চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চংকুয়াং শহরে ঝাং জন্ম নেন। জন্মের সময়ও তিনি ছিলেন আর পাঁচটি স্বাভাবিক শিশুর মতোই। জন্মের পর থেকে ২১ বছর নিজের চোখে দেখেছেন পৃথিবীর সৌন্দর্য। তবে ঠিক নিজের ২১ বছর বয়সে গিয়ে হঠাৎই অন্ধকার হয়ে আসে তার পুরো পৃথিবী। ২১ বছর বয়সে গ্লুকোমার কারণে অন্ধ হয়ে যান।
তবে শরীরের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাকে আমরা দুর্বলতা হিসেবে ধরলেও এ বিষয়ে একদমই ভিন্ন মানসিকতার মানুষ ঝাং। অন্ধত্বকে বরণ করে ঘরে বসে থাকতে একদমই নারাজ তিনি। তাইতো অন্ধ হয়েও তিনি চোখ রেখেছেন ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার উঁচুতে। শুধু চোখ রেখেই ক্ষ্যান্ত হননি নিজের আত্মবিশ্বাসের জোরে পাড়ি জমিয়েছেন ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার উঁচু এভারেস্টের চূড়ায়।
ঝাং তার বন্ধু ও পর্বত আরোহণের গাইড কিয়াং জির কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর এভারেস্টের নেপালের দিক থেকে সামিটে অংশ নেন ঝ্যাং । ঝ্যাংয়ের সঙ্গে ছিলেন তিনজন দক্ষ গাইড। গত ২৪ মে ঝাং এভারেস্টের ৮ হাজার ৮৪৯ মিটার উঁচুতে ওঠেন। এরপর গত বৃহস্পতিবার তিনি সফলভাবে বেসক্যাম্পে ফিরে আসেন। তার এ সাফল্য প্রশংসা কুড়োচ্ছে পুরো বিশ্বজুড়ে।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আপনি পঙ্গু নাকি স্বাভাবিক, সেটি কোন বিষয় নয়। আপনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন কি না অথবা আপনার হাত বা পা নেই, এটিও কোনো বিষয় নয়। আসল কথা হল, আপনার মনোবল দৃঢ় কি না। মনোবল দৃঢ় থাকলে অন্যরা না পারলেও আপনি কাজ শেষ করতে পারবেন।’
তবে কোনো দৃষ্টিহীন ব্যক্তির এভারেস্ট জয় এবারই প্রথম নয়। এর আগেও দুজন দৃষ্টিহীন ব্যক্তি এভারেস্ট জয় করেছেন৷ প্রথম দৃষ্টিহীন ব্যক্তি হিসেবে ২০০১ সালে এভারেস্ট জয় করেন এরিক ওয়েহেনমায়ের নামের অন্ধ এক মার্কিন পর্বতারোহী। এরিক ছিলেন ঝাং এর অনুপ্রেরণা৷ তাকে দেখে ঝাং অনুপ্রাণিত হন এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার জন্য। এবং শত বাঁধা পেরিয়ে শেষমেশ জয় করেন এভারেস্ট।
ঝাং পৃথিবীর ৩য় অন্ধ ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন। এছাড়াও তিনি এশিয়া মহাদেশের প্রথম অন্ধ ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেছেন। তার এ সাফল্য প্রমাণ করে দিচ্ছে প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকলে সবই সম্ভব, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কেবল অজুহাত মাত্র। এগিয়ে যেতে দরকার দৃঢ় মনোবল আর ইচ্ছাশক্তি।