Skip to content

২রা মে, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | বৃহস্পতিবার | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট!

বর্তমানে পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট হিসেবে স্বীকৃত ১০৪ বছর বয়সের কলিঙ্গ নারী ওয়াং ওড ওগগে ফিলিপাইনের কলিঙ্গ প্রদেশে বাস করছেন। তিনি মিরিয়া ওগে হিসেবেই বেশি পরিচিত। ফিলিপাইনের ঐতিহ্যবাহী কালিংগা ট্যাটুয়িস্টদের মাম্বাবাটক বলা হয়। তিনি পৃথিবীর সর্বশেষ মাম্বাবাটক। তার ট্যাটু পদ্ধতির ভিন্নতার জন্য তিনি বিখ্যাত। 

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট!

 

প্রতিদিনই এক কঠিন ও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অনেকেই আসে ওয়াং এর সাথে দেখা করতে। অনেকেই তার কাছ থেকে ট্যাটু করিয়ে নেয়। ওয়াং-ওড কয়েকটি সরঞ্জাম ব্যবহার করে দিনে একাধিক ট্যাটু আঁকেন — একটি পোমেলো গাছের কাঁটা, একটি দীর্ঘ দীর্ঘ বাঁশের কাঠি, কয়লা এবং জল। ওয়াং প্রতিদিন ভোরবেলা থেকেই বিভিন্ন দেশ থেকে আগত মানুষদের হাতে বোলা ট্যাটু করার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকেন। সাধারণত কাঠকয়লা এবং জলের মিশ্রণ ক্যালামানসি বা পোমেলো গাছের কাঁটা ব্যবহার করে ত্বকে আলতোভাবে চেপে লাগিয়ে দেয়া হয়। এই প্রাচীন কৌশলটি হাজার বছরের পুরানো এবং প্রচলিত কৌশলগুলির তুলনায় তুলনামূলক ভাবে বেদনাদায়ক। তিনি প্রকৃতি এবং মৌলিক জ্যামিতিক আকারে পাওয়া ডিজাইন ব্যবহার করেন। তার অসংখ্য সিগনেচার ট্যাটু রয়েছে। প্রতিটি শক্তি, সৌন্দর্য এবং উর্বরতার মতো অর্থ বহন করে।

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট!

 

২০১৭ সাল থেকে, তার স্বাক্ষর ট্যাটু তিনটি বিন্দুর সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে, যা নিজেকে এবং তার দুটি শিক্ষানবিশকে প্রতিনিধিত্ব করে, প্রবীণ থেকে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে শিল্পের রূপের ধারাবাহিকতা হিসাবে চিত্রিত হয়েছে।

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট!

 

ওয়াং গুড মাত্র ১৫ বছর বয়স থেকেই ট্যাটু আঁকা শুরু করেছিলো। তিনি তার বাবার কাছ থেকে এই শিল্প শিখেছিলেন। তার বাবা অঞ্চলে ট্যাটু আঁকার মাস্টার হিসাবে বিবেচিত ছিলেন। সেসময় কিছু নির্দিষ্ট বংশের পুরুষদেরই ট্যাটু আঁকা শেখার অধিকার ছিল। কিন্তু বিশেষ আগ্রহ ও প্রতিভার কারণে তার বাবা তাকে ট্যাটু আঁকা শিখিয়েছিল। হাত-বাঁধা এই শিল্পের সূচনা দেশীয় বাটবাট যোদ্ধাদের দিয়ে। পুরুষ যোদ্ধাদের জন্য এই ট্যাটু বিশেষ অর্থ বহন করতো। শত্রুকে হত্যা করার পরে এই কালি তাদের দেয়া হতো।

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট!

 

পরবর্তীতে নান্দনিকতার জন্য কলিঙ্গার বাসকালানে বাটবাট মহিলাদের উপর ট্যাটু প্রয়োগ এর প্রচলন করেছিলেন তিনি। তার তৈরি প্রতিটি ডিজাইনে মম্বাবাতোক সংস্কৃতির নির্দিষ্ট প্রতীকী অর্থ রয়েছে। যেমন- একজন যোদ্ধা যিনি শত্রুকে হত্যা করেছিলেন তাকে যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর তার শরীরে ঈগলের ট্যাটু আঁকা হতো। জানা যায়, এই ট্যাটুগুলো আঁকার সময় তিনি অলৌকিক মন্ত্র পাঠ করতেন। 

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট!

 

এখন আর সেই বাটবাটের যোদ্ধাদের অস্তিত্ব নেই। তবে তিনি পর্যটকদের ট্যাটু একে থাকেন। রায়ান রামোস, ড্রু আরেলানো, লিজা দিও এবং আইস সেগুয়েরাতসহ অনেকেই তার কাছে ট্যাটু করেছেন। কিন্তু এখন আর ট্যাটু আঁকার সময় অলৌকিক মন্ত্র পাঠ করেননা। আগে তিনি ট্যাটুর জন্য কোন টাকা নিতেননা। তবে ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী তিনি দিনে ৫০০০ মুদ্রা অর্জন করতেন। 

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট!

 

ওয়াং এর একজন প্রেমিক ছিল যার নাম অ্যাং বাটান। কিন্তু সমাজের অনেকেই এ সম্পর্ক মেনে নেয়না। পরবর্তীতে ২৫ বছর বয়সে অ্যাং একটি দুর্ঘটনায় মারা যায়। পরবর্তীতে ওয়াং কখনোই বিয়ে না করার শপথ গ্রহণ করেন। তাই তিনি আর বিয়ে করেননি।  

 

পৃথিবীর প্রাচীনতম ট্যাটু আর্টিস্ট!

 

মাম্বাবাটোক শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে ২০ জন তরুণকে ওয়াং ট্যাটু আঁকা শেখাচ্ছেন। সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা বিশ্বাস করে যে এই শিল্পটি কেবল রক্তের আত্মীয়দের কাছেই দেওয়া যেতে পারে। অন্যথায় এই ট্যাটুগুলি অপবিত্র ও সংক্রমিত হয়ে যাবে। তাই কেবল তার নাতনী গ্রেস প্যালিকাস এবং ইলিয়াং উইগানকে তার একমাত্র আসল ছাত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাদের নিজস্ব ট্যাটু মাস্টার হয়ে উঠতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি।

 

 

 

ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ