একদিনে কতটুকু আম, লিচু বা জাম খাওয়া নিরাপদ?

গ্রীষ্ম এলেই চারপাশে রঙিন ফলের বাহার। পাকা আম, রসালো লিচু আর টসটসে জাম এই মৌসুমি ফলগুলোর স্বাদই আলাদা। তবে মজার হলেও এগুলো অতিরিক্ত খেলে হতে পারে শরীরের ক্ষতি। তাহলে প্রশ্ন হলো প্রতিদিন কতটুকু আম, লিচু বা জাম খাওয়া নিরাপদ?
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণের ফল খেতে পারেন। এর বেশি ফল খেলে শরীরে সমস্যা হতে পারে।
- ১–২টি মাঝারি সাইজের আম
- ৮–১০টি লিচু
- এক ছোট বাটি (১০০-১৫০ গ্রাম) জাম
তবে বয়স, শারীরিক অবস্থা আর কোনো রোগ থাকলে এই পরিমাণ কমাতে হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে
আম, লিচু ও জাম এই তিনটি ফলেই থাকে প্রাকৃতিক চিনি। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের এই কারণে বিশেষভাবে সচেতন থাকতে হয়।
আম – দিনে ১–২ টুকরা (৪০–৫০ গ্রাম)। সকালের দিকে খাওয়াই ভালো।
লিচু – মাঝারি সাইজের ৩–৪টি। ইনসুলিন নেওয়া রোগীদের জন্য সীমিত পরিমাণে।
জাম – রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, দিনে ৮–১০টি জাম নিরাপদ।
ফল খাওয়ার আগে রক্তের শর্করা মাপা এবং পরে অন্য কার্বোহাইড্রেট খাবার কমিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে
এই ফলগুলোতে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকায় পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উপকারী। তবে খুব বেশি মিষ্টি ফল খেলে ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়তে পারে। এটি হৃদরোগীদের জন্য ক্ষতিকর। পরিমাণে কম খাওয়া, অর্থাৎ সুস্থদের তুলনায় একটু কম, নিরাপদ।

কিডনি রোগীদের ক্ষেত্রে
কিডনি সমস্যায় পটাশিয়াম নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
আম ও লিচু – দিনে ১–২ টুকরা যথেষ্ট।
জাম – তুলনামূলক নিরাপদ, দিনে ৮–১০টি খাওয়া যেতে পারে।
যেহেতু লিচুতে পটাশিয়াম কম, তবে বেশি খেলেও সমস্যা হতে পারে। তাই পরিমাণ বুঝে খাওয়া জরুরি।
উচ্চ রক্তচাপ থাকলে
ভালো খবর হলো এই ফলগুলোতে সোডিয়াম কম এবং পটাশিয়াম থাকে। এতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে যেমন সব সময় বলা হয় ‘পরিমিত’ই ভালো।
গর্ভাবস্থায় কী খাওয়া যায়?
গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি কিছু সতর্কতাও জরুরি।
আম – দিনে ১–২ টুকরা
লিচু – ৩–৫টি

জাম – এক মুঠো (৮–১০টি)
ফল খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে যেন কোনো জীবাণু সংক্রমণ না হয়। জাম আয়রনের শোষণে সহায়ক আর আমে আছে ভিটামিন সি। এইগুলো মা ও শিশুর জন্য উপকারী।
ওজন কমাতে চাইলে পরিমানের বেশি ফল খাওয়া যাবে না। কারণ মিষ্টি ফল মানেই ক্যালরি বেশি। তাই ওজন কমাতে চাইলে এসব ফল খান সীমিত পরিমাণে।
আম, লিচু আর জাম সবই স্বাদে ও পুষ্টিতে ভরপুর। তবে ‘খাদ্যে ভারসাম্য’ রাখাটাই মূল চাবিকাঠি। শরীর অনুযায়ী প্রতিদিন কতটুকু খাবেন, তা নির্ভর করে বয়স, শারীরিক অবস্থা ও কোনো রোগ আছে কি না তার ওপর। বিশেষ প্রয়োজনে চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। সেটাই সবচেয়ে নিরাপদ।