সাহিত্যজগতেও নারীরা ‘পুরুষতন্ত্রের’ শিকার কেন
সাহিত্যিকরা কল্পনা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে সাহিত্য সৃষ্টি করেন। আর যারা সাহিত্য রচনা করেন, তারাই সাহিত্যিক। কিন্তু এই সাহিত্যিক বা লেখককেও জেন্ডার অনুযায়ী নারী-পুরুষের লেবেল সেঁটে দেওয়া হয়। একজন পুরুষ যখন সাহিত্য রচনা করেন, তখন তাকে শুধু লেখক আখ্যা দেওয়া হলেও নারীকে বলা হয় ‘লেখিকা’।
নারী জাতির মুক্তির জন্য আজীবন রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন অজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় নারী জাতি নিজেদের ভাগ্যোন্নয়ের চেষ্টা করলেও সার্বিকভাবে সফল হতে পারেনি। নারীর ওপর সবসময় ‘পুরুষতন্ত্র’ আধিপত্য বিস্তার করে গেছে।
পুরুষতন্ত্রের এই আধিপত্যের শুরু হয় পরিবারে। এরপর পরিবারের বাহিরের বৃহত্তর পরিমণ্ডলে তা আরও বাড়তে থাকে। এরমধ্যে নারী পুরুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার জগতেও তার রেশ রয়ে যায়। মানুষের জ্ঞান চর্চার জগতেও ‘নারী’কে ‘লেখিকা’ হিসেবে দেখা হয়। অর্থাৎ নারীকে পরিপূর্ণ লেখক হিসেবে স্বীকার করাহয় না। নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখে তাকে কেবল ‘নারী’ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
‘পুরুষতন্ত্র’ নিজেদের অবস্থানকে সংহত রাখতেই নারীকে সামনে আগাতে দিতে চায় না। সে কারণেই তার লেখকসত্তাকে অবমাননার চেষ্টা করা হয়। এটি মূলত ভাষাগত সামাজিক-রাজনীতিরই অপকৌশল।
বাংলা ভাষায় এমন কিছু শব্দ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে অবলীলায় নারীকে খাটো করার সুযোগ নেওয়া হয়। অথচ
“ভাষার’ ব্যবহার বলে সাধারণ মানুষ সেই অপকৌশলটা ধরতে পারে না। তাই প্রতিবাদও করে না। ‘লেখিকা’ পরিচয় থেকে নারীর মুক্তির জন্য পারিবারিক- সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত। নারীরাও যে পুরুষের সমান, সেই সত্য সবাইকে স্বীকার করতে হবে। শুধু স্বীকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। সব স্তরে নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল সংবেদনশীল আচরণের চর্চাও করতে হবে।
পুরুষ সমাজও নারীকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাববে না। বরং সহযোগী হিসেবে মেনে নেবে। যদি পরিবার-সমাজ থেকে সমস্যার সমাধান করা যায়, তাহলে জাতীয় পর্যায়ে কোনো সংঘাতা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। তাই নারীকে ‘স্বাধীন সার্বভৌম লেখক’ হয়ে ওঠার জন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতেই হবে।