নারী কেন সিঙ্গেল থাকতে পারে না?
মানুষ চিন্তা-চেতনায় স্বতন্ত্র-স্বাধীন। তাই মানুষ তার জীবন যাপনের কৌশল ও পদ্ধতি নিজের মতো করে বেছে নিতে চায়। কারও পছন্দ যৌথজীবন বা দাম্পত্য জীবন, কেউবা থাকতে চায় নিজের মতো করে সিঙ্গেল। কিন্তু আমাদের সমাজ কোনো অবিবাহিত, কিংবা ডিভোর্সি, কিংবা চিরকুমারীকে তার মতো করে থাকতে কি দেয়?
আমাদের সমাজ ভুলে যায়, প্রতিটি ব্যক্তি তার পছন্দমতো জীবনযাপন করবেন। ব্যক্তির এই পছন্দকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করাও প্রকৃত মানুষের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত ব্যক্তির স্বাধীনতা ও ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের ওপর আঘাত হানা হয়। ব্যক্তির রুচি-অভিরুচিকে কটাক্ষ করা হয়।
মানুষ স্বাধীন সত্তার অধিকারী। তাই তার জীবনযাপন নিয়ে লোকসমাজের অনধিকার চর্চা কাম্য হতে পারে না। বিশেষত কোনো নারী সিঙ্গেল জীবনযাপন করতে চাইলে সামাজিকভাবে তাকে প্রায় হেয় করা হয়।
মানুষ হিসেবে নারী-পুরুষের সম্মিলনে পরিবার গড়ে ওঠে। কিন্তু নারী-পুরুষের সহযাত্রী হতে গিয়ে অনেক ক্ষেত্রে মতের অনৈক্য ঘটলে দুজন এক ছাদের নিচে আর আবদ্ধ থাকতে পারে না। সেক্ষেত্রে বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে ওঠে। কিন্তু আমাদের সমাজে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েও ব্যক্তিকে পীড়িত করে। তবে এক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীকে বেশি মানসিক পীড়নের শিকার হতে হয়! যখন কোনো নারী ডিভোর্স নেয় বা দেয়, তখন স্বাভাবিকভাবে সে থাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আর সমাজ তখন ওই বিপর্যস্ত অবস্থায় ওই নারীকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করে। নারী-পুরুষের সবারই একে অন্যের প্রতি সংবেদনশীল আচরণ করা উচিত।
সমাজে ডিভোর্সি নারীরা যেমন নানারকম প্রশ্নের সম্মুখীন হন, তেমনি কেউ যদি আজীবন চিরকুমারী থাকতে চান, সেক্ষেত্রেও নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়! মানুষ হিসেবে তার ইচ্ছাকে সমাজ সম্মান দিতে চায় না। মানুষের ভিন্নতা অনুযায়ী সবাই যে একচেতনা ধারণ করবেন না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার সেই মত-পথের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে তার প্রতি সমাজের বিরূপ আচরণ দেখা যায়। সহজেই প্রশ্ন ওঠে তাহলে নারীরা কি নিজের মতো করে জীবনযাপন করতে পারবে না?
শুধু যে ডিভোর্সি, আজীবন চিরকুমারী নারী সামাজিক সমস্যার সম্মুখীন হন এমন নয় বরং সিঙ্গেল মাদার হিসেবে যে সব নারী জীবনযাপন করেন, তারাও বিভিন্নরকম সমস্যার মধ্যে দিয়ে জীবন যাপন করেন। যৌন হয়রানির মতো নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় সিঙ্গেল নারীদের। এছাড়া, বিয়ের জন্যও তাদের নানাভাবে উত্যক্ত করা হয়! এমনকি অনেক ক্ষেত্রে জোর প্রয়োগ করে নারীর জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে কতিপয় হীনচেতা পুরুষ। যদি সে বিষয়েও নারীকে দমানো না যায় তবে সামাজিকভাবে তাকে হেনস্তার সঙ্গে যুক্ত হয় তার সম্পত্তি জবরদখলের চেষ্টা। এক্ষেত্রে নারীর বিপক্ষে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমাজ নেতারা অবস্থান করেন। শেষপর্যন্ত যদি নারীর দৃঢ়চেতা মনোভাবের কাছে টিকতে না পারে তবে চারিত্রিক দোষ দিয়ে তাকে একঘরে করে তোলার চেষ্টাও দেখা যায়! এমনকি নারীকে এলাকা ছাড়তেও বাধ্য করা হয়! কিন্তু সিঙ্গেল নারীর জীবনকে যারা দুর্বিষহ করে তোলে তাদের জন্য কোনোই ব্যবস্থা সমাজ বা রাষ্ট্র গ্রহণ করে না।
এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, পুরুষরা সমাজে যতটা স্বাধীন, স্বতন্ত্র ও নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারে, নারীরা তা পারে না। সিঙ্গেল হিসেবে বাঙালি সমাজে টিকে থাকা একজন নারীর কাছে রীতিমতো জীবনযুদ্ধ! কবে সেদিন আসবে, যেদিন সিঙ্গেল নারীকে তার জীবনযাপনের জন্য সমাজ কখনোই প্রশ্নবিদ্ধ করবে না? তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলবে না?