চিন্তার বোঝায় কুপোকাত

ব্যস্ততা, প্রতিযোগিতার তীব্র আকাক্সক্ষা, চাহিদা, আবেগের আগ্রাসন, আত্মতুষ্টি এসবের অভাবে বর্তমান সময়ে মানসিক চাপে ভুগছে কমবেশি সকলে। প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে হচ্ছে নানান সমস্যার। ভাবতে হচ্ছে অসংখ্য ভাবনা। পরিবার, পরিজন, সমাজ, নিজস্বতা মিলিয়ে ভাবনার ডালপালা বিস্তৃত হতে থাকে। মানুষ সবকিছু ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে পারলেও নিজের কাছে বরাবরই ধরা খায়। চিন্তার দুনিয়া ছেড়ে আসা অসম্ভব। সেটি নিয়ে নতুন করে চিন্তামগ্ন না হয়ে বরং পথ বের করা বুদ্ধিমানের কাজ। অতিরিক্ত চিন্তা শারীরিক ও মানসিক দুই ক্ষেত্রেই প্রভাব ফেলে, যাতে ব্যাঘাত ঘটে স্বাভাবিক জীবনযাপনে। আর এ থেকে মুক্তি পেতে রইলো কিছু পরামর্শ।
বাস্তববাদী হোন
চিন্তা করতে মানা নেই, শুধু বুঝতে হবেÑ যে চিন্তাটুকু করছি তা কতখানি যৌক্তিক? একজন বাস্তববাদী মানুষ জানে কখন, কোথায়, কোন চিন্তা কতটুকু করা উচিত! যারফলে তিনি যে-কোনো পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলে নেবার ক্ষমতা রাখেন। অন্যদিকে কল্পবিলাসীরা কল্পনার ডানায় চেপে রাজ্যের যত চিন্তা করে ফেলে যার সঙ্গে বাস্তবের মিল থাকে না। তখন তারা হতাশায় ডুব দেয়। তাদের কাছে মনে হয়Ñ এটা এভাবে না হয়ে ওভাবে হলো না কেন! এটা তো এভাবেও হতে পারত। এতে করে আত্মবিশ্বাস তলানিতে ঠেকে। এজন্য বাস্তববাদী হওয়া জরুরি। বাস্তববাদীরা পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। তাদের দর্শন হচ্ছে, আমার চাওয়া অনুযায়ী হয়নি, তাতে কী হয়েছে! এখন হয়নি, সামনে হবে। এতে করে দুশ্চিন্তা দূরে সরে যায়। মোদ্দাকথা, প্রত্যাশা কম রাখুন।
তালিকা তৈরি করুন
যখন মনে হবে প্রচন্ড টেনশনে ভুগছেন, আপনার চিন্তার বিষয়বস্তুর শেষ নেই, যেদিকে তাকান খালি চাপ আর চাপ; ঠিক ওই মুহূর্তে খাতাকলম নিয়ে বসে পড়ুন। কী কী বিষয়ে চিন্তা করছেন তার একটি তালিকা তৈরি করুন। দেখবেন, অল্প কয়েকটি লেখার পর মাথায় তেমন কিছু আসবে না আর। সবচেয়ে মজার বিষয়টি খেয়ালে আসবে এখনই! এতক্ষণ ধরে যে কটা সমস্যা লিখলেন, প্রায় সবগুলি অতি সাধারণ চিন্তা এবং এর অধিকাংশই আপনার আশপাশের মানুষজনেরও আছে। এরপর স্বভাবতই চিন্তার মাত্রা কমতে থাকবে।
নিজেকে নিজে জানুন
লোকে বলে, আয়না নাকি সবচেয়ে আপন। কেননা, আপনি কাঁদলে সে কখনোই হাসবে না! আসলেই তাই! অতিরিক্ত চিন্তা গ্রাস করলে আয়নার সামনে দাঁড়ান। এবার মনের জানালা খুলে কথা বলুন। একা একা মনে মনে কথা বলার চেয়ে এটি বেশ কার্যকরী। আপনি কে, কতটুকু যোগ্যতা আছে, কতটা কী করতে পারবেন এসব নিয়ে প্রশ্ন করুন আয়নায় থাকা অবয়বকে। নিজের কাছে লুকানোর মতোন কিছু থাকে না। ওপাশে থাকা মানুষটাও একেবারে অকৃত্রিম অনুভূতি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দেবে। প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হলে একগ্লাস পানি খেয়ে নিন। হালকা লাগছে না এবার?
আস্থা রাখুন
নিজেকে নিজে জেনে নিয়েছেন, এবার সেই অনুযায়ী চলুন। আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনুন। জীবনে চাপ থাকবে, বাঁধা থাকবে, ব্যর্থতার চোখরাঙানি থাকবে। তাই বলে থেমে থাকা যাবে না। চিন্তা সমাধান দেওয়ার বদলে সমস্যা বাড়ায়। এসবের বিরুদ্ধে এগিয়ে যাবার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হোন। নিজের উপর আস্থা রাখুন, আত্মবিশ্বাসী হোন। আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান ব্যক্তি পৃথিবীর সব চাপকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে।
প্রাণ খুলে হাসুন
সুখী থাকার অন্যতম প্রধান চাবিকাঠি হলো হাসিখুশি থাকা। চাপের মাঝেও শুকনো হাসি দেবার চেষ্টা করুন। অন্যকে হাসান। মানুষের সঙ্গে মিশুন। হাসি তামাশার ফলে দেহের বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গম্ভীর মানুষের তুলনায় যারা হাসিখুশি থাকে, তাদের শরীরের শতকরা বিশভাগ ক্যালরি বেশি পোড়ানো যায়। জোর করে হলেও হাসুন। শুকনো হাসিটা একসময় তৃপ্তির হাসিতে পরিণত হবে। দূর করবে টেনশন। কথায় বলে না- নো টেনশন, ডু ফুর্তি!
ঘুমান
ঘুমের চাইতে বড় ওষুধ আর কিছু নেই। আমাদের মানসিক চিন্তার একটা বড় প্রভাবক পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া। ঘুমালে শরীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কও বিশ্রাম পায়। তাই যত চাপেই থাকুন, একটা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন। পর্যাপ্ত ঘুম হলে অপ্রোয়জনীয় বা অতিরিক্ত চিন্তা মাথায় খুব কমই ঘুরপাক খেতে পারবে।
ছবি : তানভীর আহমেদ