‘খনার বচন’: কে ছিলেন এই খনা?
আমরা সবাই জীবনে অনেকবার খনা’র নাম শুনেছি। বিশেষভাবে শুনেছি ‘খনার বচন’ এর কথা। আসলে কে ছিলেন এই খনা? খনার বচনের খনাকে ঘিরে এতকাল ধরে পাক দিয়ে চলছে অজস্র রোমাঞ্চকর গল্পকাহিনি। আজ আমরা এই খনা সম্পর্কে জানবো।
খনা বা ক্ষণা ছিলেন এক বিদুষী নারী। তিনি জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। খনা ছিলেন বারাসতের লাগোয়া দেউলিয়া গ্রামের বাসিন্দা। খনার জন্ম ও বংশপরিচয় নিয়ে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। এর তৎকালীন নাম ছিল চন্দ্রকেতুগড়। খনার সাথেই যে নামটি আসে সেটি হল মিহির। এই মিহির ও খনাকে নিয়ে অনেকের অনেক মতবাদ আছে। এরমধ্যে অধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো, মিহিরের স্ত্রী ছিলেন খনা। মিহির ছিলেন রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভার নবরত্নের অন্যতম রত্ন জ্যোতির্বিজ্ঞানী বরাহমিহিরের পুত্র।
বরাহমিহিরের জন্ম (৫০৫ খ্রিঃ) ও মৃত্যুর (৫৮৭ খ্রিঃ) একটা হিসেব আছে। সেই হিসেবে খনা ছিলো বরাহমিহিরের পুত্রবধূ। সেই সময়ে খনার জ্যোতিষ-চর্চার নৈপুণ্যে একসময় সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন দেশবরেণ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানী। বরাহমিহিরের অঙ্গগণনা ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের চেয়েও ঢের নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী ফলে উঠছিল খনার জ্যোতিষবিচারে। যে ভবিষ্যদ্বাণী কবি খনা কবিতা করে বলে যেতেন মুখে মুখে। পুত্রবধূর এই অগ্রগতি ও খ্যাতি সহ্য করতে পারেনা শ্বশুর। খনার সেই প্রবল বচনশক্তি রদ করতেই নাকি বরাহমিহির পুত্রবধূর জিভ কেটে নেন। অনেকের মতে খনার জিভ কেটে নেন স্বামী মিহির।
আবার অনেকের মতে, ভাড়াটে খুনি দিয়ে কাজটা সারা হয়। আর চতুর্থ মতে, প্রবল চাপে ও পুরুষের পীড়নে তিনি নিজেই জিভ কেটে নির্বাচন হয়ে যায়। আবার অনেকে বলেন যে খনা বরাহমিহিরের পুত্রবধূ নয়, স্ত্রী ছিলেন। আসলে খনাকে নিয়ে বহু মতবাদ প্রচলিত থাকায় কিছু বিষয় এখনো স্পষ্ট নয়।
জিভ থাকা অবস্থায় খনা যেসকল বাণী দিয়েছিলেন, সেগুলোই খনার বচন হিসেবে বিবেচিত হয়। খনার বচন বাংলা সাহিত্যের আদি কীর্তির মধ্যে পড়ে। জ্যোতিষশাস্ত্র ছাড়াও আবহাওয়াদর্শন ও কৃষিবিদ্যারও নানা রহস্য মোচন হত তাঁর বচনে বচনে। এই আধুনিক যুগেও তার অনেক সত্যই সত্য থেকে গেছে। এরকম একটি হলো:
“যদি বর্ষে মাঘের শেষ
ধন্যি রাজা পুণ্যি দেশ।”
“ব্যাঙ ডাকে ঘন ঘন
শীঘ্র হবে বৃষ্টি জানো।”
“গাছে গাছে আগুন জ্বলে
বৃষ্টি হবে খনায় বলে।”
“যদি হয় চৈতে বৃষ্টি
তবে হবে ধানের সৃষ্টি।”
“সাত হাতে তিন বিঘাতে
কলা লাগাবে মায়ে পুতে।
কলা লাগিয়ে না কাটবে পাত,
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।”
“গাছগাছালি ঘন রোবে না
গাছ হবে তার ফল হবে না।”
“খেত আর পুত
যত্ন বিনে যমদূত।”