বাড়ছে শীতের রোগ
শীত এলেই ঠাণ্ডা । ঠাণ্ডা মানেই সর্দি-কাশির ভয়। শরীর উষ্ণ রাখতেই হবে। তবে শীতে কি এটুকুই সমস্যা? নাকি আরও সমসয় আছে। ঠাণ্ডা সর্দি বাদেও ভয়াবহ ব্যাধির শঙ্কা তো থাকেই। এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিসিন, ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এ ছাত্তার সরকার জানাচ্ছেন শীতের বালাইয়ের কথা।
শ্বাসযন্ত্রের সংকট
শীত এলেই বেড়ে যায় রোগ ব্যাধি। শিশু থেকে বৃদ্ধ- সবার জন্য শীতের সঙ্গে সঙ্গে আসে সর্দি, কাশি, হাঁচির মতো নানা রোগ। শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জিজনিত রোগেরও প্রকোপ বাড়ে শীতে। এই অবস্থা সামাল দিতে শীতের সময় গরম কাপড় পরা, শীতের বাতাস এড়িয়ে চলার বিকল্প নেই। অনেকে রাস্তায় আগুন পোহান। কিন্তু আগুন পোহানোর সময়েও সতর্ক থাকা উচিত। অনেক সময় প্লাস্টিক পুড়িয়ে দ্রুত আগুন জ্বালানো হয় যা শ্বাসযন্ত্রে সরাসরি প্রবেশ করে। শীতের এই সময়টায় ঠাণ্ডাজনিত সমস্যাগুলোই বেশি দেখা যায়। যেমন কাশি, অ্যাজমার প্রকোপ বেড়ে যাওয়া, সাময়িক জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি হয়ে থাকে। এ সময় বাতাসে ধুলাবালি বেশি থাকায় অনেকে অ্যলার্জি বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা যায়।
বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষদের কাশি, কোল্ড অ্যালার্জির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অনেক সময় মনোযোগ না দেয়ার তা নিউমোনিয়ায় রূপ নিতে পারে। সমস্যা এখানেই শেষ নয়, অনেকের যক্ষ্মাও হয়ে থাকে। শীতে টনসিল বেড়ে গিয়ে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে।
মশাবাহিত রোগ
শীতে মশার প্রকোপ এমনিতেও অনেক বাড়ে। এই প্রকোপে ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ডেঙ্গু রোগ সহ নানা ভাইরাস জ্বরেররোগের প্রকোপ দেখা যায়। এ সময় অনেক স্থানে মশার প্রকোপও বাড়ে। ডেঙ্গু বর্ষাকালীন রোগ হলেও এখন শীতকালেও এটির বিস্তার দেখা যায়। মশার কামড়ের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কাঁপুনি দিয়ে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর আসা, বারবার জুর আসা, গিটে ব্যথা ইতাদির লক্ষণ দেখা গেলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিগত কয়েক বছর ডেঙ্গ স্বাস্থ্যখাতের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
জ্বর
শীতে অনেকে গরম পানিতে গোসল করেন। এক্ষেত্রে গরম পানি মিশিয়ে পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক করে নিতে ত সমস্যা নেই। তবে অনেকে কুসুম গরম পানিতেই গোসল করেন। ফলে গোসল শেষে বাইরের তাপমাত্রার সঙে শরীর সমন্বয় করতে না পেরে জ্বর হয়।
শীতের সময় শিশুদের ব্রংকিওলাইটিস রোগের প্রকোপ বাড়ে। নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। বড়দের কমন রোগ হচ্ছে সর্দি, হাঁচি, কাশি, জ্বর জ্বর ভাব। এসময় ডায়রিয়ার সমস্যাটা প্রকট হায়ে দেখা দেয়। বড়দের ক্ষেত্রে রেসপিরেটরি ইনফেকশনগুলো বেড়ে যায়। শরীরে অ্যালার্জিজনিত সমসয় অনেক বাড়ে। গরম পানি মিশিয়ে গোসল করতে হবে। তবে অবশ্যই পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিক করার জন্য গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি প্রতিদিন খেয়াল রাখতে হবে। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে গরম কাপড় গায়ে দিতে হবে। শীতের বাতাস বইলে সেক্ষেত্রে কম যাতায়াত করতে হবে। অ্যালার্জিজনিত অসুবিধা থেকে বাঁচতে নিয়মিত গোসল করার ওপর জোর দিতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগী
যাদের ডায়াবেটিক বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ রয়েছে, শীত তাদের জন্য বিশেষ সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ এই সময়ে তাদের জটিলতা আরো বেশি করে দেয়া যায়। অনেকের ক্ষেত্রে অনিদ্রার মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে।
হাড়ে ব্যথা ও বাত
শীতে নড়াচড়া হয় কম। আবার শীতের বাতাস শরীরে লাগলে হাড়ের ভেতর ঢুকে ফাঁপা অংশে যন্ত্রণা তৈরি করে। তাই হাড়ে ব্যথা বা বাতের রোগীদের উষ্ণ রাখতেই হবে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর সমস্যা
হাজারীবাগ নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ডা. মাহমুদা আখতার বলেন, ‘শীতকালে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। এ কারণে সামান্যতেই রোগ বেড়ে যায়। এই সময় অন্তঃসত্তা মায়েদের ঠান্ডা লেগে যায়। হাঁপানির প্রকোপ বেশি হয়। ফলে, তাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে। প্রসূতি মায়েদের এমনিতেই ডেলিভারির জন্য দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। তার ওপর এদের সবসময় টেনশনে থাকতে হয় সন্তানের যেন ঠাণ্ডা না লাগে। নিউমোনিয়া অ্যাটাক না করে। নিউমোনিয়ায় পেটে পানি জমে যায়। ডায়রিয়ার প্রবলেমও দেখা দেয়। শীতকালে অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতি মায়েদের সব ধরনের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে ঠান্ডা না লাগার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
ত্বকের শুষ্কতা
শীতের সময় শুষ্কতার কারণে শরীরের ত্বকও শুষ্ক হয়ে ওঠে। ফলে অনেক সময় চুলকানি বা ব্যথা অনুভব হতে পারে। অনেক সময় অ্যালার্জির কারণেও এটি হতে পারে। বিশেষ করে যাদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জি হয়। এটি সামলাতে নিয়মিতভাবে ভাবে লোশন বা অলিভ অয়েল, নারিকেল তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা যেতে পারে। তাহলে চামড়া স্বাভাবিক থাকবে।