নিরাপদ হোক ফেসবুক সামাজিকীকরণ!
ফেসবুক আমরা কেউ ব্যবহার করে থাকি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পাদন, নিকট বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয় স্বজন কিংবা অনেকেই বিনোদনের একটি অংশ হিসেবে। ফেসবুক আমাদের বিভিন্নভাবে উপকার করলেও কিন্তু আমাদের কিছু অহেতুক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দিন দিন আমরা এটিকে অসামাজিক করে তুলছি। আজকাল আমরা প্রয়োজনীয় তথ্যের পরিবর্তে নিছক অপ্রয়োজনীয় তথ্য, ছবি বা ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করে থাকি। অনেকের মাঝে এমনও অসুস্থ মানসিকতা রয়েছে যে- কিছু ক্ষণ পর পরেই পোস্টের লাইক, কমেন্ট চেক করা । লাইক, কমেন্ট কম পড়লে উত্তেজিত হয়ে বিভিন্ন অশোভনীয় ভাষায় পোস্টও করে থাকেন। আজ ফেসবুক যোগাযোগের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মাধ্যম হওয়ায় বিভিন্ন কুচক্রী মহল ফেক আইডি খুলে বিভিন্ন বিষয়ে মিথ্যা গুজব তৈরি করে শেয়ার করে থাকে । অনেক ব্যবহারকারীই সেসব তথ্য যাচাই-বাচাই না করে ভাইরাল করতে থাকে। একশ্রেণির মানুষ প্রতিনিয়ত অন্যের আইডি হ্যাক করে কিংবা নিজের টাইমলাইন, পেজ বা গ্রুপ থেকে গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বা রাষ্ট্রের নামে মিথ্যা গুজব ভাইরালসহ নানারকম ধর্মীয় উগ্র মতবাদও প্রচার করছে । উদ্বেগজনক হলেও সত্য এসব গুজব অতিদ্রুত সর্বস্তরের জনগণের নিকট পৌঁছে যায় । ফলে জনসাধারণের মাঝে খুব সহজেই কোন ব্যক্তি বা রাষ্ট্রের নামে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়ে যাচ্ছে, ধর্মীয় উগ্রতা সৃষ্টি হচ্ছে । তাছাড়া বর্তমান সময়ে খুব করে একটি বিষয় লক্ষণীয়- সমাজের কিশোর-তরুণদের অনেকেই বিভিন্ন পেজ ও জনপ্রিয় পত্রিকার কমেন্ট বক্সে কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল ভাষায় বিরূপ মন্তব্য করে থাকেন। বিশেষ করে নারীরা যৌন-হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন ।
ফেসবুকে অনেক সংকীর্ণমনা ব্যক্তি নারীর উপর পুরুষতান্ত্রিক সস্তা মানসিকতার দরুন প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করে পাবলিক পোস্টগুলোর কমেন্ট সেকশনে নানা ধরনের বাজে ভাষায় মন্তব্য করে। এমনকি মেসেঞ্জারেও নানাভাবে উত্যক্ত করে থাকেন । অনেক কিশোর-তরুণরা মেয়েদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে ফেসবুকে অশালীন ছবি ভাইরালের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে । ফলে একদিকে যেমন আমরা ফেসবুক কে দিন দিন অসামাজিক ও অশ্লীলতায় পরিণত করছি অপরদিকে জেনে বা না বুঝে গুজব শেয়ার, কোন ব্যক্তিকে হেয় করা ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের কারণে সাইবার অপরাধেও জড়িয়ে যাচ্ছি । এতে যেমন ভুক্তভোগী হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও পড়ছেন বিপাকে । আর বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৩) এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী- কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে কোন মিথ্যা বা অশ্লীল কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয় অথবা রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয় তাহলে এগুলো হবে অপরাধ । এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বনিম্ন ৭ বছর এবং ১ কোটি পর্যন্ত জরিমানা।
এই অসামাজিকতার ভীরেও বিশাল একটি স্বস্তির জায়গা হলো- ফেসবুক এখন জনমত গঠন ও প্রতিবাদ জানানোর একটি শক্তিশালী প্লাটফর্ম হয়ে উঠেছে। বিশ্বের যে কোন প্রান্তে কোন অন্যায়-অবিচার-অসংগতি দেখলে যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ ও সমালোচনার ঝর বয়ে যায়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ানো, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত, অপরাধপ্রবণতা ও অসামাজিকতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন উদ্যোগ নিতে হবে । ইতোমধ্যে বহির্বিশ্বের অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর ও তুরস্ক এ ধরণের আইন প্রণয়ন করেছে। বর্তমানে আমরা সস্তা লেভেলের সেলিব্রিটিদের ভাইরাল করে থাকি অথচ একজন শিক্ষাবিদ বা প্রাবন্ধিকের কোন শিক্ষামূলক বা জনকল্যাণমূলক কোন ভিডিও বা পোস্ট ভাইরাল করি না। আমাদের এরকম মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক জিনিসেরই ভাল-মন্দ রয়েছে। আমাদের উচিত নেতিবাচক দিকটি পরিহার করে ইতিবাচক দিক গ্রহণ করা।
ফেসবুকে বিভিন্ন জনসেবামূলক, শিক্ষামূলক গ্রুপ ও পেজ রয়েছে। আমদের উচিত সেগুলো ফলো করা, একইসঙ্গে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে নারীদের পূর্ণ মতামত প্রকাশের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে, তাদের সম্মানের চোখে দেখতে হবে। সামাজিক ফেসবুক কে অসামাজিকতার কবল থেকে অপসৃত করতে কারো বিষয়ে মিথ্যা অপবাদ, অহেতুক গুজব ছড়িয়ে বিড়ম্বনা সৃষ্টি, অপ্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার, অকাজে সময়ের অপচয়, অসামাজিকতা ও অনৈতিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে হবে। তবেই আমরা এর সুফল ভোগ করতে পারবো, যা একদিকে আমাদের প্রযুক্তির দিক দিয়ে সমৃদ্ধ করবে অন্যদিকে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করবে।