Skip to content

১লা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বুধবার | ১৮ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘করোনা বায়ুবাহিত’ প্রমাণ করলো ল্যানসেট

আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেট-এ প্রকাশিত একটি নতুন পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ রোগের জন্য দায়ী সার্স-কভ-২ ভাইরাস মূলত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ানোর ধারাবাহিক ও দৃঢ় প্রমাণ রয়েছে। বৈজ্ঞানিকভাবে জানান হয়েছে যে কেন এই SARS-CoV-2 ভাইরাসটি এত প্রবলভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রধান কারণ হল- এই ভাইরাস একেবারেই বায়ুবাহিত তাই। 

যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও কানাডার ছয় গবেষক যুক্ত আছেন এই গবেষণায়। নিজেদের দাবির পেছনে অন্তত ১০টি কারণ ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের বক্তব্য, জীবাণুটি বায়ুবাহিত হওয়ার পক্ষেই প্রমাণ বেশি। তারা এই পর্যালোচনাটি রিভিউ করেছেন এবং করোনা যে মূলত বায়ুবাহিত তার সপক্ষে প্রমাণস্বরূপ দশটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে দশটি কারণ যা প্রমাণ করে এটি আসলে বায়ুবাহিত রোগ।

 

প্রথম কারণ, এই গবেষকরা বলছেন এমন কিছু পরিবেশ আছে যেখানে হাঁচি, কাশির জলকণার মাধ্যমে কোনোভাবেই একজন থেকে আরেকজনের কাছে করোনাভাইরাস পৌঁছানোর কথা নয়, সেখানেও একজন থেকে আরেকজন সংক্রমিত হয়েছে, এমন প্রমাণ মিলেছে। উদাহরণ হিসেবে তারা প্রমোদ তরী, কসাইখানা, বৃদ্ধাশ্রম, সংশোধনাগার বা জেলখানার উদাহরণ দিয়েছেন যেখানে মানুষ আলাদা কক্ষে বা নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ ছিল। একজন আরেকজনকে হাঁচি কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ানোর কোনই সুযোগ ছিল না। তবুও অনেকেই সংক্রমিত হয়েছে। সুতরাং তারা ধারণা করছেন শুধুমাত্র বাতাসে প্রবাহিত হয়েই পুরো জায়গায় করোনা ছড়িয়েছে।

 

দ্বিতীয় কারণ, তারা বলছেন কোয়ারেনটাইনে হোটেলগুলোতে পাশাপাশি থাকা রুমের মানুষ একজন আরেকজন যাদের কখনও দেখা হয়নি, অর্থাৎ একজনের হাঁচি কাশি আরেকজনের কাছে পৌঁছানোর কোনই সম্ভাবনা নেই, তারাও পরস্পরকে সংক্রমিত করেছেন এমন প্রমাণ আছে। সুতরাং তারা মনে করছেন বাতাসের মাধ্যমেই একজনের কাছ থেকে আরেকজনে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে।

 

তৃতীয় কারণ, তারা বলছেন পৃথিবীতে সর্বমোট আক্রান্ত করোনা রোগীদের প্রায় ৫৯ শতাংশ উপসর্গ বিহীন ছিলেন। অর্থাৎ তারা হাঁচি কাশি দিয়েছেন, বা হাঁচি কাশি থেকে আক্রান্ত হয়েছেন এমন প্রমাণ নেই। তাহলে কিভাবে এত মানুষের মধ্যে করোনা ছড়াল? তাদের ধারণা বাতাসের মাধ্যমে।

 

চতুর্থ কারণ, গবেষকরা বলছেন করোনাভাইরাস ঘরের ভেতরে বেশি ছড়ায়, বাইরে নয়। ঘর বলতে তারা বোঝাচ্ছেন বদ্ধ জায়গা—যেমন বাসা, অফিস, গোডাউন, হোটেল ইত্যাদি। পার্ক, উন্মুক্ত জায়গা, মাঠ-ময়দান থেকে করোনা কম ছড়িয়েছে এমন প্রমাণ দেখা গেছে।

পঞ্চম কারণ, তারা চার নম্বরের পক্ষে উদাহরণ দিয়ে বলেছেন করোনাভাইরাস nosocomial infections এর মাধ্যমে বেশি ছড়ায়, অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট জায়গায়, যেমন হাসপাতালে। তারা বলছেন দেখা গেছে হাসপাতালে সমস্ত সুরক্ষা যেমন পিপিই পরেও স্বাস্থ্য কর্মীরা করোনা থেকে রক্ষা পাননি। এর কারণ, পিপিইসহ সকল প্রতিরক্ষাই মূলত জলকণা বাহিত সংক্রমণ ঠেকানোয় অধিক কার্যকরী, বায়ুবাহিততে ততটা নয়।

 

ষষ্ঠ কারণ, ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় বাতাসে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত করোনাভাইরাস থাকতে দেখা গেছে। করোনা রোগীর গাড়ির বাতাসেও এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। অর্থাৎ হাসপাতাল কক্ষ বা গাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যাওয়ার পরও ৩ ঘণ্টা এই ভাইরাস বাতাসে থাকতে পারে, যা প্রমাণ করে বায়ুবাহিত হয়ে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে।

 

সপ্তম কারণ, করোনা রোগী ছিল এমন হাসপাতাল কক্ষের ভেন্টিলেটরে, বাতাস পরিষ্কার করার ফিল্টারে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে।

 

অষ্টম কারণ, আলাদা বা ভিন্ন খাঁচায় রাখা করোনায় আক্রান্ত প্রাণী থেকে অনাক্রান্ত প্রাণীর মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রমাণ দেখা গেছে, যা বায়ু প্রবাহিত না হলে সম্ভব হতো না।

 

নবম কারণ, এমন কোন গবেষণা পাওয়া যায়নি যেটি সুনির্দিষ্ট করে বলতে পেরেছে যে করোনাভাইরাস বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায় না।

 

দশম কারণ, করোনাভাইরাস হাঁচি কাশির জলকণার মাধ্যমে ছড়ায় এমন কোন শক্তিশালী তথ্যপ্রমাণও কোন গবেষণায় পাওয়া যায়নি।

 

তাদের গবেষণা অনুযায়ী এই দশটি কারণ প্রমাণ করে করোনাভাইরাস বায়ুবাহিত। তারা আরো বলেছেন, যদিও অন্যান্য রুটগুলি অবদান রাখতে পারে, তবে বায়ুবাহিত রুটগুলিই বেশি প্রভাবশালী। তাই জনস্বাস্থ্যর উচিত আর দেরি না করে সেই অনুযায়ী কাজ করা।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ