Skip to content

৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ | রবিবার | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এখনো মোহনীয় হয়ে আছে মধুসূদনের সাঁগরদাড়ি গ্রাম

সাঁগরদাড়ি; সবুজের মায়ায় ঘেরা ছোট্ট একটা গ্রাম। কপোতাক্ষের তীর ঘেঁষে বহুকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে শ্যামল মায়ের গ্রাম সাঁগরদাড়ি। সনেট খ্যাত মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি ছিলো এটি। এমন কোথাও যদি আপনি ঘুরতে যেতে চান যেখানে আপনার জন্য সৌন্দর্য্য, সাহিত্য এবং ইতিহাসের সমাহার থাকবে তাহলে সাঁগরদাড়ি গ্রাম থাকবে আপনার পছন্দের তালিকার একেবারে শীর্ষে। এই গ্রামটি যশোর জেলার কেশবপুর থানার অন্তর্গত।

 

এখনো মোহনীয় হয়ে আছে মধুসূদনের সাঁগরদাড়ি গ্রাম

মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন তৎকালীন জমিদার। বিশাল জায়গা জুড়ে থাকা জমিদারবাড়িটি এখনো তার জৌলুসের জানান দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সাঁগড়দাড়িতে অবস্থিত এই বাড়িতেই মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছেলেবেলা কাটে। বাড়ির পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ যার মন ভোলানো সৌন্দর্য্যে আপনি মুগ্ধ না হয়ে পারবেন না। এই নদের কালোজলে যখন বিকালের সূর্যের স্নিগ্ধ আলো পড়ে তখন আপনার চোখ সেই দৃশ্যে বিমোহিত হয়ে উঠবে। কবির এই নদকে নিয়ে লেখা সনেট হয়েছিলো পৃথিবীখ্যাত।

 

`সতত হে নদ তুমি পড়ো মোর মনে

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে'

 

 

এখনো মোহনীয় হয়ে আছে মধুসূদনের সাঁগরদাড়ি গ্রাম

কবির চিঠি

ভ্রমণ-পিয়াসুরা এখানে এলে দেখতে পাবেন গ্রামের শুধুতেই একটা প্রাচীন মসজিদ অবস্থিত যেখানে মহাকবি আরবি, ফারসি এবং উর্দুসহ বেশকিছু বিদেশী ভাষা শিখেছেন। সেখান থেকে কিছুটা পথ পেরিয়ে এলেই পড়বে পদ্মপুকুরসহ জমিদারবাড়ি। এখন পুরো বাড়িটি ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে পুরাতত্ত্ব জাদুঘর। এখানে আপনি দেখতে পাবেন কবির নিজ হাতে লেখা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরসহ বিভিন্ন গুণীজনদের কাছে পাঠানো চিঠিপত্র এবং তৎকালীন জমিদারদের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি যেগুলো প্রমাণ করে যে তারা তখন কতটা সমৃদ্ধ ছিলো।

 

এখনো মোহনীয় হয়ে আছে মধুসূদনের সাঁগরদাড়ি গ্রাম

কাছারিঘর এখন লাইব্রেরী

বাড়ির ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটা দূর্গামন্দির। প্রতিবছর খুব জাঁকজমক করে দূর্গা পূজা করা হতো এখানে। বিশাল পদ্মপুকুরের পাশেই অবস্থিত কাছারিঘর। এখানে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত জমিদারি কার্য পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে এই কাছারিঘরকে লাইব্রেরিতে রূপান্তর করা হয়। এই লাইব্রেরিতে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের লেখা বেশ কিছু বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। বাড়ির দক্ষিণ পাশে মাইকেল গবেষকদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে আরো একটি জাদুঘর যেখানে শোভা পেয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনের দুর্লভ আলোকচিত্রসমূহ, নিজ হাতে লেখা ডায়েরীর খণ্ডাংশ, অর্থ সাহায্য চেয়ে কবির লেখা চিঠি এবং কবির পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাস।

 

এখনো মোহনীয় হয়ে আছে মধুসূদনের সাঁগরদাড়ি গ্রাম

পাথর খচিত কবিতা

কবির বাড়ির আশেপাশে গড়ে উঠেছে তার বিশালাকার কিছু মূর্তি এবং মার্বেল-পাথর খচিত কিছু কবিতা। পুরো জমিদারবাড়িটি বিভিন্ন ফুল এবং পাতাবাহার গাছে সুসজ্জিত রয়েছে। আপনি সেখানে ঘুরতে ঘুরতে দেখতে পাবেন বিদায় ঘাট যেখান থেকে তিনি পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাড়ি জমান ফ্রান্সে। কপোতাক্ষ নদের দুইপাশ দিয়ে বসানো হয়েছে বিভিন্ন প্রাণি-মূর্তি যেগুলো শিশুদের বিনোদনের একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

 

মেলা

প্রতিবছর মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিনে বিশাল জাঁকজমক মেলা বসে। তখন দেশ বিদেশের লাখো পর্যটকের পদধ্বনিতে মুখরিত থাকে চারিদিক। এই মেলায় পুতুলনাচ, সার্কাস, জাদুখেলাসহ নানাভাবে তাদের মনোরঞ্জনের আয়োজন করা হয়। হরেক রকম খাবাবের বিরাট পসরা সাজানো হয় মেলার এই সময়টাই। এই মেলা সাধারণত সাতদিন ধরে উদযাপিত হয় যেখানে প্রতিদিনই আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। দেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পীসহ উপস্থিত থাকেন দেশের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। তাছাড়া বাংলার ঐতিহ্য হস্তশিল্পের একটা বিরাট অংশ আপনি এখানে দেখতে পাবেন।

 

এখনো মোহনীয় হয়ে আছে মধুসূদনের সাঁগরদাড়ি গ্রাম

এখানে আরো অনেক প্রজাতির জীবজন্তুর সমাহার নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি চিড়িয়াখানা। আর তাছাড়া আরো রয়েছে কপোতাক্ষ পার্ক যা আপনার ভ্রমণের আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলবে। আপনি ভ্রমণের এত আনন্দ কিভাবে একসাথে পেতে পারেন তা এখানে না আসলে বুঝতেই পারবেন না। প্রকৃতির মায়ায় ঘেরা এই গ্রাম খুব সহজেই আপনার মনে জায়গা করে নিবে। তাই আপনার কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে দেরী না করে ঘুরে আসতে পারেন সাঁগরদাড়ি থেকে।

 

  • জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ডাউনলোড করুন অনন্যা অ্যাপ